কাভ্রী গাছের নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ

বহুদূর বিস্তৃত শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট গাছ। এটি বটঅশ্বত্থের মত বৃহৎ বৃক্ষের পর্যায়ে পড়ে, এদেরকে ছায়াতরু হিসেবে রাস্তার ধারে বসানোর রীতি। পাতা দেখতে অনেকটা যজ্ঞডুমর (Ficus recemosa) পাতার মত হলেও আকারে তারচেয়ে ছোট। বোঁটা (বন্ত) ২। ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এটি ক্ষীরী বৃক্ষ অর্থাৎ তার কচি কাণ্ড ও পাতা ভাঙ্গলে সাদা আঠা বের হয়, এর ছাল বট-অশ্বথের মত পরে হয়। কচি কাণ্ড ও পত্রের সংযোগস্থল থেকে বট-অশ্বত্থের ন্যায় গোলাকার ফল হয়। এর সংস্কৃত নাম ল্পক্ষ, বাংলায় প্রচলিত নাম পাকুড় ও হিন্দীতে পিপ্লখান নামে পরিচিত। এর বোটানিক্যাল নাম Ficus lacor Buch.Ham., ও ফ্যামিলি Moraceae. কিন্তু পূর্বে এর নাম ছিল Ficus infectoria Roxb. ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ- পাতা ও ছাল।

পাকুড় গাছের উপকারিতা:

১. মূর্ছা রোগ: এই রোগটির কারণ থাকে অনেক কিন্তু রোগটি প্রকাশ পায় মনোবহ স্রোতে। নতুন হয়ে যখন প্রথম দেখা দেয়, তখন পাকুড় ছাল (কাঁচা) অল্প জল দিয়ে থেতো করে রস করতে হবে। সেই রস ১ চা-চামচ আর ২। ১ চা-চামচ দুধ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। যতদিন পুরোপুরি সেরে না যাচ্ছে, ততদিন প্রত্যহ সকালে ও বৈকালে এক চা-চামচ করে রস অল্প দুধ মিশিয়ে খেয়ে যেতে হবে। তবেই এ রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

২. প্রলাপে: সে উন্মাদের ক্ষেত্রেই হোক আর জ্বর-বিকারেই হোক, পাকুড় ছাল (শুকনা) একটু কুটে নিয়ে আধ লিটার আন্দাজ গরম জলে ৭। ৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেটাকে ছে’কে নিয়ে অল্প অল্প করে সমস্তদিনে খেতে দিতে হবে। এর দ্বারা অসংলগ্ন বকবকানিটা কমে যাবে।

৩. ভ্রম রোগে: এ রোগটা কেবল বাধক্যেই নয়, উন্মাদে, বায়ুপিত্তের প্রবল জ্বরে, বায়ুপিত্ত দোষের পেটের রোগে, নিদ্রা নষ্ট হ’লে (অনিদ্রাজনিত) অত্যধিক দুশ্চিন্তায় এ রোগ দেখা দেয়। এক্ষেত্রে পাকুড় ছাল ২০। ২৫ গ্রাম (শুকনা) একটু থেতো করে ১ লিটার জলে সিদ্ধ করে অর্ধেক থাকতে নামিয়ে (আন্দাজ আধ লিটার) ছে’কে, ঠাণ্ডা হ’লে, সেই জল সমস্ত দিনে অল্প অল্প করে খেতে দিতে হবে। এর দ্বারা ওই ভ্রম হওয়াটা (ভুল হওয়াটা) আর থাকবে না। এছাড়াও কোন সাময়িক কারণেও যদি ভুলভাল ব’লতে থাকেন, সেক্ষেত্রেও কাজ হবে।

আরো পড়ুন:  কাঁঠাল-এর দশটি ভেষজ গুণাগুণ ও এর বিবিধ ব্যবহার

৪. রক্তপিত্ত রোগে: গায়ে হাতে-জ্বালা, বমি বমি ভাব, পেটের দোষে (অশ্লপিত্তজনিত) বুক জ্বালা ও গলা জ্বলার উপসর্গ, পরে মাঝে মাঝে জ্বর। এতেই রক্তপিত্তের গোড়াপত্তন। তাহোক, এই রোগ দেখা দিলে পাকুড় পাতার রস (কচি পাতা হ’লে ভাল হয়) ১ চা-চামচ অল্প দুধ (ছাগীদগ্ধ হ’লে ভাল হয়) মিশিয়ে সকালে ও বৈকালে দু’বার, না হয় একবার ক’রে খেলে কোন উপসর্গই আর থাকবে না।

বাহ্য ব্যবহার

৫. শ্বেত প্রদরে: যাকে এখন জনসাধারণ লিউকোরিয়া বলে থাকেন। এই রোগ দীর্ঘদিন চলতে থাকলে ভিতরে ক্ষত হয়। এক্ষেত্রে পাকুড় ছাল ১৫। ২০ গ্রাম একটু থেতো করে ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করে আন্দাজ ২ কাপ থাকতে নামিয়ে পরে কাপড়ে ছেকে সেই জলের ডুস দিতে হবে। এইভাবে তৈরী করে কয়েকদিন ডুস দিলে ওই স্রাব বন্ধ হয়ে যাবে, ক্ষতও সেরে যাবে।

দ্বিতীয় প্রক্রিয়া বেশ খানিকটা ছাল নিয়ে তাকে কুটে ছালের ৮ গুণ মাত্রায় জল দিয়ে সিদ্ধ করে সিকিভাগ থাকতে (চতুর্থাংশ) নামিয়ে পর কাপড়ে ছে’কে, সেই ক্বাথটাকে পুনরায় ঘন করে ওই পাকুড় ছালের মিহি চূর্ণের সঙ্গে মিশিয়ে একটু চ্যাপ্টা ছোট ছোট (ট্যাবলেটের মত) বড়ি করে শুকিয়ে রাখতে হবে। প্রত্যহ রাত্রিতে শয়নের আগে একটি করে যোনির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে শুয়ে থাকতে হবে; এইভাবে। কয়েকটা দিন ব্যবহার করলে যেকোন ধরনের ক্ষরণ হোক না কেন, বন্ধ হয়ে যাবে।

৬. পোড়া ঘায়ে: পাকুড় ছাল (শুকনা) মাটির হাঁড়িতে পুরে সরা দিয়ে হাঁড়ির মুখ ঢেকে আগুনে বসিয়ে (ঘটের আগুনে হ’লে ভাল হয়) পুড়িয়ে নিতে হবে, এইভাবে পোড়ালে ওই ছাল কয়লা হয়ে যাবে (একেই বলে অধমে পোড়ানো)। সেই কয়লা মিহি চূর্ণ করে ছেকে নিতে হবে। ওই মিহি চূর্ণ ঘায়ের উপর ২। ৩ দিন ছড়িয়ে দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। অনেক বৃদ্ধ বৈদ্য ওই চূর্ণ নারকোল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মলমের মত করে রাখেন এবং ওইটাই লাগাতে দিতেন।

আরো পড়ুন:  উলুচা বাংলাদেশের পাহাড়ীঞ্চলে জন্মানো গুল্ম

CHEMICAL COMPOSITION

Ficus lacor Buch-Ham

Analysis of leaves :- Crude protein 10.2%; ether extract 2.67%; crude fibre 22.77%; N-free extract 52.24%; nitrogen 1%; phosphorus 0.2%; calcium 5.1% and totalash 12.14%. Bark yields a fibre

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩, পৃষ্ঠা, ১৬৭-১৬৯।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Krish Dulal

Leave a Comment

error: Content is protected !!