বিহিদানা-এর সাতটি ভেষজ প্রয়োগ পদ্ধতি

বিহিদানা গাছটির বোটানিক্যাল নাম Cydonia oblonga Mill, পূর্বে এটির নাম ছিল c. vulgaris Pers. এবং Pyrus cydonia Linn., ফ্যামিলী Rosaceae. ভারতের অধিকাংশ স্থানে বিহিদানা নামেই পরিচিত। আরবে সফরজল নামেই প্রসিদ্ধ।

বিহিদানা-এর ভেষজ ব্যবহার

১. অগ্নিমান্দ্য, অরুচি ও কোষ্ঠবদ্ধতায়: সাধারণতঃ প্রথম দু’টি অথবা তিনটি সমস্যা একত্রে আসে, পৃথক পৃথক ভাবে আসে কমই; এগুলি যে ভাবেই আসুক না কেন, ৪ থেকে ৫ গ্রাম বিহিদানা রাত্রে এক গ্লাস গরম জলে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে বীজগুলো বাদ দিলে যে হড়হড়ে থকথকে পদার্থটি থাকবে, সেটির অর্ধেকটা নিয়ে চিনি দিয়ে সরবতের মতো করে খেতে হবে এবং বাকি অর্ধেকটা বিকালের দিকে ঐভাবে প্রস্তুত করে খেলে চলবে। সপ্তাহখানিক ব্যবহার করার পর কেবল সকালের দিকে একবার খেলেই হবে, তখন বীজ নেবেন আন্দাজ ৩ গ্রাম।

২. উদরশূল, বমি ও পিপাসায়: পৃথক পৃথকভাবে কিংবা একত্রে এই সমস্যা আসতে পারে। একসঙ্গে এলে অবস্থা যাতে আয়ত্তের মধ্যে থাকে, সে ব্যবস্থা করা দরকার। তখন বীজকে গুঁড়ো করে কিংবা টুকরো টুকরো করে ভিজিয়ে, বেঁটে, অতি সামান্য চিনি সহযোগে সরবতের মত প্রস্তুত করার পর সেটাই অল্প অল্প ক’রে খাওয়াতে হবে। বীজের মাত্রা ও জল পূর্ববৎ। ওটিকে ৪। ৫ বারে খাওয়ানো উচিত। এরই মধ্যে বীজ ভিজিয়ে (রাত্রে বা দিনে) ১০। ১২ ঘণ্টা রেখে চটকে বীজ বাদ দিয়ে চিনি মিশিয়ে সররতের মতো তৈরী করে নেওয়া যেতে পারে এবং সেটিই ব্যবহার্য। কেবল হঠাৎ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বীজকে গুঁড়ো করে বেঁটে সরবত করা উচিত। উপসর্গ চলে গেলেও দু’চারদিন ব্যবহার করা দরকার।

৩. অতিসার ও প্রবাহিকায়: বিশেষতঃ বৃদ্ধ ও বালকদের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। উপরিউক্ত পদ্ধতিতে বীজ ভিজিয়ে সরবতের মতো করে দিনে ২ বার খেতে হবে। কেবল বয়স অনুপাতে মাত্রাটা কম-বেশি করে নিতে হয়।

আরো পড়ুন:  জিকা, জিগা বা জিওল গাছের আটটি উপকারিতার বর্ণনা

৪. মূত্রকৃচ্ছ্র ও মূত্রপ্রদাহে: দাহ ও জ্বালার সঙ্গে অল্প অল্প প্রস্রাব নির্গত হচ্ছে, তখন সন্দেহের তীর নানা দিকে ছুটছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকুক, ততক্ষণে বিহিদানা ভিজানো জলের সরবত দু’বেলা খেতে থাকুন। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যদি কিছু দোষ ধরা পড়ে, তাহলে সেইমত চিকিৎসা হবে এবং সেইসঙ্গে এই যোগটিও চলতে পারে, যদি চিকিৎসকের মত থাকে। আর যদি কোন দোষ না থাকে, অর্থাৎ ধরা না পড়ে, তাহলে এই যোগটি ব্যবহার করবেন। গরমের দিনে অত্যধিক ঘোরাঘুরির ফলে এটি এলে বিহিদানার সরবত অমৃততুল্য।

৫. জননেন্দ্রিয়ের প্রদাহে: উভয়েরই প্রদাহ অর্থাৎ লিঙ্গে ও যোনিতে প্রদাহ, সামান্য সাধ-আহ্লাদ মেটাতে গেলেও জ্বালার সৃষ্টি। মেয়েদের অত্যধিক সাদা স্রাব হওয়া, খিটখিটে মেজাজ এবং সময়ে অসময়ে ইচ্ছা জাগলেই তা ফলপ্রসূ করা। এর ফলে জননেন্দ্রিয়ের প্রদাহ এবং অল্প বয়সে কামাবসাদ, শুক্রধাতুর স্বল্পতা প্রভৃতি এসে জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। সেজন্য প্রদাহ সৃষ্টি হলেই পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে বিহিদানার সরবত প্রস্তুত করে কিছুদিন খেতে হবে। যদি উভয়ের না হয়ে কোন একজনের হয়, তাহলে তাকে একাই খেতে হবে।

৬. শ্বেতপ্রদরে (সাদা স্রাবে): এটি সামান্য পরিমাণে যোনিদ্বার দিয়ে নির্গত হলে কোন ক্ষতি নেই, সেটাই বরং স্বাভাবিক। অত্যধিক পরিমাণে হতে থাকলে শরীর ক্ষীণ ও দুর্বল হতে থাকে, অপুষ্টি দেখা দেয়, মেজাজটা হয়ে যায় খিটখিটে, কোনো কাজেই মন বসে না। এমতাবস্থায় উপরিউক্ত/পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে প্রস্তুত বিহিদানা ভিজানো জলের সরবত মাসখানিক খেলে উপকার হবে। এছাড়া বিহিদানা হালকা করে ভেজে মিহি চূর্ণ প্রস্তুত করার পর সেটি আধ চা-চামচ মাত্রায় দিনে একবার কিংবা দুইবার জল অথবা দুধের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া চলে। এই চূর্ণটি একটি শুকনো ও মুখবন্ধ শিশিতে রাখা উচিত। এই সময় হালকা ঔষধ যেমন হিতকর, তেমনি হালকা গরম জলে ফটকিরি মিশিয়ে সেই জল দিয়ে প্রত্যহ এক বা দু’বার যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করা দরকার। পুকুরে নেমে স্নান একেবারেই নিষিদ্ধ।

আরো পড়ুন:  শিয়াল বুকা বাংলাদেশের অরণ্যে জন্মানো ফলজ উদ্ভিদ

৭. শুক্রতারল্য: এই সমস্যার ফল কিন্তু মারাত্মক। যদিও এর দ্বারা জীবন সংশয় সাধারণতঃ হয় না তবে ব্যক্তিজীবনে বিতৃষ্ণা চলে আসে। এক্ষেত্রে বিহিদানা ভিজানো জল অথবা বিহিদানা চূর্ণ দুধ কিংবা জলসহ পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে মাস তিনেক খেলে অবস্থা থেকে উন্নতির দিকে যাবে।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ১৮১-১৮৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!