ভূমিকা: আইনা বা আইনা সুন্দরী হচ্ছে মালভেসি পরিবারের হেরিটিয়েরা গণের সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি প্রজাতির নাম।
বর্ণনা: আইনা মাঝারী-আকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ, ২৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু, নীচু শাখান্বিত, বাকল গােলাপী-ধূসর, উলম্ব এবং গাত্রীয়ভাবে বিদীর্ণ হয়, ক্ষুদ্র শাখা শল্কল। এদের পাতা সরল, অখন্ড, ডিম্বাকার-আয়তাকার, ১০-১২ x ৫-১০ সেমি, গােলাকার অথবা অর্ধহৃৎপিন্ডাকার এবং প্রায়শই গােড়ায় তির্যক, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র হতে প্রস্তভাবে সূক্ষ্মাগ্র, চর্মবৎ, উপরের তল মসৃণ, অতি সূক্ষ্ম, নিবতল রুপালী চাপা শহু বিশিষ্ট, পত্রবৃন্তক ২.৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা।
আইনার পুষ্প ছােট, একলিঙ্গ, অক্ষীয় প্যানিকলে বিন্যস্ত, পুষ্পবৃন্তিকা ১ মিমি পর্যন্ত লম্বা। বৃত্যংশ ৫টি, বৃতি ঘন্টাকার, হলুদাভ, ভিতরের দিক তারকাকার লােমযুক্ত। পাপড়ি অনুপস্থিত। পুং পুষ্প ৮১০ পুংকেশরবিশিষ্ট, শীর্ষে ২-কোষবিশিষ্ট পরাগধানীর বলয়সহ একটি স্তম্ভে সংযুক্ত। স্ত্রী পুষ্প ৫-৬ গর্ভপত্রবিশিষ্ট, প্রায় মুক্ত, গর্ভদন্ড খাটো, গর্ভমুন্ড ৫টি, পুরু, প্রতি গর্ভপত্রে ডিম্বক একক। ফল একটি সামারা, উপবৃত্তীয়, কাষ্ঠল, মসৃণ। বীজ প্রায় ৬ x ৪ সেমি, উপবৃত্তাকার, কাষ্ঠল।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: ফুল ও ফল ধারণ ঘটে জুলাই থেকে মার্চ মাসের মধ্যে। বংশ বিস্তার হয় বীজ এবং শাখা কলম দ্বারা। ম্যানগ্রোভ জলাভূমির অন্তর্দেশের বলয়ে ভাল জন্মে।
ক্রোমােসােম সংখ্যা: 2n = ২০, ৩৮ (Kumar and Subramaniam, 1986)
বিস্তৃতি: ভারত, পূর্ব আফ্রিকার সমুদ্রতীর, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বােডিয়া, হংকং, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, উষ্ণমন্ডলীয় অস্ট্রেলিয়া, প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ হতে হাওয়াই এবং নিউ ক্যালেডােনিয়া। বাংলাদেশে ইহা চট্টগ্রাম জেলার সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় বিস্তৃত।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব/ক্ষতিকর দিক: কাঠ প্রধানত জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, উচ্চ তাপ উৎপাদনকারী ক্ষমতা রয়েছে। কাঠ র্যাপিং, লিখন এবং ছাপানাের কাগজ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। বাকল ট্যানিন বহন করে এবং মাছ ধরার জাল মজবুত করার জন্য ব্যবহার করা হয়। বীজ হতে প্রাপ্ত নির্যাস ঔষধ হিসেবে উদরাময় এবং আমাশয়ে ব্যবহার করা হয় (Soerianegara and Lemmens, 1994) |
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: বীজ মাঝে মাঝে খাওয়া হয়। ফিলিপাইনে মূল মাছের বিষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) আইনা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের সংকটের কারণ আবাসস্থল ধ্বংস। বাংলাদেশে এটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে তথ্য সংগৃহীত হয়নি (NE), কিন্তু দুর্লভ বলে মনে হয়। বাংলাদেশে আইনা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। মাত্র একটি উদ্ভিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে রক্ষা করা হয়। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে শীঘ্র বাংলাদেশের চকোরিয়া সুন্দরবন এবং অন্যান্য সমুদ্রবর্তী এলাকার প্রকৃত বাসস্থানে পুন:আবাদ করতে হবে।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম আহসান হাবীব (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩৪৩-৩৪৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।