শিমুল গাছ-এর বিবরণ ও ষোলটি ভেষজ গুণাগুণ

সংস্কৃত শাল্মলী শব্দ থেকে বাংলা ভাষায় শিমুল বা লাল শিমুল শব্দটি এসেছে। মূলতঃ শিমুলের ফুল অত্যন্ত লাল হয় বলে আমাদের দেশে শিমুলের আরেক নাম লাল শিমুল।

শিমুল উদ্ভিদের বর্ণনা: শিমুল অতি বৃহৎ পত্রঝরা বৃক্ষ। গাছের গায়ে মোটা মোটা কাটা থাকে। বাকল ধূসর বর্ণের। পাতা করতলাকার যৌগিক, বোটার মাথায় একত্রে ৫টি ফলকযুক্ত। পত্রফলক বৃন্তযুক্ত এবং ৪-৮ ইঞ্চি লম্বা। ফুল বেশ বড় এবং দেখতে টকটকে লাল বর্ণের, সুদর্শনা, পূর্ণাঙ্গ, উভয়লিঙ্গী, গর্ভপাতপুষ্পী, বৃত্যংশ ৫টি, পাপড়ি ৫টি, লাল বর্ণের, পুংকেশর বহুগুচ্ছক, গর্ভকেশর ৫টি, সংযুক্ত, পাঁচ প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট, ফল বৃহৎ, ক্যাপসিউল, ৬-৭ ইঞ্চি লম্বা, ফলতুক তুলায় পরিবর্তিত হয়, বীজ গোলাকার, তুলার আঁশের মধ্যে নিহিত থাকে, শীতকালে ফুল ফুটে। শিমুল গাছ-এর ব্যবহার্য অংশ হলো শিকড় , বাকল, ফুল, কাঠা, কচি ফল ও বীজ ।

শিমুলের সাধারণ গুণাগুণ: শিমুল বলকারক, শীতবীর্য, স্নিগ্ধকারক, অত্যন্ত শুক্রবর্ধক, কামোদ্দীপক, মলরোধক, রক্তপিত্ত শান্তিকারক, বাতরক্তে উপশমকারক, প্রদর নাশক, মুখের মেচতা নাশক, রসায়, উদরাময়, আমাশয় ও রক্তস্রাবে হিতকর, সংকোচক।

রোগ নিরাময়ে শিমুলের ব্যবহার:

১. যে শিমুল গাছ-এর ফুল দিতে আরম্ভ করেনি তেমন শিমুল গাছের শিকড় অত্যন্ত শুক্রবর্ধক। শিকড় সংগ্রহ করে ছায়ায় শুকাতে হবে এবং শুকনো শিকড়কে বিচূর্ণ করে তা হতে এক তোলা পরিমাণ চূর্ণ প্রত্যহ সকালে সেবন করলে তা ধ্বজভঙ্গের একটি মহৌষধ। এছাড়া অন্য কোনো ঔষধই কামোদ্দীপকের জন্য অধিক গুণসম্পন্ন বলে জানা যায়নি। অনেকের মতে শিকড় চূর্ণ প্রত্যেহ সকালে কিঞ্চিৎ মধুসহ সেবন করলে আবার কারো মতে রাত্রিতে শয়নকালে ছাগলের দুধের সাথে সেবন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

২. কচি শিমুলের শিকড় বলবৃদ্ধিকারক, বমনকারক, স্নিগ্ধকারক, ভগ্নস্বাস্থ্য স্থিতিকারক, রক্তরোধক, শরীরের গোলযোগপূর্ণ শরীর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলির শুদ্ধিকারক এবং আমাশয় নিরাময়ক।

৩ শিমুল গাছে পোকা ধরলে এক প্রকার আঠা বের হয় কিন্তু কোন স্থান চিরে দিলে তা হয় না। এ আঠাকে মোচরস বলে। এই আঠা অত্যন্ত কামোদ্দীপক, আঠা রক্তরোধক, বলকারক, অন্টারেটিভ, রক্তস্রাব বন্ধকারক এবং আমাশয়, রক্ত আমাশয়, রক্ত বর্মন, ইনফ্লুয়েঞ্জা, রক্তযক্ষ্মা, ফুসফুসীয় প্রদাহ প্রভৃতি রোগে অতি নিশ্চিত ফলপ্রদ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শিশুর ডাইরিয়ায় ইহা একটি বিশেষ ঔষধ। তবে শিশুদের খাওয়ানোর সময় চিনির সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো ভাল।

আরো পড়ুন:  স্বর্ণচাঁপা ফুল, ফল, গাছের ছালের নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ

৪. গরুর দুধের সাথে শিমুলের কাটা পিষে মুখে প্রলেপ দিলে মুখের মেছতা দ্রুত সেরে যায়।

৫. গরুর দুধের ঘি ও সৈন্ধব লবণে শিমুল ফুল ভেজে সেবন করলে অত্যন্ত কঠিন প্রদরও ভাল হয়ে যায়।

৬ অর্শে বা রক্তস্রাবে শিমুলের শুষ্ক ফুল ও চিনি ছাগলের দুধের সাথে জ্বাল দিয়ে ২ চা চামচ পরিমাণ মাত্রায় দিনে তিনবার সেবন করলে অত্যন্ত উপকার পাওয়া যায়।

৭. সরু শিকড় গণোরিয়া ও উদারাময় ভাল করে।

৮ শিমুল পাপড়ি মূত্রকর, কামোদ্দীপক ও মূত্রযন্ত্রের রোগে হিতকর।

৯ সামান্য গরম বাসক পাতার রস চার চা-চামচ এবং এর সাথে ৬ রতি পরিমাণ শিমুলের আঠা সকাল-বিকাল দু’বেলা খেলে পুরনো কাশি সত্বর আরোগ্য হয়।

১০. জননযন্ত্রের দুর্বলতা দেখা দিলে শিমুলের ফুল বেশ উপকার সাধন করে থাকে।

১১. শিমুলের শুষ্ক কচিফল চূর্ণ সেবনে মুত্রযন্ত্রের ক্ষত আরাম হয়।

১২. শিমুল বীজ গণোরিয়া, গ্রীট, স্টিটাইটিস প্রভৃতি রোগে হিতকর।

১৩. শিমুল গাছ-এর ফুল চূর্ণ ও শিমুলের আঠার মিশ্রণ আধ তোলা পরিমাণ প্রত্যহ সকালে মধুর সাথে সেবন করলে বাতরোগ আরোগ্য হয়।

১৪. ৭ দিনে ৭টি শিমুল বীজ খেলে কুকুরের কামড়ের বিষ বিনষ্ট হয়ে যায়।

১৫. শিমুলের মূল ও আপাং-এর বীজ সমান পরিমাণ নিয়ে গো-মূত্রের সাথে বেটে প্রলেপ দিলে ধবল বা স্বেতী রোগ আরোগ্য হয়।

১৬. পুরাতন গাছের বড় শিমুল কাটা কোমরে বেঁধে রাখলে একশিরা রোগ আরোগ্য হয়।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ       

১. মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী: ‘গাছ-গাছড়ায় হাজার গুণ ও লতাপাতায় রোগ মুক্তি, সত্যকথা প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ২০০৯, পৃষ্ঠা, ৭২-৭৪।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Andrew Mercer

Leave a Comment

error: Content is protected !!