রোহণ বৃহদাকৃতি গাছ। সাধারণতঃ ৬০ থেকে ৭০ ফুট উঁচু হতে দেখা যায়। গাছের ছাল মোটা, দেখতে প্রায় মেহগনি গাছের ছালের মতো। সবুজ পত্রাচ্ছাদিত এই বৃক্ষের কাঠ অতি শক্ত ও মজবুত এবং মূল্যবান, কাঠের বাইরের দিকটা শ্বেতাভ হলেও ভেতরের কাঠ রক্তবর্ণ। বাদামী লাল বা গাঢ় লাল হয়ে থাকে। পত্র পক্ষাকার, ৬-১৮ ইঞ্চি লম্বা, তাতে ৩-৬ জোড়া পত্রিকা থাকে। ফুল ছোট, উভয় লিঙ্গ বিশিষ্ট, হরিতাভ শ্বেতবর্ণের। ফল আপেলের মতো, তাতে অনেক বীজ থাকে। গাছের ছাল লাল রঙের, এতে যথেষ্ট মাত্রায় ট্যানিন আছে। ছাল থেকে যে তন্তু পাওয়া যায়, তা থেকে দড়ি তৈরী হয়। এই ছাল ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত পুরু হয়ে থাকে। এর কাঠ গৃহাদি তৈরীর কাজে এবং নানাবিধ সাজ-সরঞ্জাম প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি মেহগনি কাঠের মতই মূল্যবান। ঔষাধার্থে ব্যবহার্য অংশ : গাছের ছাল।
রোহণ বা রোহিণা-এর অন্যান্য নাম:
এটিকে সংস্কৃত নাম- রোহিণী, মাংসরোহিণী; বাংলা নাম- রোহণ, রোহিণা, রোড়া; হিন্দী ভাষাভাষী অঞ্চল সমূহের কাছে পরিচিত নাম- রোহুন্না, রোহণ, রক্তরোহণ প্রভৃতি বলে। এর বোটানিক্যাল নাম Soymida febrifuga A. Juss., ফ্যামিলী Meliaceae. এই একটি মাত্র প্রজাতি ভারতবর্ষে জন্মে।
অবস্থান:
উত্তর-পশ্চিম-মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের শুকনো বনভূমিতে অধিক পরিমাণে জন্মে। এই অঞ্চলগুলির মধ্যে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, কেরালা প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
রোহণ বা রোহিণা-এর ব্যবহার:
এর ছাল তিক্ত, সংকোচক, বলকর, স্নিগ্ধ, প্রস্রাবকারক, জ্বরনাশক, কামোত্তেজক এবং সাধারণ দুর্বলতা, অবিরাম জ্বর, আমাশা, অতিসার প্রভৃতিতে ব্যবহার্য। ছালের ক্বাথ। ম্যালেরিয়াতে কুইনিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাতের ফোলায় ক্বাথ খাওয়ানো যায়। ছালের মিহিচূর্ণ পুলটিস হিসাবে ব্যবহার্য। ছালের ক্বাথ দিয়ে ব্রণ বা ক্ষত ধোওয়া এবং মুখের ও দাঁতের মাড়ির রোগে কুলকুচি বা গার্গল করা হয়। প্রদর রোগে এবং জীবাণু সংক্রমণ নষ্টের জন্য এবং ক্বাথ দিয়ে যোনিদেশ ধোওয়ার কাজে লাগে। এটি ডুস হিসেবেও ব্যবহার্য। অধিক মাত্রায় ব্যবহৃত হলে মাথা ঘোরে, অবসাদ আসে, তারপর নিদ্রা, কখনো কখনো সংজ্ঞাহীনতাও দেখা দিতে পারে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১০, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, চতুর্থ মুদ্রণ ১৪০৭, পৃষ্ঠা, ৭০-৭১।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি flowersofindia.net থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Prashant Awale
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।