কদবেল বা কৎ বেল গাছ ও ফলের দশটি ভেষজ ব্যবহার ও প্রয়োগ

পরিচিতি

কদবেল বা কৎ বেল (Limonia acidissima) গাছ ১২-১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। এটি বেশ শক্ত ধরনের পত্রঝরা বৃক্ষ। পাতা দেখতে অনেকটা কামিনী ফুলের পাতার মতো।

পত্রদণ্ডের দুইদিকে ৫/৭টি করে পাতা থাকে। গাছে ছোট, সোজা ও শক্ত কাটা থাকে। ফিকে লাল বা সাদা ফুলের ব্যাল প্রায় ১.২৭ সে. মি.।

প্রতি ফুলে ৫/৬টি লোমযুক্ত পাপড়ি থাকে। ফল ছোট বেলের মতো; ক্রিকেট বলের চেয়ে বড়, ব্যাস ৬.২৫ সে. মি.।

উপরিভাগ সাদা, ফল পাকলে কালচে বর্ণের হয়। কতবেলের শাস লবণ ও চিনির সাথে মিশিয়ে রোদে শুকিয়ে চাটনি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

মরিচ ও লবণযোগেও ফলের শাস ছেলেমেয়েদের প্রিয় খাদ্য। পাকা ফল খাওয়ার পর অথবা ভেঙে পানিতে ধুয়ে বীজ সংগ্রহ করা হয়। শুকিয়ে হয়।

মাস পর্যন্ত বীজ সংরক্ষণ করা যায়। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বীজতলায় বীজ বপন করতে হয়। বীজ ৭-১৫ দিনের মধ্যে গজায় এবং অঙ্কুরোদগমের হার শতকরা ৬০ ভাগ।

কদবেল বা কৎ বেল-এর ঔষধি গুণ:

কতবেল-এর ফল, পাতা, ছাল ও শাস ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফল মধুর অল্প রসযুক্ত।

১. পিত্ত পাথুরিতে (Gallstone): এই রোগের ক্ষেত্রে কতবেলের কচি পাতার রস এক চা চামচ করে। সকাল-বিকাল রোজ খেলে অসুবিধা সেরে যায়।

২. কাশি, হাঁপানি ও যক্ষ্মা: ফলের শাস কাশি, হাঁপানি ও যক্ষ্মা রোগ সারায় এবং এতে উদ্দীপক, মূত্রবর্ধক, বলকারক ও যৌনশক্তি বর্ধক গুণ রয়েছে (Ghani, 2003).

৩. হিক্কা সারাতে: কাচা কতবেলের রস পিপুল গুড়া ও মধুসহ হিক্কা রোগীকে পান করালে সেরে যায়। এতে বমিও বন্ধ হয় (Chopra et al, 1956)।

৪. পিত্তবায়ু: পাতা ও রাজাদন বেটে ঘিয়ে ভেজে খেলে পিত্তবায়ু নাশ হয়। এটা সর্বপ্রকার রক্ত পিত্তের পক্ষে হিতকর।

৫. ব্যথানাশ: কতবেলের পাতা ও বাঁশ পাতা সমান করে নিয়ে ভালোভাবে বেটে মধুসহ খেলে তীব্র প্রদরের পক্ষে খুবই উপকার হয়।

আরো পড়ুন:  ফলসা গাছের দশটি ভেষজ গুণাগুণ ও উপকারিতা

৬. পেটের সমস্যা দূর: পাতা পেট ফাপা, অজীর্ণ ও পেটের অন্য কোনো দোষ হলে ব্যবহৃত হয়।

৭. রক্ত আমাশয়: এই সমস্যা সারাতে কতবেলের আঠা মধুসহ খেলে বিশেষ উপকার হয়।

৮. হৃদরোগ সারাতে: ফলের বিচি হৃদরোগ নিরাময় করে।

৯. পতঙ্গ ও সাপের কামড়ের ব্যথানাশ: বিষাক্ত কীটপতঙ্গ বা সরীসৃপের দংশনে ফলের শাস পেস্ট করে লাগালে বিষুনিটা আর থাকবে না।

১০. অন্যান্য ব্যবহার: পাকা ফল দাতের মাড়ি ও গলার ঘায়ে ব্যবহৃত হয়। কাঠ ঘন ও শক্ত চেরাই করা যায়। কৃষি যন্ত্রপাতি ও ঘরবাড়ি নির্মাণে ব্যবহার করা যায়।

রাসায়নিক গঠন:

(a) Citric acid (b) Mucilage (c) Alkaloids (d) Fatty acid (e) Coumarins () Sterols (g) Glycoside (h) Psoralen (i) Vitexin (j) Essential oil (k) Proteins (Ghani-2002).

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. অবনীভূষণ ঠাকুর: ‘ভেষজ উদ্ভিদ ও লোকজ ব্যবহার’, অবসর প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, দ্বিতীয় মুদ্রণ ডিসেম্বর ২০০৯, পৃষ্ঠা, ১৪-১৬।

Leave a Comment

error: Content is protected !!