গোলাক পাম-এর বর্ণনা:
গুচ্ছে গুচ্ছে একত্রিত হয়ে ঝাড় সৃষ্টি করে, উঁচু আরোহী, কান্ড পত্রাবরণ সহ ৪-৬ সেমি এবং পত্রাবরণ বিহীন ২-৪ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট। পর্বমধ্য ৩০-৩৫ সেমি লম্বা। পত্রাবরণ ফিকে সবুজ থেকে ধূসর বর্ণের, চ্যাপটা,পাতলা, কোণাকৃতি, সংমিত কন্টকে আবৃত।
কন্টক প্রায় ৩ সেমি লম্বা, তীর্যকভাবে অর্ধগোলাকৃতি রেখায় বা অনিয়মিতরূপে ঘন, তরুণ অংশ ধূসর রোমাবৃত, বক্রতা সুস্পষ্ট। আবরণীমুখ তীর্যক, নলাকার উপত্র অস্পষ্ট | পাতা আকর্ষী, সবৃন্তক, আকর্ষসহ ৩-৫ মিটার লম্বা, বৃন্ত ২০-৪০ সেমি লম্বা, দৃঢ়, সংনমিত কন্টকে আবৃত, পাক-অগ উত্তল কোণাকার, শক্ত কন্টকে আবৃত, কাটা পত্রক অরে মধ্য পর্যন্ত একল পরে ওপরের দিকে ২টি বা ৩টি একত্রে জন্মে। আকর্ষ বক্র কন্টকে আচ্ছাদিত। পত্রক অসংখ্য, ১০০ বা ততোধিক, উভয় পার্শ্বে একান্তর ও সমদূরবর্তীরূপে বিন্যস্ত, ৩০-৬০ X ১.২-১.৫ সেমি, ক্রমশ ক্ষুদ্র রৈখিক দীর্ঘায়ত, শীর্ষ দীর্ঘা, মধ্যশিরার উভয়পার্শ্বের।
শিরা সুস্পষ্ট, কিনারা কুর্চ যুক্ত, পুষ্পবিন্যাস স্ত্রী ও পুং বাহ্যত একই রূপ, মোটামুটি ঋজু, ৪৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা, ১৫ সেমি প্রশস্ত, বহিঃমঞ্জরীপত্র দ্বারা আবদ্ধ, অনুদৈর্ঘরূপে খুলে পুষ্প উন্মুক্ত করে। বহিঃমঞ্জরীপত্র পুষ্পশাখা অনুপস্থিত, বহিঃমঞ্জরীপত্র ৩০-৭৫ সেমি, চ্যাপটা, অগ্রভাগ লম্বা সরু, ২-তরীদল বিশিষ্ট, পৃষ্ঠ, তরীদল ও পাখার অংশ বিশেষ কন্টকিত, কাটা ৪ সেমি, আন্তঃমঞ্জরীপত্র ১৫-৫০ সেমি ক্রমশ ছোট, নৌকাকৃতিক, বল্লমাকার, লম্বাদীর্ঘা, বাহিরের মঞ্জরীপত্র সামান্য তরীদলযুক্ত, তরুণ অবস্থায় ধূসর পশমী রোমাবৃত, মোটামুটি মসৃণ, পার্শ্বীয় পুষ্প বিন্যাস প্রলম্বিত মঞ্জরীপত্রাপেক্ষা ক্ষুদ্রতর, তরুণ অবস্থায় সাদা বস্তুদ্বারা আবৃত, মঞ্জরীপত্রিকা ও মঞ্জরীপত্রাবরণী অস্পষ্ট।
পুং পুষ্প প্রায় ৫ মিমি, আঁকাবাঁকা অক্ষের ওপর ঘন সন্নিবেশিত। ফুল হলুদাভ-ধূসর, বৃত্যংশ ও পাপড়ির অবশিষ্টাংশের ওপর আলম্বিত। ২.০-২.৫ x ১.৮ সেমি, গোলাকার, শীর্ষাংশে ঘন সমাকীর্ণ, গর্ভমুণ্ড ত্রি-খডিত, ১৮ সারি, হলুদাভ ধূসর শুল্ক দ্বারা আবৃত, শুল্ক ঘন খাজ বিশিষ্ট, ৩ কিনারা শুষ্ক ঝিল্লি সদৃশ। বীজ মিষ্ট মাংসল পুর বহিস্তুকে ও আবৃত। ১.২ x ১.৫ সেমি, লম্বার চেয়ে পাশে বড়, অর্ধবর্তুলাকার, চ্যাপটা বা উত্তল, পৃষ্ঠ চর্বনবৎ, ভ্রূণ মূলীয়।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
ভিজা সেঁতসেঁতে পাহাড়ী ঢাল এবং চিরহরিৎ ও অরণ্যের সমভূমি বিস্তৃতি ও ভারত (সিকিম ও উত্তর ভারত) ও বাংলাদেশ। বীজ ও উধ্বধাবকের সাহায্যে বংশ বিস্তার। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল জুলাই-এপ্রিল।
বিস্তৃতি: বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জেলার অরণ্যে জন্যে।
ব্যবহার: আসবাবপত্র তৈরিতে কান্ডের বহুল ব্যবহার হয়ে থাকে। জাতিতাত্বিক ব্যবহার: ফলত্বক খাদ্যরূপে ব্যবহার্য।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১১ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) গোলাক পাম ( Daemonorops jenkinsiana ) প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, উদ্ভিদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে তবে বাংলাদেশে এটি আশংকা মুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে গোলাক পাম সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগ বনাঞ্চলে চাষাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির যথাস্থানে ও তার বাইরে সংরক্ষণের প্রয়োজন, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাড়ির আঙ্গিনায় গ্রামের ঝোপ ঝাড়ে চাষাবাদ প্রয়োজন ।
তথ্যসূত্র:
১. এম কে আলম (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১১ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১২০-১২১। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি http://tropical.theferns.info থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Palmweb
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।