ভূমিকা: জিগা বা জিকা গাছ (বৈজ্ঞানিক নাম: Lannea coromandelica) আমরা সচরাচর দেখে থাকি। অনেকে বাড়ির অঙ্গিনা বা জমির প্রান্তে লাগিয়ে থাকে। এই গাছের মূল, পাতায় আছে ঔষধি গুণাগুণ।
জিগা বা জিকা-এর বর্ণনা:
পুরু প্রশাখাযুক্ত ক্ষুদ্র হতে মাঝারি আকারের পর্ণমোচী বৃক্ষ। পত্র সচূড় পক্ষল, প্রশাখার শেষ ভাগে সমাকীর্ণ, পত্রক ৫-১১, প্রতিমুখ, খর্বভাবে বৃন্তক বা প্রায় অবৃন্তক, ৭.৫-১৫.০ X ৫-৮ সেমি, ডিম্বাকার, উপবৃত্তাকার বা বল্লমাকার। পুষ্পবিন্যাস ১৫-২৭ সেমি লম্বা, যৌগিক মঞ্জরী, প্রান্তীয় বা কাক্ষিক। পুষ্প একলিঙ্গ, সরু অনিয়তাকার পুষ্পবিন্যাসের শাখার উপর হলুদাভ-সবুজ, উপবৃন্তক।
পুং পুষ্প ৩ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট, বৃতি খন্ডক ডিম্বাকার, সিলিয়াযুক্ত, ১ মিমি দীর্ঘ, দলমণ্ডল আয়তাকার, ২ X ১ মিমি, চাকতি ১.৫ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট, ৮-খাঁজযুক্ত, পুংকেশর ৮টি, ২ মিমি। দীর্ঘ স্ত্রী পুষ্প ২.০-২.৫ মিমি লম্বা, গভপত্রযুক্ত, গর্ভাশয় অধিগভ, আয়তাকার, ১-কোষী, ডিম্বক ১টি, গর্ভদণ্ড ৪টি, গর্ভমুণ্ড পিড়কাযুক্ত। ফল ড্রপ, ১.৬ সেমি পর্যন্ত দীর্ঘ, পরিপক্ক অবস্থায় সাধারণত লাল, কিছুটা বৃহৎ বৃতির উপর অবস্থিত। শীতকালে পাতা ঝরে যায় এবং মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত বৃক্ষ পত্রশূণ্য থাকে।
আরো পড়ুন: জিকা, জিগা বা জিওল গাছের আটটি উপকারিতার বর্ণনা
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৩০ (Kumar and Subramaniam, 1986)।
আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:
পাহাড়ী অরণ্য এবং শালবন সহ জলের প্রান্তের ভেজা মাটি, বাস্তুভিটা এবং রাস্তার পার্শ্ব। ফুল ও ফল ধারণ ফেব্রুয়ারি-জুন মাস। বংশ বিস্তার হয় বীজ এবং কাণ্ডজ প্রজনন দ্বারা।
বিস্তৃতি: ভারতের উষ্ণতর অংশজুড়ে, ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ এবং শ্রীলংকা। বাংলাদেশে পাহাড়ী অরণ্য, শালবনে পাওয়া যায় এবং বাস্তুভিটায় ব্যাপকভাবে লাগানো হয় (Khan and Alam, 1996)।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
বাকল থেকে নিঃসরিত আঠা সুতিবস্ত্র প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা যায়। পত্র ও পল্লব উত্তম পশু খাদ্য। কাঠ গৃহ নির্মাণ, বাক্স তৈরি, আসবাবপত্র তৈরি, গবাদিপশুর জোয়ালি তৈরি, লাঙ্গলের দণ্ড তৈরি, বক্রতা ও কুন্দকারের কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
বাকল দেহজ কালার সংকোচক বা রক্তপাত বন্ধকারক, আকস্মিক, অসহনীয় স্ফোটদ্গমে মলম, কুষ্ঠজাতীয় আলসার ও দুর্দমনীয় আলসারে এবং মুখের ঘায়ের উত্তম প্রতিকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সিদ্ধ করা পত্র শরীরের স্থানীক প্রসারণের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় (Yusuf et al., 1994)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) জিকা বা জিগা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে জিকা বা জিগা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. মোহাম্মদ কামাল হোসেন (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ১১৯-১২০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Rison Thumboor
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।