মিনজিরি দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার দ্রুত বর্ধনশীল বাগানে চাষযোগ্য আলংকারিক বৃক্ষ

ভূমিকা: মিনজিরি (বৈজ্ঞানিক নাম: Senna siamea , ইংরেজি: Thailand Cassia, Kassod Tree) ফেবাসিস পরিবারের,  Senna গণের একটি এক প্রকারের বৃক্ষ। শরৎকালে মাঝারি আকারের এই বৃক্ষে থোকা থোকা হলুদ ফুলে ভরে যায়।  গাছটি ভঙ্গুর প্রকৃতির। বাগানের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো হয়।[১]

বৈজ্ঞানিক নাম: Senna siamea (Lamk.) Irwin & Barneby, Mem. N.Y. Bot. Gard. 35: 98 (1982). সমনাম: Cassia siamea Lamk. (1785), Senna Sumatrana Roxb. (1832). ইংরেজি নাম: Thailand Cassia, Kassod Tree. স্থানীয় নাম: মিনজিরি। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Edicots. বর্গ: Fabales. পরিবার: Fabaceae. গণ: Senna  প্রজাতির নাম: Senna siamea L

বর্ণনা:

মিনজিরি  দ্রুত বর্ধনশীল চিরহরিৎ বৃক্ষ। প্রায় ১৮ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। এই গাছের শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত। তরুণ বিটপ খাঁজযুক্ত, পাতা অচূড় পক্ষল যৌগিক, পত্রক অক্ষ ৮-২৫ সেমি। পাতার উপরের অংশ স্পষ্ট খাজ, গ্রন্থিবিহীন, অণুবৃন্তের মাঝে উপস্থিত ও হালকা ধূসর বর্ণের। পাতা ৫-১০ জোড়া এবং আকারে ৩.০-৮.৫×১.৫-২৫ সেমি, দীর্ঘায়ত থেকে বিডিম্বাকার, সূক্ষাগ্র বা সখাজ, কখনও তীক্ষা, কাগজ সদৃশ, অঙ্কীয় পৃষ্ঠ সামান্য চকচকে, অণুবৃন্ত ২-৩ মিমি লম্বা।

পুষ্পবিন্যাস অক্ষীয় বা শীর্ষীয়, পিরামিডাকৃতির করি, ৬০ সেমি পর্যন্ত লম্বা, ঋজু। ফুলের রং হলুদ। তিন থেকে সাড়ে তিন সেমি আড়াআড়িভাবে থাকে, সহপত্রী, মঞ্জরীপত্র রৈখিক, শক্ত, আশুপাতী, বৃন্ত ১.০-২.৫ সেমি লম্বা। বৃত্যংশ ৫টি এবং ৫-৬ মিমি লম্বা। বৃত্যংশ দেখতে তরঙ্গিত, সম্মুখ বা পশ্চাদমুখী বক্র, অণুরোমশ, দীর্ঘস্থায়ী।

ফুলের পাপড়ি ৫টি, মুক্ত, ১.৫-১.৮ x ০.৮-১.৫ সেমি, অপ্রতিসম, বিডিম্বাকার বা বর্তুলাকার-বিডিম্বাকার, গোলাকার থেকে কর্তিতা, স্থূলা, শিরা বিহীন, ধ্বজক ১-২ মিমি, দলবৃন্ত সংকুচিত। পুংকেশর ১০টি করে থাকে তারমধ্যে ৭টি উর্বর পুংকেশর থাকে। বাকি ৩টি বন্ধ্যা পুংকেশর বিদ্যমান। ২টি দীর্ঘতম পুংদন্ড থাকে যা ১.০-১.৪ সেমি লম্বা। পরাগধানী ৫ মিমি, দ্বিখন্ডিত, চকলেট বাদামী, ৪টি পার্শ্বীয় পুংদন্ড ৩-৪ মিমি লম্বা, ৩টি বন্ধ্যা পুংকেশরে হ্রাস প্রাপ্ত, পরাগধানী বন্ধ্যা।

গর্ভাশয় ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত, গর্ভদন্ড শক্ত, রোম বিহীন, গর্ভমুন্ড অর্ধশীর্ষীয়, বিন্দু আকার। ফল শিমের মতো দেখতে। ফলের আকার ১৫-২৫ সেমি দৈর্ঘ্য এবং ১.০-১.৩ সেমি প্রস্থ। দেখতে রৈখিক দীর্ঘায়ত, চ্যাপ্টা, তীক্ষাগ্র, মখমলীয় বাদামী, দুই বীজের মধ্যবর্তী অংশ সংকুচিত, উভয় সন্ধিরেখা বরাবর পুরু, বিদারী, ২০-৩০ বীজী। বীজ হালকা থেকে কালচে বাদামী, চকচকে, অত্যাধিক চ্যাপ্টা, পঞ্চকোণ বিশিষ্ট ডিম্বাকৃতিউপবৃত্তাকার। ফুল ও ফল ধারণ ও প্রায় সারা বর্ষ ব্যাপী।[২]

ক্রোমোসোম সংখ্যা:

2n = ২৮ (Jacob, 1940).

বংশ বিস্তার ও চাষপদ্ধতি:

মিনজিরি গাছ খুব দ্রুত বড় হয়। শক্ত মাটিতে জন্মে। গ্রীষ্ম থেকে শীত পর্যন্ত ফুল ফুটে। এরপরে হলুদ ফুল থেকে শুঁটি হয়। সেই শুঁটিতে বীজ থাকে। মিনজিরি গাছের বীজ থেকে নতুন চারা জন্মে।[১]

বিস্তৃতি:

মায়ানমারে আদিনিবাস। কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নিউগিনি, লাওস, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে বিস্তৃত। বাংলাদেশে প্রবর্তিত এবং সর্বত্র চাষাবাদ হয়।

অর্থনৈতিক ব্যবহার:

বাহারি গাছরূপে সমাদৃত। খুব দ্রুত বর্ধনশীলতার জন্য মরু অঞ্চলে বনায়নের জন্য এই গাছ গুরুত্বপুর্ণ। জ্বালানী কাঠরুপেও উৎকৃষ্ট। সার কাঠ থেকে আসবাবপত্র ও বিভিন্ন দ্রব্যাদি তৈরি হয়। পত্র গবাদি পশুর খাদ্য ও সবুজ সাররূপে ব্যবহার করা হয় ।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

ভারতে পুষ্প সবজিরূপে গ্রহণ করা হয় (Ali, 1973)। মালেশিয়ায় মূল মাংসপেশীর আক্ষেপ নিরসনে ঘাড়ে বেঁধে রাখা হয় (dewit, m1955) বীজের লেই গোলমরিচের গুঁড়ার সাথে ৫:১ অনুপাতে পানির সাথে মিশ্রিত করে ভারতের উরিষ্যার অধিবাসীরা বমি বন্ধ করার ওষুধরূপে ব্যবহার করে (Srivastava and Rout, 1994)

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) মিনজিরি  প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে মিনজিরি  সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[২]

তথ্যসূত্র:

১. দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে ১৯৮৮; পৃষ্ঠা- ৩৪, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭

২. বি এম রিজিয়া খাতুন (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৪৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

আরো পড়ুন:  বিষ কনুর বাংলাদেশে পাহাড়ীঞ্চলে জন্মানো ভেষজ বিরুৎ

Leave a Comment

error: Content is protected !!