এটির আদি নিবাস চীন দেশ। যদিও এটি চীনের গ্রামাঞ্চলের গাছ, তথাপি বর্তমানে ভারতের প্রায় সর্বত্র বাগানে সমাদরের সঙ্গে রোপণ করা হয়। মাঝারি ধরনের ঝোপ-ঝাড় যুক্ত গাছ, সাধারণতঃ ৮-১০ ফুট পর্যন্ত উচু হয়। এই গণের প্রায় ৩৩টি প্রজাতি ভারতে বর্তমান। পাতাগুলো অনেকটা ঢ্যাঁড়শের পাতার মত, তবে ঢ্যাঁড়শের পাতা তীকক্ষ্ম রোমশযুক্ত, স্থলপদ্মের পাতা রোমশ হলেও কোমল।
এর ফলের একটা বৈশিষ্ট্য আছে— ফলগুলোর গঠন অনেকটা পঞ্চমুখী জবার আকার হলেও অপেক্ষাকৃত বড় এবং সকালের দিকে গোলাপী (বেতাভ লাল), বৈকালের দিকে কুঞ্চিত হয়ে রক্তাভ হয়। একে বাংলায় স্থলপদ্ম, স্থলপদ্ম; হিন্দীতে স্থলকমল, শলপড়, গুলিয়াজেব; সংস্কৃতে পদ্মচারিণি, স্থলপদ্ম বলে। এর বোটানিক্যাল নাম Hibiscus mutabilis Linn., পরিবার Malvaceae ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ- ফুল ও পাতা।
স্থলপদ্ম গাছ-এর উপকারিতা:
ফুলের পাপড়ি কাজ করে রসবহ স্রোতে, আর মূলের ছাল (ত্বক) কাজ করে রমণীদের রজঃঘটিত রোগে অর্থাৎ ঋতুদোষে।
১. মূত্রকৃচ্ছ রোগে: এ রোগের নামকরণের মধ্যে একটা আভাস আছে; প্রস্রাব হবে বেশ কষ্টের সঙ্গে, হয়তো বা ফোঁটা ফোঁটা কিম্বা কিছু হলো আবার মূত্রগ্রন্থিতে মৃদু টনটনানি ব্যথা; বসলে প্রস্রাব ভাল হয় না, দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে একটু সহজে হয় কিম্বা একটু ঠাণ্ডা জল ঢাললে প্রস্রাবের বেগ আসে; এটা অবশ্য অনেক কারণেই হয়।
ওই সময় যদি স্থলপদ্ম ফোটে (শরতে বা বসন্তের শেষে) তাহ’লে একটা ফুলের পাপড়ি নিয়ে চটকে বা বেটে জলে গুলে (অন্তত দেড় কাপ) তার সঙ্গে এক চা-চামচ চিনি। মিশিয়ে সরবত করে খেতে হবে। এটাতে ২। ৩ ঘণ্টার মধ্যেই প্রস্রাব সরল হ’য়ে হ’তে থাকবে।
২. তৃষ্ণা রোগে: এও একটা রোগে দাঁড়ায়; মুত্রগ্রন্থির শুষ্কতায় তো হয়ই, তাছাড়া পিত্ত ও কফবিকারজনিত প্রমেহ রোগেও হয়, আবার হৃদরোগ বাসা বাঁধলেও সামান্য পরিশ্রম করার পর (হেটে আসার পর, খুব উচু বাড়িতে ওঠার পর) একটু ঠাণ্ডা জল খেলে তবে তৃপ্তি আসে।
এটা নিয়তই হ’তে থাকে; সেক্ষেত্রে (যদি ফুল পাওয়া যায়) স্থলপদ্মের (ফুলের) সরবত খেলে ওটা সেরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মূল রোগেরও চিকিৎসা করাতে হয়। তৃষ্ণা রোগটা তখন উপসর্গ।
৩. রজঃকৃচ্ছ্রতায়: মাসিক হয় বটে, কিন্তু পরিষ্কার হয় না, তার জন্য কোমরে বা তলপেটে যন্ত্রণা অথবা দু’দিকেই যন্ত্রণা, ওক্ষেত্রে স্থলপদ্ম গাছের শিকড়ের ছাল ৩ গ্রাম (কাঁচা হ’লল’) বেটে সরবত করে প্রত্যহ একবার করে খেতে হবে। অথবা মূলের ছাল চূর্ণ ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় প্রত্যহ একবার করে জলসহ খেতে হবে, তবে মাসিক আরম্ভ হওয়ার ৭।৮ দিন পর থেকেই খাওয়া শুরু করতে হবে। এই রকম ২। ৩ মাস ঋতু হওয়ার ৭-৮ দিন পূর্ব থেকেই খেতে হবে। তবে জলখাবার খাওয়ার পর এটা খাওয়াই ভাল।
৪. প্রমেহ রোগে: এটা ছেলে, মেয়ে উভয়েরই হতে পারে। তবে এ রোগের ভেদ অনেক। উঠতি বয়সে হাতের ও পায়ের তলা এবং জিভটা শুকিয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের মাত্রা বেশী হওয়া, তারপরই পেট খালি হয়ে যায়, আর মনে হয় ক্ষিধে পেয়েছে, এদের আর একটা বিশেষ লক্ষণ হলো জিভের ময়লা গাঢ় হয়, যতই পরিষ্কার করা যাক না, সে ময়লা থেকেই যায়। এক্ষেত্রে স্থলপদ্ম গাছ-এর ছাল ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় জলসহ প্রত্যহ একবার খেতে হবে, এক সপ্তাহ ব্যবহার করাতে বিশেষ উপকার না হলে পাতাচূর্ণ ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় সপ্তাহখানেক খেতে হবে। এর দ্বারা ওই অসুবিধেটা চলে যাবে।
CHEMICAL COMPOSITION
Hibiscus mutabilis Linn.
The flower contains :— flavonoids and the bark yield a strong fibre.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩, পৃষ্ঠা, ১২১-১২২।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: そらみみ (Soramimi)
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।