পরিচিতি: কাকডুমুর মোরাসি পরিবারের ফাইকাস গণের একটি বৃক্ষ। এদের ফল ছোট এবং খাওয়ার অনুপযুক্ত। এই গাছ অযত্নে-অবহেলায় এখানে-সেখানে ব্যাপক সংখ্যায় গজিয়ে ওঠে। গাছও তুলনামূলকভাবে ছোট হয়ে থাকে। এদের পাতা অত্যন্ত খসখসে। এই পাতা দিয়ে গ্রামাঞ্চলে অনেকে শিং, মাগুরজাতীয় মাছ কাটার আগে ঘষে পিচ্ছিলতা পরিষ্কার করেন। অনেক ক্ষেত্রে বাড়িতে গবাদিপশু জবাই করার পর মাংসে পশুর লোম লেগে গেলে এই পাতা ঘষে সেই লোম ছাড়ানো হয়। এ ছাড়া কাকডুমুর পাখপাখালির ও নানা পতঙ্গের প্রিয় খাদ্য। এর পাতা প্রজাপতির মথের খাবার। পাখিরাই প্রধানত এই প্রজাতির ডুমুরের ফল খেয়ে থাকে এবং পাখির বিষ্ঠার মাধ্যমে বীজের বিস্তারণ ঘটে থাকে।
প্রাপ্তিস্থান: মূলতঃ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকাসমূহেই এ প্রজাতির গাছ দেখা যায়। বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন প্রমূখ দেশসসহ এশিয়ার অনেক অঞ্চলে এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়।
ভেষজ গুণ: ডুমুর খুবই উচ্চমানের ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় স্মরণাতীতকাল থেকে ডুমুরের পাতা, কাঁচা ও পাকা ফল, নির্যাস, বাকল, মূল প্রভৃতি কার্যকরভাবে ব্যবহূত হয়ে আসছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে খাদ্যশক্তি ৩৭ কিলোক্যালরি, ১২৬ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনসহ ভিটামিন এ, বি, সি এবং অন্যান্য উপাদান আছে। গুটিবসন্ত, ডায়াবেটিস, হূদরোগ, কিডনি ও মূত্রসংক্রান্ত সমস্যা, স্নায়বিক দুর্বলতা, মস্তিষ্কের শক্তিবৃদ্ধি, সর্দিকাশি, ফোড়া বা গ্রন্থস্ফীতি (টিউমার) ও স্ত্রীরোগের চিকিৎসায় জগডুমুর কার্যকর। সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশ জাতীয় ইউনানী ফরমুলারীতে ডুমুর নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা হচ্ছে। ভারতে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে।
প্রচলিত কুসংস্কার আছে যে, যে ব্যক্তি ডুমুরের ফুল দেখতে পায় সে অনেক ভাগ্যবান হয়; ডুমুরের ফুল যদি সত্যি ভাগ্য পাল্টাত তাহলে মনে হয় মানুষ গাছটি রক্ষা করার চেষ্টা করত। বাড়ি বাড়ি ডুমুর গাছ রক্ষা করা দরকার। এ গাছ লাগাতে হয় না; পাখির বিষ্ঠা থেকে যত্রতত্র জন্মায়। আমরা নিজের জন্য নয় পাখির জন্য গাছটি বাঁচাতে চাই। আমরা কি পারি না পাখির জন্য গাছটি রক্ষা করতে? পরিবেশের বন্ধু এই গাছটি আমাদের একটি উপকারী বন্ধু। আসুন এটিকে বাঁচাই।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।