দেশি গাব গাছের আছে নানা ঔষধি গুণাগুণ ও ব্যবহার

দেশি গাব এবিনাসি পরিবারের ডিয়োসপিরস গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Diospyros malabarica. এখানে এই বৃক্ষের ভেষজ ঔষধি ব্যবহার বর্ণনা করা হলো। দেশি গাব গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন

দেশি গাব দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভেষজ ফলদ বৃক্ষ

(১) ক্ষতের দাগ দূর করতে: কোনো জায়গায় ক্ষত (ঘা) সেরে যাওয়ার পর (যে কোনো কারণেই হোক) সাদা দাগ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কাঁচা গাব ফলের রস কিছুদিন ঐ দাগের উপর প্রলেপ দিলে ওটার বর্ণ স্বাভাবিক হয়ে যায়।

(২) পুরাতন অজীর্ণে: গাব গাছের ছাল ৫ থেকে ৬ গ্রাম আন্দাজ নিয়ে গান্ডারী গাছের (Gmelina arborea) পাতায় মুড়ে মাটি দিয়ে লেপে আগুনে ঝলসে নিয়ে তারপর ওটাকে বের করে নিয়ে অল্প জল দিয়ে থেতো করে তা ছেকে সেই রসটায় একটু মধু মিশিয়ে খেতে হয়। যাদের পাতলা দাস্ত কিছুতেই ভাল হয় না, তাঁরা এটাতে নিশ্চিত উপকার পাবেন, তবে অগ্নিবল বুঝে এবং আহারে সংযত না হলে অতিসার কখনই সারে না। এই নিয়ম মানলে সেরে যাবে।

(৩) আগুনে পোড়া ক্ষতে: ক্ষতটা পুরে উঠছে না, তখন কাঁচা গাব সিদ্ধ করে সেই জল ছেকে তারপর তাকে ঘন করে লেহবৎ (paste) করতে হবে। এইটা একটু গাওয়া ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে লাগাতে হবে। এটা ষোড়শ শতকের ভাবপ্রকাশের যোগ।

(৪) শিশুর হিক্কায়: গাবের শুষ্ক ফুলচূর্ণ ১ গ্লেণ মাত্রায় একটু মধু মিশিয়ে শিশুকে চাটালে হিক্কা প্রশমিত হয়। এটা সপ্তদশ শতকের বঙ্গসেনের পরীক্ষিত যোগ।

(৫) ঋতুস্রাবাধিক্য: অনেক মায়ের মাসিকের সময় স্রাব বেশি হয় ও দীর্ঘদিন থাকে। তাঁরা ৭ থেকে  ৮ গ্রাম কাঁচা গাব ফল অল্প জল দিয়ে থেতো ক’রে সেই রস মাসিকের তিন দিন বাদ দিয়ে খাবেন। ২ থেকে ৩ দিনের বেশি খেতে হয় না, ওর দ্বারা স্রাব বন্ধ হয়ে যায়।

আরো পড়ুন:  টক পেয়ারা সারা দুনিয়ায় চাষকৃত একটি ফল

(৬) দীর্ঘদিনের আমাশয়: এই গাছের ছালের রস ১ চা-চামচ মাত্রায় একটু, গরম ক’রে ছাগলের দুধের সঙ্গে খেতে হয়। এটাতে আমাশার প্রকোপ কমে যায়।

(৭) লালা মেহে: যাদের প্রস্রাবের পূর্বে বা পরে অথবা যেকোনো সময় লালার মতো ক্ষরণ হয়, তাঁরা এই ফলের রস আধ বা এক চা-চামচ গরম করে দুধের সঙ্গে খাবেন। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে অর্ধেক মাত্রায় খাবেন।

(৮) ডায়াবেটিস রোগে: অল্প বয়সেই যাঁদের ডায়াবেটিস হয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে বদ্ধ বৈদ্যরা অন্যান্য ঔষধের সঙ্গে এটিও ব্যবহার করতেন।

(৯) ক্যানসারের লালস্রাব: গলায় বা জিভে ক্যানসার হলে বহু, লালাস্রাব হতে থাকে। এক্ষেত্রে গাব ফল কাঁচা হলে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম ও শুকনো হলে ৬ থেকে ৭ গ্রাম জলে সিদ্ধ করে সেই জলে ভাত বা অন্য কোনো আহার্য দ্রব্য পাক করে খেতে দিলে ঐ লালাস্রাব উল্লেখয্যোগ্য ভাবে কমে যায়।

এছাড়া (ক) কাঁচা গাবের পাতা জীরে জীরে করে কেটে সিদ্ধ করে জল ফেলে দিয়ে নারকেল কোরা দিয়ে মোচার ঘণ্টের মতো রাখতে হয়। পূর্ব-উত্তর বাংলার এটি একটি রুচিকর তরকারি। একাধারে আহার ও ঔষধ।

(খ) গ্রাম্য লোকেরা মাছ ধরার জালের সুতো শক্ত করার জন্য গাবের রস লাগিয়ে থাকে।

(গ) লবণাক্ত জলে দীর্ঘ দিন ব্যবহারে নৌকার কাঠ খারাপ হয়ে যায়। সেজন্য গাবের রস নৌকার তলায় লাগানো হয় একে বলা হয় গাব-ঘেস দেওয়া।

রাসায়নিক গঠন:

(a) Tannin. (b) Acids viz, tannic acid, malic acid. (c) Fatty oil.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা,২৮৬-২৮৯।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: David J. Stang

আরো পড়ুন:  তেন্দু বা টেন্ডুপাতা বাংলাদেশ ভারত শ্রীলংকার অর্থকরী দারুবৃক্ষ

Leave a Comment

error: Content is protected !!