দেশি গাব দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভেষজ ফলদ সপুষ্পক বৃক্ষ

ফলের প্রজাতি

দেশি গাব

বৈজ্ঞানিক নাম: Diospyros malabarica Diospyros (Desr.) Kostel., Allg. Med.-Pharm. Fl. 3: 1099 (1834). সমনাম: Diospyros embryopteris Pers. (1807), Diospyros peregrina Guerke (1891). ইংরেজি নাম: Indian Persimmon, River Ebony, Malabar Ebony, Wild Mangosteen. স্থানীয় নাম: গাব, দেশি গাব, মাকুর কোন্দি, কালা-তেন্দু।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants; শ্রেণী: Eudicots; উপশ্রেণি: Asterids; বর্গ:  Ericales; পরিবার: এবিনাসি গণ: Diospyros; প্রজাতি: Diospyros malabarica Diospyros (Desr.) Kostel.,

বর্ণনা: দেশি গাব (বৈজ্ঞানিক নাম: Diospyros malabarica) এবিনাসি পরিবারের ডিয়োসপিরোস গণের সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি ছোট থেকে মাঝারি আকৃতির চিরহরিৎ বৃক্ষ। এটি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় প্রজাতি।

দেশি গাব প্রায় ১৫ মিটার উঁচু, দেহকান্ড গাঁট ও আঁচিল যুক্ত, শীর্ষদেশ ঝুপাকৃতি, বাকল কালো-বাদামী, বহু সাদা দাগ যুক্ত, বাকল বিহীন অংশ গাঢ় লাল, আশাঁলো। পত্র সরল, একান্তর, ১০-২০ x ৩-৬ সেমি, সরু দীর্ঘায়ত, মূলীয় অংশ স্থূলাগ্র বা গোলাকার, উভয় পৃষ্ঠ রোমশ বিহীন, বৃন্ত ১.০-১.৫ সেমি লম্বা, রোমশ বিহীন। পুষ্প একলিঙ্গ, চতুরাংশক, সাদাটে, সুগন্ধি খাটো অক্ষীয় নিয়ত মঞ্জরীতে বিন্যস্ত। বৃতি ৪ খন্ডিত, মাঝামাঝি বিভক্ত, প্রশস্ত ঘন্টাকার, স্থায়ী দলমন্ডল ৪ খন্ডিত, এক চতুর্থাংশ স্থানে বিভাজিত, থালিকাকার বা ডিম্বাকার, ৭-১৫ মিমি লম্বা। পুংপুষ্প ২-৭ পুষ্প বিশিষ্ট নিয়ত মঞ্জরীতে বিন্যস্ত, খাটো মঞ্জরীদন্ড যুক্ত, মরিচা বর্ণের রোম যুক্ত, পুংকেশর ২৪-৬৪ টি, রেশমি। স্ত্রীপুষ্প একল বা কদাচিৎ প্রায় ৫টি পুষ্পবিশিষ্ট, অর্ধ-বৃন্তক, পুংপুষ্প অপেক্ষা দীর্ঘতর, মঞ্জরীদন্ড শক্ত রোমশ, গর্ভাশয় ডিম্বাকার, ৮-১২ প্রকোষ্ঠী, গর্ভদন্ড ৪টি, গর্ভমুন্ড ৮টি, বন্ধ্যা পুংকেশর ৪-১২ টি, ফল গোলাকার বেরি, আড়াআড়ি ৫ সেমি, পরিপক্ক অবস্থায় হলুদ। বীজ ৫-৮ টি, চাপা, আঠালো ও রসালো অংশে নিহিত। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে মে-আগস্ট।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৩০ (Kumar and Subramaniam, 1986).

আবাসস্থল: জলাশয়ের নিকটবর্তী সেঁতসেতে ছায়াযুক্ত স্থান।

আরো পড়ুন:  ডিয়োসপিরোস এবিনাসি পরিবারের সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি গণ

বিস্তৃতি: ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশের সব বাড়ির আঙ্গিনায় চাষাবাদ করা হয়।

দেশি গাব গাছের অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

দেশি গাবের বাকল সঙ্কোচক এবং আমাশয় এবং পৈত্তিক সমস্যায় উপকারী। অপরিপক্ক ফল সঙ্কোচক, কটু, তিক্ত ও তৈলযুক্ত। গলার ঘা উপশমের জন্য ফল ভিজানো পানি দিয়ে গারগল করা হয়। ফলের রস ক্ষত ও আলসার নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। পরিপক্ক তৈলযুক্ত হওয়ায় পিত্তসংক্রান্ত পীড়ায় ভাল ফল পাওয়া যায়। শিশুদের হিক্কারোগে ফুল ও ফল উপকারী। বৃতি ও ফলের মঞ্জরীদন্ড দ্বারা কাশি ও শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা করা হয়। বীজ উদরাময় ও আমশয়ে ব্যবহার করা হয়। কান্ডের বাকল থেকে প্রাপ্ত ইথানল নির্যাস প্রাটোজোয়া ও ভাইরাস প্রতিরোধী, এছাড়া এটি মূত্রবর্ধক, রক্তের গ্লুকোজ হ্রাসকারী এবং ক্যানসার প্রতিরোধী (Ghani, 2003)। পাকা ফলের রসালো অংশ খাওয়া হয়। এর ১০০ গ্রাম টাটকা রসালো অংশে ৬৯.৬ গ্রাম পানি, ০.৮ গ্রাম খনিজ, ১.৫ গ্রাম আঁশ, ১.৪ গ্রাম আমিষ, ০.১ গ্রাম চর্বি, ২৬৯ গ্রাম শর্করা এবং ৫৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। শক্তির গড় পড়তা মান ১১৩ kcal/১০০ গ্রাম। কাচা ফলে প্রচুর ট্যানিন থাকায় চামড়া, মাছধরার জাল পাকা করার কাজে এবং কাষ্ঠ ও বাশের ঝুড়ি তৈরি ও কাপড় রংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়। কাষ্ঠ মাঝারি ধরনের শক্ত ও ভারি এবং ভাল বার্নিশ করা যায়। নির্মাণ কাজে ও দেশি নৌকার মাস্তুল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় (Begum, 1987)। দেশি গাবের ভেষজ গুনাগুণ সম্পর্কে জানতে পড়ুন

দেশি গাব গাছের ঔষধি গুণাগুণ

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: বৃক্কের পাথর গলানোর জন্য সাওতাল আদিবাসীরা অর্ধপাকা ফল লাইম ওয়াটার, রাইস বিয়ার, ১:১:২ অনুপাতে মিশ্রিত করে গ্রহণ করে থাকে। লোধা আদিবাসী সম্প্রদায় কাচা ফলের ক্বাথ মরিচের সাথে মিশ্রিত করে উদরাময় রোগে ভেষজ ওষুধরূপে গ্রহণ করে (Pal and Jain, 1998)।

আরো পড়ুন:  কালো এবোনি দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বৃক্ষ

বংশ বিস্তার: বীজে বংশ বিস্তার।

অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) দেশি গাব প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের বর্তমান অবস্থা সহজলভ্য। প্রজাতিটি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, প্রজাতিটির আশু সংকটের কারণ নেই। দেশি গাব প্রজাতিটি বাংলাদেশে আশংকা মুক্ত (lc) হিসেবে বিবেচিত। প্রজাতিটিকে বাংলাদেশে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি এবং প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে সংরক্ষণের আশু পদক্ষেপ গ্রহণ নিষ্প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

১. এম আহসান হাবীব, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৬৫-৩৬৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!