কুচিলা (বৈজ্ঞানিক নাম: Strychnos nux-vomica) উচু বৃক্ষ জাতীয় চিরসবুজ উদ্ভিদ। কুচিলা প্রায় ৪০-৬০ ফুট উঁচু হয়ে থাকে। এর পাতা সরল, বৃন্তযুক্ত, উপপত্রযুক্ত, প্রতিমুখ, উপবৃত্তাকার বা ডিম্বাকার, কিনার অখণ্ড, জালিকা শিরাবিণ্যাস যুক্ত, প্রধান শিরা ৩-৫টি।
পুষ্প পূর্ণাঙ্গ, উভয়লিঙ্গ, গর্ভপাদ পুষ্পী, বৃতি সবুজ, বৃত্যংশ ৫টি, দলমণ্ডল সবুজাভ সাদা, পাপড়ি ৫টি, সংযুক্ত, দলনল ও দলখণ্ডে বিভক্ত;
পুংকেশর ৫টি, দললগ্ন; গর্ভপত্র ২টি, সংযুক্ত; ফল বেরী, গোলাকার, মসৃণ, পাকিলে কমলাবর্ণের হয়। ফলত্বক বেশ শক্ত, অভ্যন্তর সাদা তিক্ত শাসযুক্ত।
প্রত্যেক ফলে ১-৫টি বীজ থাকে। বীজ গোলাকার, বোতামের মতো ব্যাপ্টা, শক্ত, রোমযুক্ত এবং প্রায় অর্ধ ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট। কুচিলা বৃক্ষ সাধারণত উচু স্থানে জন্মে থাকে।
বাংলাদেশে এই গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদটি স্বাভাবিকভাবে না জন্মিলেও একে সহজেই জন্মানো সম্ভব। বাংলাদেশের কতিপয় অঞ্চলে কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে কুচিলা লাগিয়ে থাকেন।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় যেখা যায় কুচিলা বৃক্ষ ছোট দিনের উদ্ভিদ অর্থাৎ এর পুষ্পায়ন ও ফল প্রদানের জন্য দীর্ঘ রাত্রিকালের দরকার। গাছের কাছে ইলেকট্রিক লাইট জ্বালিয়ে রাখলেও এর পুম্পায়ন বন্ধ হয়ে যায়।
কুচিলা-এর সাধারণ গুণাগুণ:
ইহা উষ্ণবীর্য, কটু ও তিক্ত রসযুক্ত। বাত, পক্ষাঘাত রক্তদুষ্টি, আমাশয়, অর্শ, উদরাময়, অজীর্ণ, ব্রণ প্রভৃতি নাশক। কুচিলার ব্যবহার্য অংশ সমগ্র উদ্ভিদ অর্থাৎ মূল, বাকল, পাতা, কাঠ এবং বীজ।
কুচিলা-এর ব্যবহার:
১. ক্ষত সারাতে: শরীরের কোনো অংশ থেতলে গেলে, ব্যথা পেলে এবং ক্ষতে হলে; কুচিলা পাতা বেটে প্রলেপ দিলে বেশ উপকার পাওয়া যায় ।
২. জ্বর সারাতে: কুচিলার কাঠ তিক্ত। কুচিলার কাঠ জ্বর সারাতে ব্যবহার করা হয়।
৩. আমাশয় ও কলেরা সারাতে: কচিলা কাঠ রক্ত আমাশয়, অজীর্ণ থেকে উপসমে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মুলের বাকলের রস তরুণ আমাশয় এবং কলেরা রোগে ব্যবহৃত হয়। মূলের বাকল গুঁড়া করেও ব্যবহার করা যায়। বাকালের গুঁড়া লেবুর রস বা চুনের পানির সাথে মিশিয়ে খেতে দিলে কলেরায় উপকার পাওয়া যায়।
৪. পেটের অসুখ সারাতে: পেট ফাঁপা, পেট বেদনা, উদারময়, অজীর্ণ প্রভৃতি রোগে কুচিলার বীজ, হরিতকী, পিপুল, গোলমরিচ, আদা, সৈন্ধব লবণ ও গন্ধক সমপরিমাণ মিশিয়ে বেটে পরিমাণ মতো গরম পানিসহ আহারের পর পর সেবন করলে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
সতর্কীকরণ:
কুচিলার সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ভেষজ অংশ হল এর বীজ। বীজ অতিশয় বিষাক্ত, বীজ পক্ষাঘাত, উদরাময় স্নায়বিক দৌর্বল্য, রক্ত আমাশয়, অবিরাম জ্বর, রক্তহীনতা বহুমূত্র, কোষ্ঠবদ্ধতা, পেট ফাঁপা, পেট বেদনা, অর্শ, মৃগী, লালামেহ, শুক্রমেহ, ইন্দ্রিয়শৈথিল্য, ব্রঙ্কাইটিস, কাশি, বাতি, অনিদ্রা, জলাতঙ্ক প্রভৃতি রোগে সাফল্যজনকভাবে ব্যবহৃত হয়। অতিমাত্রায় ইহা বিষক্রিয়া প্রকাশ করে, টিটেনাসের মতো খিচুনি সৃষ্টি করে, রক্তচাপ বৃদ্ধি করে এবং মৃত্যু ঘটাতে পারে।
ঔষুধ প্রস্তুতিতে কুচিলার ব্যবহার:
শুষ্ক ও পরিপক্ক কুচিলা বীজের গুঁড়া ১০০ গ্রাম , পরিশ্রুত পানি ২০০ সি. সি. এবং স্ট্রং অ্যালকোহল ৮২৪ সি. সি. একটি উপযুক্ত পাত্রে এই মিশ্রণকে নিয়ে একটি শুষ্ক, শীতল ও অন্ধকার কক্ষে ৮/১০ দিন অনবরত আলোড়িত করতে হবে। পরে ফিল্টার পেপার দিয়ে হেঁকে নিতে হবে তবেই ১০০০ সি. সি. মাদার টিংচার জাতীয় ওষুধ পাওয়া যাবে।
রোগ নিরাময়ে প্রস্তুতকৃত ওষুধের ব্যবহার:
১. রোগী সামান্য কারণেই বিরক্তবোধ করবে, সহ্য ক্ষমতা আদৌ থাকবে না, পাতলা, শীর্ণ, রোগী, খিটখিটে মেজাজী, ঈর্ষাপরায়ন ও স্থুলকায় ব্যক্তিদের জন্য উক্ত ওষুধ বিশেষ কাজ করে। শারীরিক পরিশ্রমে বিমুখ এবং মাতাল ব্যক্তিদেরও উক্ত ওষুধ বিশেষ উপকারে আসে।
২. কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে পুনঃ মলত্যাগের বৃথা চেষ্টা হয়, মনে হয় যেন। কিছু মল রয়ে গেল। উদগার, বমন প্রভৃতি টকগন্ধযুক্ত, প্রাতঃকালে বমন বা বমনেচ্ছা বৃদ্ধি পায়। সাধারণত উদারময় বা ডাইরিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যতা রোগে উক্ত ওষুধ বিশেষ কাজ দেয়।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী: ‘গাছ-গাছড়ায় হাজার গুণ ও লতাপাতায় রোগ মুক্তি, সত্যকথা প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ২০০৯, পৃষ্ঠা, ৭৫-৭৬।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।