আমলকি গাছের বর্ণনা:
আমলকি ফাইলান্থাসি পরিবারের ফাইলান্থুস গণের সহবাসী, রোমশ বিহীন বা রোমশ পর্ণমোচী বৃক্ষ। এরা প্রায় ২০ মিটার উঁচু, বাকল ধূসর, মসৃণ শাখা তামাটে রোমশ। পত্র সোপপত্রিক, উপপত্র ত্রিকোণাকার, ০.৮-১.৬ মিমি লম্বা, তীক্ষা থেকে দীর্ঘা, সিলিয়াযুক্ত, বাদামী, বৃন্ত ০.৩-০.৭ মিমি লম্বা, দ্বিসারী;
পত্র ফলক দীর্ঘায়ত বা রৈখিক দীর্ঘায়ত, ৮-২০ x ২-৬ মিমি, স্থূলাগ্র, মূলীয় অংশ তাম্বুলাকার এবং মূলীয় অংশ সামান্য তির্যক, প্রান্ত পুরু এবং ভিতরে পাকানো, শক্ত কাগজপৎ, পার্শ্বীয় শিরা ৪-৯ জোড়া, উপর হালকা সবুজ নিচের পৃষ্ঠ ধূসর। পুষ্প কাক্ষিক সাইম, প্রতিটি সাইম মঞ্জরীতে সব পুংপুষ্প বা অনেক পুংপুষ্পের মধ্যে একটি স্ত্রীপুষ্প।
পুংপুষ্প: সবৃন্তক, বৃন্ত ১৩ মিমি লম্বা, সরু, বৃত্যংশ ৬টি, ঝিল্লিযুক্ত, ১.২-২.৫ x ০.৫-১.০ মিমি, দীর্ঘায়ত-বিডিম্বাকার বা চমসাকার, অর্ধসম, স্থলাগ্র বা গোলাকার, অখন্ড, হলুদাভ সবুজ, পুংকেশর ৩টি, পুংদন্ড যুক্ত হয়ে স্তম্ভ গঠন করে, স্তম্ভ ০.৩- ০.৭ মিমি লম্বা, পরাগধানী ঋজু, দীর্ঘায়ত ০.৫-০.৯ মিমি লম্বা, অনুদৈর্ঘ্য বিদারী চাকতি গ্রন্থি ৬টি, মসৃণ, ব্যাস ০.৩- ০.৫ মিমি।
স্ত্রীপুষ্প: বৃন্ত ০.৮ মিমি লম্বা, বৃত্যংশ ৬টি, দীর্ঘায়ত বা চমসাকার, ১.৫-২.৫ x ০.৭-১.৩ মিমি, স্থুলাগ্র বা গোলাকার, অখন্ড, চাকতি ১ মিমি, ব্যাস যুক্ত, গর্ভাশয় ডিম্বাকার, মসৃণ, ৩ কোষী, গর্ভদন্ড ৩টি শক্ত, রসালো, ১.৫-৪.০ মিমি লম্বা, নিচের অংশ যুক্ত শীর্ষ ২ খন্ডিত।
ফল ক্যাপসিউল, অর্ধগোলাকার, ২.৫ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট, মসৃণ, রসালো সবুজাভ বা হলুদাভ সাদা। বীজ ত্রিকোণাকার বা সমোত্তল, ৩-৬ x ২-৩ মিমি, মসৃণ, বাদামী । ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২৮ (Perry, 1943).
চাষাবাদ ও বংশ বিস্তার: আমলকি গ্রামের খাজকাটা অসমতল ভূখন্ড, গুল্ম ও শুষ্ক, উন্মুক্ত, পাতলা উদ্ভিদযুক্ত অরণ্য। ফুল ও ফল ধারণ মার্চ-সেপ্টেম্বর। বীজে বংশ বিস্তার হয়।
বিস্তৃতি: কম্বোডিয়া, চীন, হংকং, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা ও দক্ষিণ আমেরিকা। বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায় ।
আমলকির অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
মূলের বাকল ও পরিপক্ক ফল দেহকলা সঙ্কোচক। পুষ্প শীতলতা দায়ী ও ক্ষুধা উদ্রেককারী। ফুল অতিশয় কটুস্বাদযুক্ত, শীতলতা দায়ী, রেচক মূত্রবর্ধক এবং হৃদরোগ, যকৃতের সমস্যা, পিপাসা ও অর্শরোগে উপকারী। ফলের রস লেবুর রসের সাথে মিশ্রিত করে ব্যাসিলারি আমাশয়ে ব্যবহার করা হয়। চোখের প্রদাহে ফলের রস প্রয়োগ করা হয়।
বীজ হাপানি, শ্বাসনালীর প্রদাহ ও পিত্ত সংক্রান্ত রোগে উপকারী। বাকল ও পাতা থেকে ট্যানিন পাওয়া যায়। রেশম ও পশম রং করার কাজে পাতা ব্যবহার করা হয় (Caius, 1998)। আমলকির ভেষজ গুনাগুণ সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত পড়ুন
জাতিতাত্বিক ব্যবহার:
কম্বোডিয়ায় পাতা দ্বারা এন্টিথারমিক লোশন তৈরি হয় । নাক থেকে রক্তপড়া বন্ধ করার জন্য ভারতের সাওঁতাল আদিবাসী পুংপুস্প চুর্ণ করে নাকে নস্যির ন্যায় ব্যবহার করে এবং শিশুদের উদরাময় রোগে পাকা ফলের লেই তৈরি করে ভেষজ ওষুধ রূপে খাওয়ানো হয়।
ভারতের লোধা আদিবাসী সম্প্রদায় চেখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধির জন্য টাটকা পাতার রস চোখে প্রয়োগ করে। কোণকান সম্প্রদায় বাকলের রস হলুদ ও মধুর সংমিশ্রণে গণোরিয়া রোগ প্রতিরোধে গ্রহণ করে।
থাইল্যান্ড ও ভারতে অপরিপক্ক ফল দুই প্রজাতির হরিতকী ফলের সাথে (Terminalia belteria and Tennialia chebula) মিশ্রিত করে ট্যানিন রূপে ব্যবহার করে (Lemmens and Wulijarni-Soetjipto, 1991; Pal and Jain, 1998)।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) আমলকি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে আমলকি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. রহমান, এম অলিউর (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৪৭৫-৪৭৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।