হিমালয় অঞ্চলের ৩। ৪ হাজার ফুট উচু পর্যন্ত স্থানসমূহে এবং পশ্চিমবঙ্গ, খাসিয়া পাহাড়, মণিপুর, উড়িষ্যা, মহীশুর, বর্মা প্রভৃতি স্থানে এটি জন্মে। বোম্বাই প্রদেশের কোথাও কোথাও এটিকে লাগানো হয়। গাছ আকারে মাঝারি ধরনের, শাখাপ্রশাখা ঘন-সন্নিবিষ্ট। কাঠ লাল রঙের হয়ে থাকে, গাছের ছাল লম্বালম্বি ফাটে। পাতার গোড়ার দিকটা গোলাকার, ডগার দিকটা লম্বাটে, এতে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম লোম আছে, পাতার নিচের দিকটা সাধারণতঃ বেত অথবা পীতাভ হয়। ডিসেম্বর মাসে ঈষৎ পীতাভ বেত বর্ণের সুগন্ধযুক্ত ফুল ফোটে, পরে ফল হয়, পাকতে বছরখানেক সময় লাগে। ফল লম্বাটে গোলাকার।
একে সংস্কৃতে মচকুন্দ, মুচুকুন্দ, ক্ষত্রবৃক্ষ, চিত্রক; হিন্দীতে ও বাংলায় মচকুন্দ বলে। মারাঠী ও গজরাটী ভাষাভাষী অঞ্চলেও একে মচকুন্দ বলে। এর বোটানিক্যাল Pterospermum suberifolium Lam., পরিবার: Sterculiaceae. ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ— ফল ও ছাল।।
মচকুন্দ গাছের গুণাগুণ:
১. পাণ্ডু রোগে: শরীর ফ্যাকাশে, মাঝে মাঝে কাসি আর জিভে যেন একটা কিসের প্রলেপ পড়ে রয়েছে। এ লক্ষণগুলা কিন্তু শ্লেষ্মাজনিত পাড়ুরোগের। এক্ষেত্রে এই গাছের মূলের ছাল ৫ গ্রাম (কাঁচা), তাকে জল দিয়ে থেতো ক’রে, ন্যাকড়ায় পুরে নিংড়ে, তার রস নিতে হবে অন্ততঃ ২ চা-চামচ, ৭। ৮ চা-চামচ জলে মিশিয়ে সেটা সকালের দিকে খেতে হবে। পুনরায় ওই সিটেটাই আধ কাপ গরম জলে ভিজিয়ে রেখে বৈকালের দিকে ছেকে ওই জলটা খেতে হবে। এইভাবে কয়েকদিন ক’রলে অসুবিধেটা চ’লে যাবে।
২. চুলকানিতে: এরা প্রায়ই সর্দি-কাসিতে ভোগেন, শরীরে ঠাণ্ডা লাগলেই চুলকনা হয়। ধারণা হয়, বোধ হয় রক্ত খারাপ হয়েছে। এক্ষেত্রে গাছের ছাল ৫ গ্রাম ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছে’কে, সকাল অথবা বৈকালের দিকে খেতে হবে। দুই-তিন দিনের পর থেকেই ওটা কমতে থাকবে।
৩. কাসিতে: এটায় শ্লেষ্মা প্রাধান্য থাকবে, আর থোকা থোকা কফ উঠবে, তার সঙ্গে স্বরভঙ্গ আসছে, অবশ্য এটার বিশেষ কারণ যদি না থাকে অর্থাৎ যক্ষ্মাজনিত হয়, তাহলে এই গাছের ছাল (কাঁচা) অল্প জল দিয়ে থেতো করে তার রসকে ছেকে নিয়ে, অল্প গরম করতে হবে। সেটা ২ চা-চামচ করে দু’বেলা খেতে হবে, তবে ছালের মাত্রা ৫ গ্রাম নিলেই চলবে। আর শঙ্ক ছাল হলে সেটা থেতো করে। ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করতে হবে, জল আন্দাজ এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে সকালে ও বৈকালে দু’বারে খেতে হবে। এর দ্বারা কাসি ও স্বরভঙ্গ দুই-ই সারবে।
৪. মেদ বধিতে: মচকুন্দ গাছের ছাল ৫।৭ গ্রাম থেতো করে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করতে হবে। সেটা আন্দাজ এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছে’কে সেই জলটা এক বেলা বা দু’বেলায় খেতে হবে। অথবা ফুল চূর্ণ ১ গ্রাম মাত্রায় সকালে ও বৈকালে জলসহ খেলেও মেদ কমে যাবে।
৫. মাথার যন্ত্রণায়: যেখানে বায়ু (মস্তিষ্কের) শ্লেষ্ম কতৃক অবরুদ্ধ হয়ে মাথায় যন্ত্রণা হয়, সেখানে মচকুন্দ ফুল একটা (কাঁচা অথবা শুকনা) জলে বেটে একটু চিনি মিশিয়ে সরবত করে খেলে যন্ত্রণার উপশম হয়। তাছাড়া ওই ফুল বেটে কপালে লাগিয়ে দিলে আরও ভাল হয়।
৬. ঢেঁকুর কমাতে: ক্ষিধে (ক্ষুধা) কম কিন্তু ঢেকুর খুব, এক্ষেত্রে অগ্নিমান্দ্য বিবেচনা করে লবণাক্ত (ভাস্কর লবণ জাতীয়) ওষুধ খেয়ে ক্ষিধে বাড়ানোর চেষ্টাটা সফল হয়। এক্ষেত্রে মচকুন্দ ফুল চূর্ণ ১ গ্রাম মাত্রায় দু’বেলা খাওয়ার পর জলসহ ২।৪ দিন। খেলেই ক্ষিধে বেড়ে যাবে এবং ঢেকুর ওঠাও কমে যাবে।
বাহ্য ব্যবহার
৭. দাগ হলে: শরীরের চামড়ায় বিশ্রী দাগ, তা চুলকনাজনিতই হোক আর যেকোন কারণেই হোক, সেটা আর মিলিয়ে যাচ্ছে না, তাঁকে এই গাছের ছাল চন্দনের মত বেটে হলুদের মত গায়ে মাখতে হবে; ২। ৩ ঘণ্টা বাদে ‘ধুয়ে ফেললেও ক্ষতি নেই। এই রকম কয়েকদিন মাখলে ওই দাগগুলি মিলিয়ে যাবে।
৮. বয়োব্রণে: মুখে বয়েস ফোড়ার দাগ, বিশ্রী দেখায়; এক্ষেত্রে এই গাছের ছাল বেটে (চন্দনের মত করে) মুখে মাখতে হবে। ২। ৩ ঘণ্টা পরে মুখটা ধুয়ে ফেলতে হয়।
৯. ছারপোকার: উপদ্রবে মচকুন্দ ফুল বিছানার তলায় রেখে দিলে ছারপোকার উপদ্রব কমে যায়।
CHEMICAL COMPOSITION
Pterospermum suberifolium Flower contains :— Bitter substances.
Pterospermum acerifolium The seeds yield a pale yellow oil (22.6%).
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩, পৃষ্ঠা, ২২৫-২২৬।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: jayeshpatil912
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।