বৈজ্ঞানিক নাম: Santalum album L., Sp. Pl. 1: 349 (1753).
সমনাম: Santalum myrtifolium Roxb. (1820).
ইংরেজি নাম: জানা নেই।
স্থানীয় নাম: শ্বেত চন্দন।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants
শ্রেণী: Eudicots
উপশ্রেণি: Asterids
বর্গ: Santalales
পরিবার: Santalaceae
গণ: Santalum
প্রজাতি: Santalum album L.
বর্ণনা: শ্বেত চন্দন সান্টালাসি পরিবারের সান্টালুম গণের একটি ছোট, চিরহরিৎ, রোমহীন বৃক্ষ। এরা ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু, বাকল অমসৃণ, সরু আনুভূমিক ফাটল যুক্ত। পত্র ২২-৩১ x ৭-১১ মিমি, প্রতিমুখ থেকে অর্ধপ্রতিমুখ, চর্মবৎ, ভঙ্গুর, উপবৃত্তাকার, ডিম্বাকার, শীর্ষ সূক্ষ্মাগ্র, সামান্য দীঘাগ্র, গোড়া স্থূলাগ্র, ক্রমশ: সরু, প্রান্ত তরঙ্গায়িত, শিরার শেষপ্রান্ত মুক্ত, পত্রবৃন্ত সরু, ৮-৯ x ১.২-১.৫ মিমি, উপরের গাত্র অঙ্কাবর্তী, নিম্ন গাত্র কৌণিক। পুষ্পবিন্যাস শীর্ষক এবং কাক্ষিক, অপরিণত বিটপ ফুলকপি-সদৃশ, মঞ্জরীদন্ডক, মঞ্জরীদন্ড সরু, ১০-১৩ x ০.৫-০.৭ মিমি, কৌণিক, খাঁজযুক্ত।
শ্বেত চন্দনের পুষ্প সুগন্ধি, ক্রীমসদৃশ সাদা, পরবতীতে লাল এবং রক্ত-বেগুনি, সামান্য বৃন্তক, পুষ্পবৃন্ত সরু, কৌণিক, ১.০-১.৫ x ০.৫ মিমি, পুষ্পধার ১.০-১.৫ x ২ মিমি, পুষ্পপুট বৃহৎ, সরু ব-দ্বীপ আকার, ৩.০-৩.৫x১.০-১.৫ মিমি, পশ্চাৎ বক্র। পুংদন্ড সরু, ১.৪-১.৫ x ০.৩ মিমি, গোড়া দুর্বলভাবে চ্যাপ্টা। গর্ভদন্ড কৌণিক, হাইপ্যাথিয়াম ছাড়িয়ে যায়, ২.৫-২.৭ x ০.৩ মিমি, গোড়ায় প্রশস্ত, গর্ভমুন্ড ৩-খন্ডক, খন্ড জিহ্বা-আকৃতির, ১ মিমি পর্যন্ত লম্বা, পুষ্পপুট খন্ডকের মধ্যবর্তী সংযুক্ত। ফল ড্রুপ, ৮-১০ x ৮-৯ মিমি, গোলাকার, পাকলে কালো, বহিত্বক মসৃণ, অন্তত্বক শক্ত, শীর্ষ থেকে নিম্ন দিকে ৩টি খাঁজযুক্ত। ফুল ও ফল ধারণের সময় রেকর্ড করা হয়নি। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ১০ (Fedorov, 1969).
বিস্তৃতি: জাভা থেকে তিমুর দ্বীপপুঞ্জের স্বদেশী এবং ভারতে আবাদী। বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলায় পাওয়া যায় এবং অন্যান্য কিছু অংশে আবাদী। সাধারণত রাস্তার ধার বা গ্রাম ও আবাসভূমির পাশে জন্মে থাকে।
চন্দনের অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:
কাঠ চন্দন তেলের একটি উৎস, যা ব্যাপকভাবে সুগন্ধি এবং বাণিজ্যিক ঔষধে ব্যবহৃত হয়, কার্যকর উপাদান স্যান্টালো, যা শীতলকারক এবং শ্লেষ্ম বিদারক। এই প্রজাতি সর্বোচ্চ ঘনত্ব এবং উন্নত গুণসম্পন্ন তৈল বহনের জন্য খুবই মূল্যবান (Santisuk and Larsen, 2005). সামান্য পরিমাণ কাঠ সৌন্দর্য বর্ধনকারী বিভিন্ন দ্রব্য খোদাই করণে ব্যবহৃত হয়। কাঠের গুঁড়া থেকে তৈল নিষ্কাশনের পর ধূপ তৈরীতে ব্যবহৃত যাকে বলে আগরবাতি। কাঠ ধর্মীয় উৎসবে লেই বা ধূপ আকারে ব্যবহৃত হয় (Purkayastha, 1996). চন্দন তেল সামান্য পচনরোধী গুণসম্পন্ন এবং ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত। সামান্য কয়েক ফোটা গুরুতর ব্রঙ্কাইটিস নির্মূলে অভ্যন্তরীণভাবে প্রয়োগ করা হয়। কোমল কাষ্ঠ পাউডারে পরিণত করে পানির সাথে মিশ্রিত করে ইন্দোনেশিয়ায় গনোরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। চীনে তৈল ব্যবহৃত হয় বমি, পেটের পীড়া এবং গনোরিয়ার চিকিৎসায়। বাকলের নির্যাস পোকার হরমোন কার্যকারিতায় বাধা দেয়, তাদের বৃদ্ধি বিচ্ছিন্ন করে। ইহার রাসায়নিক পদার্থ জীবাণু মুক্তকরণ কার্যকারিতা রয়েছে, কিন্তু বানিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত নয়। এটি কখনো শোভা বর্ধনকারী হিসেবে জন্মে এবং নিম্ন-শাখা বিশিষ্ট বাতাস রোধক। ইন্দোনেশিয়ায় ইহা ব্যবহারিক কৃষি বনজ প্রজাতি হিসেবে গন্য। পত্র সবুজ সার বহনকারী। ফল ভক্ষণীয়। বীজ এক ধরনের লাল শুষ্ক তৈল উৎপন্ন করে যা প্রধানত বাতির তেল, তাজা পাতা ফিকে হলুদ মোম উৎপন্ন করে (Oyen and Dung, 1999). চন্দনের ভেষজ গুনাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন:
শ্বেত চন্দনের ঔষধি ব্যবহার
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: জানা নেই।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে প্রজাতিটির শীঘ্র সংকটের সম্ভাবনা নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তথ্য সংগৃহীত হয়নি। তবে ধারণা করা হয় কিছুটা দুর্লভ। বাংলাদেশে সংরক্ষণের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়াও প্রস্তাব রয়েছে যে প্রজাটিতিকে বৃহৎ আকারে আবাদের জন্য অণু বিস্তারন পদ্ধতি প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. এ বি এম রবিউল ইসলাম, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৯৯-৩০০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।