[otw_shortcode_info_box border_type=”bordered” border_color_class=”otw-red-border” border_style=”bordered” shadow=”shadow-inner” rounded_corners=”rounded-10″]বৈজ্ঞানিক নাম: Spondias pinnata (L. f.) Kurz in Pegu Rep. A.: 44 (1875). সমনাম: Mangifera pinnata L. f. (1781), Spondias mangifera Willd. (1799). সাধারণ নাম: Hog Plum. বাংলা নাম: দেশি আমড়া, আমড়া, পিয়াল পিয়ালা, থুরা (মগ), আম্বি-থং (গারো)। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Edicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Sapindales পরিবার: Anacardiaceae গণ: Spondias প্রজাতি: Spondias pinnata.[/otw_shortcode_info_box]
ভূমিকা: আমড়া এনাকার্ডিয়াসি পরিবারের স্পনডিয়াস গণের একটি ফলদ বৃক্ষ। এটি বাংলাদেশে জনপ্রিয় ফলদায়ী গাছ। দেশি আমড়ার ফল আচার ও খাবারে যথেষ্ট ব্যবহৃত হয়। আমড়া গাছ ২৫ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত উচু হতে দেখা যায়। একটি ডাঁটায় সমান্তরালভাবে কয়েক জোড়া পাতা ও ডাঁটার আগায় ১টি পাতা থাকে। অগ্রহায়ণের শেষ থেকেই পাতা ঝরতে শুরু করে, তারপর মাঘ-ফাল্গুনে গাছে মুকুল হয়, তারপর ফল; কচি অবস্থায় ফলের বীজ নরম থাকে, পরে পুষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আঁটি শক্ত হয়ে যায়। বাংলাদেশের প্রায় সব স্থানে এটি পাওয়া যায়, অনেকে বেড়ার ধারে এটাকে লাগিয়ে রাখেন। কার্তিক-অগ্রহায়ণেই ফল পেকে যায়, পাকা আমড়ার একটি চমৎকার গন্ধ আছে। উড়িষ্যায় অঞ্চল বিশেষে আমজ নামে প্রচলিত। বাংলাদেশে প্রাপ্ত তিন প্রজাতির আমড়া হচ্ছে দেশি আমড়া (বোটানিকাল নাম: Spondias pinnata (L. f.) Kurz), বিলাতি আমড়া ও লাল আমড়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Spondias purpurea).
ব্যুৎপত্তি: আম্র=আ+অতীত অর্থাৎ আম্ররসের ঈষৎ অনুসরণ করে (অমরকোষ টীকা)। এই চরকীয় সম্প্রদায় এই ফলটির আর একটি নাম রেখেছেন ‘কপীতন’। কপীনাং ইং লক্ষ্মীং তনোতি অর্থাৎ কপিকুলের লক্ষ্মী বৃদ্ধি করে; নিকটে আমড়া গাছ পেলে কপিগৃহিণী অর্থাৎ বানরী ছুটে যায় শিশুপ্রসবের সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ অতুর ঘর করতে, এর পাতা বানরের খুব প্রিয় খাদ্য কিংবা পথ্য; তাঁর এই ভূমিকা দেখে এই ভেষজটির উপরিউক্ত নামটি রেখেছেন।
বিবরণ: দেশি আমড়া সুগন্ধী (পত্র ও পল্লব থেকে) পর্ণমোচী, মসৃণ, মধ্যম-আকৃতি থেকে বৃহৎ বৃক্ষ। এদের বাকল ধূসর, মসৃণ কিন্তু কখনও কখনও সমান্তরাল, কুঞ্চন ও লম্বাকার সরু ফাটল বিশিষ্ট, ব্লেজ লালচে বাদামি। বিষমপক্ষল পত্র, প্রশাখার প্রান্তদেশে গুচ্ছিত, ৩০-৪৫সেমি লম্বা, পত্রক ৯-১৩ জোড়া, ৫-২৫ x ২.৫-১০.০ সেমি, উপবৃত্তাকার-আয়তাকার, দীর্ঘাগ্র, অখন্ড, ঝিল্লিময়, উজ্জ্বল চকচকে, মোটামুটি তির্যক, ইন্ট্রা-মার্জিনাল জালিকা দৃশ্যমান, মোচনকালে হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
পুষ্পবিন্যাস যৌগিক মঞ্জরী, প্রান্তীয় বা কাক্ষিক, ১৪-২৮ সেমি দীর্ঘ। পুষ্প উভলিঙ্গ, মিশ্রবাসী, আড়াআড়িভাবে ৫ মিমি, অর্ধবৃন্তক, হলুদাভ-সবুজ, সুবাসিত। বৃতি রোমশ। দলসমূহ ২.০ x১.০ মিমি, মসৃণ। পুংকেশর ১.৫-২.০ মিমি দীর্ঘ, ফলকের ব্যাস ১ মিমি, গভীরভাবে ৫-খন্ডিত, স্থুলাকৃতি, সরস। গর্ভাশয় অবৃন্তক, ব্যাস ২.০-২.৫, বি-শাঙ্কব, গোলাকার, গর্ভদণ্ড খর্ব, গর্ভমুণ্ড মুণ্ডাকার। ফল ৪-৫ সেমি দীর্ঘ, ডুপ ডিম্বাকার, পরিপক্ক অবস্থায় সবুজাভ-হলুদ। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে ফেব্রুয়ারি থেকে আগষ্ট মাসে।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: ২n = ৩২ (Kumar and Subramaniam, 1986)।
চাষাবাদ ও আবাসস্থল: বাস্তু এলাকা, পাহাড়ী বনভূমি ও শাল বনভূমি। বংশ বিস্তার হয় বীজ দ্বারা।
বিস্তৃতি: ভারত ও মায়ানমার। বাংলাদেশে ইহা পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও দিনাজপুরে জন্মে। দেশের সর্বত্র গ্রামের গুল্মঝোপ ও আম্রকুঞ্জে পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: ফল অম্লীয় ও ভোজ্য। অম্লীয় ও কষায় রুচিকর সুগন্ধি যুক্ত পাকা ফল। সাধারণত আচার করা হয় এবং খাদ্যে রুচিকর সুগন্ধি হিসেবে বা তরকারী করার জন্য ব্যবহার করা হয় (Troup, 1921)। বারকিং ডিয়ার এই ফল পছন্দ করে। কাঠ সাদাটে রং, হালকা ও নরম, হালকা পেকিং কেস তৈরীর উপযোগী। এই কাঠ স্প্লিন্ট ও দিয়াশলাই বাক্স তৈরীর জন্যও উপযোগী। দেশি আমড়ার ভেষজ গুনাগুণ সম্পর্কে জানতে পড়ুন
দেশি আমড়ার ভেষজ গুনাগুণ
সংরক্ষণ তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৬ষ্ঠ খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) দেশি আমড়া প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, প্রজাতিটির হুমকির বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। বাংলাদেশে দেশি আমড়া সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, এটি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে। বর্তমান অবস্থায় বাংলাদেশে আশংকা মুক্ত (lc) হলেও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BAU) তাদের নিজ নিজ চত্বরে এ গাছ সংরক্ষণ করছে। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে আশু সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজন নেই।[১]
তথ্যসূত্র:
১. মোহাম্মদ কামাল হোসেন, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ৬ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১২৮-১২৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।