ভূমিকা: দেবদারু (বৈজ্ঞানিক নাম: Polyalthia longifolia, ইংরেজি নাম: Mast Tree.) হচ্ছে এশিয়ায় জন্মানো শোভাবর্ধক বৃক্ষ। এর কিছু ভেষজ গুণ আছে এছাড়া অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
দেবদারু-এর বর্ণনা:
চমৎকার দীর্ঘ বৃক্ষ, কাণ্ড ঘন পত্রবহুল শাখাবিশিষ্ট, কচি শাখাসমূহ অণুরোমশ, শীঘ্রই মসৃণ। পত্র সবৃন্তক, পত্রবৃন্তক ৫-৮ মিমি লম্বা, পত্রফলক ১৪-২২ X ৩-৬ সেমি, ডিম্বাকৃতি-আয়তাকার বা ডিম্বাকৃতি-বল্লমাকার, কীলকাকৃতি থেকে হৃৎপিন্ডাকার, স্পষ্টভাবে তরঙ্গিত, দীর্ঘাগ্র।
পুষ্পবিন্যাস খর্ব পুষ্পদণ্ড বিশিষ্ট, অবৃন্তক অনিয়তাকার পুষ্পবিন্যাস বা ছমঞ্জরী সদৃশ। পুষ্প অধিকাংশ ক্ষেত্রে কক্ষে বহুসংখ্যক। পুষ্পবৃন্তিকা ২-৪ সেমি লম্বা, সাধারণত মধ্যখানে মঞ্জরীপত্রবিশিষ্ট। মঞ্জরীপত্র প্রায় ১মিমি লম্বা, ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত। বৃত্যংশ ১.৫-১.৮ মিমি লম্বা, ত্রিকোণাকৃতি-ডিম্বাকৃতি, বহিরাংশ ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত। বহিঃদেশীয় দলসমূহ ৮-৯ X ২-৩ মিমি, সংকীর্ণভাবে বল্লমাকার, দীর্ঘাগ্র, অধিকতর অন্তবর্তী দলসমূহ ১০-১২ x ২-৩ মিমি।
আরো পড়ুন: দেবদারু গাছ-এর ছয় ধরনের ভেষজ উপকারিতা বা ঔষধি গুণাগুণ
পুংকেশর ০.৮ মিমি লম্বা। গর্ভপত্র শীর্ষদেশে ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত, গর্ভমুণ্ড অবৃন্তক। পরিপক্ক গর্ভপত্র ৪-৮টি, ২.০-২.৫ x ১.০-১.৫ সেমি, রক্তিম, মসৃণ, ক্ষুদ্র বোঁটায়। অবস্থিত, বোটা ১.০-১.২ সেমি লম্বা। বীজ ১.৫-২.০ X ১.০-১.৪ সেমি, একল, গোলাপি বা হরিদ্রাভ-শুভ্র, ফলগাত্র থেকে সরাসরি পৃথক হয়।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ১৮ (Kumar and Subramaniam, 1986)
চাষাবাদ: সমতল ভূমিতে ভালভাবে জন্মে। অফিস, প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, উদ্যানে, রাস্তার পাশে লাগানো হয়। ফুল ও ফল ধারণ মার্চ থেকে অক্টেবর। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
বিস্তৃতি: ভারত ও শ্রীলঙ্কা ছাড়াও বাংলাদেশে এটি দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।
দেবদারু-এর অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
রাস্তার পার্শ্বে ছায়াতরু এবং শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ হিসেবে এই গাছ লাগানো হয়। কাণ্ড থেকে প্রাপ্ত নরম কাঠ দিয়াশলাই কারখানা এবং পেকিং বাক্সে ব্যবহার করা হয়। জাতিতাত্বিক ব্যবহার: উৎসবে অস্থায়ী তোরণ নির্মাণের জন্য এই গাছের পাতা ব্যবহার করা হয়।
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) দেবদারু প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে দেবদারু সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. মাহবুবা খানম এবং এম মতিয়ুর রহমান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ১৫৬-১৫৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Judgefloro
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।