ভূমিকা: তেলি গর্জন (বৈজ্ঞানিক নাম: Dipterocarpus turbinatus) এক প্রকারের ভেষজ বৃক্ষ। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে সর্বত্রে জন্মে।
তেলি গর্জন-এর বর্ণনা:
অত্যন্ত বৃহৎ, অর্ধ-পর্ণমোচী, বিশাল উঁচু বৃক্ষ, উচ্চতা প্রায় ৫০ মিটার, ঘের ৪-৫ মিটার, দেহকান্ড খাড়া, বেলনাকার, শীর্ষদেশ অত্যুচ্চ, বাকল পুরু, ধূসর-বাদামী, অনুদের্ঘ্য খাঁজযুক্ত, কদাচিৎ মসৃণ, অনিয়মিত গোলাকার শল্কমোচন। তরুণ বিটপ ও উপপত্র হলদে অণুরোম বা তারকাকার রোমযুক্ত, মুকুল শল্ক ফ্যাকাশে লাল বা হলদে সবুজ, ৫ সেমি লম্বা, ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত, আশুপাতী, পল্লব দাগ যুক্ত।
পত্র সরল, ১২-৩৬ x ৫.৫-২০.০ সেমি, ডিম্বাকার থেকে ডিম্বাকৃতি ভল্লাকার বা উপবৃত্তাকারদীর্ঘায়ত, প্রান্ত তরঙ্গিত বা অখন্ড, উপরের পৃষ্ঠ চকচকে, পাদদেশ গোলাকার বা অধতাম্বুলাকার, রোমশ বিহীন, মোটা, চর্মবৎ, পার্শ্বীয় শিরা ১২-২৪ জোড়া, সমান্তরাল, খাড়া, সূক্ষ্মাগ্র থেকে দীর্ঘাগ্র, উভয় পৃষ্ঠ রোমশ বিহীন, বৃন্ত ২.৫-৪.০ সেমি, উপপত্র ২.৫-৯.০ সেমি লম্বা, কখনও ১৫ সেমি লম্বা, তারকাকার রোমযুক্ত।
পুষ্প সাদা বা ফ্যাকাশে লাল, সুগন্ধী, স্বল্প সংখ্যক পুষ্পবাহী রেসিম মঞ্জরীতে। বিন্যস্ত । বৃতিনল ১.৫ সেমি লম্বা, খন্ড ৫টি, ৩টি খাটো, ২ মিমি লম্বা, ডিম্বাকার বা গোলাকার, বাকি ২টি ১ সেমি লম্বা, রৈখিক দীর্ঘায়ত, রোমশ বিহীন। পাপড়ি ২.০-৪.৫ সেমি লম্বা, দীর্ঘায়ত, ১টি সুস্পষ্ট ও ২টি খাটো মূলীয় শিরা যুক্ত বাংলাদেশ ও ভারতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির পূর্বেই পত্র ঝরে পড়ে।
ক্রোমোসোম সংখ্যা : ২n = ২০ (Tixier, 1960).
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
উষ্ণমন্ডলীয় মিশ্র চিরহরিৎ অরণ্য, স্যাঁতসেঁতে মাটি, রাস্তার পার্শ্ব । ফুল ধারণ : মার্চ এপ্রিল, ফল ধারণ : মে-জুন। চট্টগ্রাম বন গবেষনা কেন্দ্রে রোপণ করা বৃক্ষ ফুল ধারনের সময় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর।। বীজে দ্বারা বংশ বিস্তার হয়।
বিস্তৃতি:
ভারত (আসাম, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ) মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ও সিলেট জেলায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার/গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক:
কাষ্ঠ লালচে বাদামী, মাঝারী ধরনের শক্ত, ভারি, সোজা বয়ন যুক্ত, লরির কাঠামো, নৌকা, প্যাকিং বাক্স তৈরির জন্য এই কাষ্ঠ উপযোপী। জনপ্রিয় ও বানিজ্যিক প্লাইউড শিল্পে এই কাষ্ঠ ব্যবহার করা হয়। সাদা পিপড়া দ্বারা এই কাষ্ঠ আক্রান্ত হয় (Gambel, 1922)। এই উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত অলিও রেজিন, আলসার ও দাদ নিরাময় করে। এটি শ্লেষা নির্গমনকারী ঝিল্লি উদ্দীপিত করে এবং মূত্রবর্ধক (Kirtikar et al., 1935). প্রস্তরাদি মুদ্রন শিল্পের কালির অন্যতম উপাদান। রূপেও এর গুরুত্ব আছে, এই রেজিন লোহার ক্ষয় প্রতিরাধে, কাষ্ঠ ও বাঁশ সংরক্ষণের জন্য বিশেষ করে পানি বহন কারী বাঁশের ঝুড়িতে এর ব্যবহার প্রচলিত।
তেলি গর্জন-এর জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
চট্টগ্রাম ও মায়ানমারে নৌকা তৈরিতে এই উদ্ভিদের কাঠ ব্যবহার করা হয়। মায়ানমারে এই গাছের গুঁড়ি কুঁদিয়া নৌকা প্রস্তত করতে দেখা যায়। (Fa0, 1985)। কাষ্ঠ থেকে প্রাপ্ত তেল জ্বালানি, এবং ঘুণের আক্রমণ থেকে নৌকা রক্ষায় ব্যবহার করা হয় (Heinig, 1925)। এছাড়া শামুকের দ্বারা সৃষ্ট নৌকার ক্ষত প্রতিরোধ করে (Khan, 1985) ।
তেলি গর্জন-এর অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) তেলি গর্জন প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে এটি সংকটের সম্ভবনা নেই। বাংলাদেশে তেলি গর্জন সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি যথাস্থানে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৫৪-৩৫৫। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Afifa Afrin
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।