ভূমিকা: দেশি কুল ( বৈজ্ঞানিক নাম: Ziziphus mauritiana, ইংরেজি: Indian Jujube, Indian Plum) হচ্ছে রামনাসি পরিবারের জিজিফাস গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতি। এই প্রজাতিটি মাঝারি আকারের বৃক্ষ হয়ে থাকে।
বর্ণনা: দেশি কুল ছোট থেকে মধ্যম-আকারের বৃক্ষ, ছড়ানো খাড়া বা ঝোলানো শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট। পত্র সরল, বৃন্তক, একান্তর, উপবৃত্তাকার-ডিম্বাকার থেকে আয়তাকার-উপবৃত্তাকার, ২.৫-৬.৫ x ২-৪ সেমি, প্রান্ত অখন্ড বা সামান্য ভেঁতা দন্তর, উপরে চকচকে এবং মসৃণ, নিম্নভাগ সাদা-ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত থেকে মরিচা-রোমাবৃত, গোড়া থেকে স্পষ্ট ৩-শিরাল, উপপত্র কন্টকিত, একল বা যুগল, খাড়া বা পশ্চাৎ বক্র।
পুষ্পমঞ্জরী সাইমোস, কাক্ষিক। পুষ্প উভলিঙ্গ, সবুজাভ হলুদ, বৃন্তক, পুষ্পবৃন্ত ৩-৮ মিমি লম্বা। বৃতি ৫ বৃত্যংশক, বৃত্যংশ ব-দ্বীপ আকার, বাহিরে রোমশ, ভিতরে মসৃণ। দলমন্ডল ৫ পাপড়িবিশিষ্ট, পাপড়ি অর্ধচমসাকার, পশ্চাৎ বক্র। এদের পুংকেশর ৫টি। গর্ভাশয় ডিম্বাকার, ২-কোষী, গর্ভদন্ড দ্বি-খন্ডিত। ফল ডুপ, গোলাকার-ডিম্বাকার, অপরিপক্ক অবস্থায় সবুজ, পাকলে হলুদাভ থেকে লালাভ। বীজ একটি, গাত্র গুটিকাযুক্ত। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাসে।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ৪৮ (Kumar and Subramaniam, 1986).
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: সমভূমি থেকে উচ্চভূমি (সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ১০০০ মিটার উচ্চতা), এমনকি শুষ্ক পরিবেশেও সমৃদ্ধিশালী। বীজে বংশ বিস্তার; বীজ কয়েক বছর উর্বর থাকে তবে অংকুরোদগমের হার কমতে থাকে। বর্তমানে বাডিং ও গ্রাফটিং বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বিস্তৃতি: সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্য বা ভারতীয় উপমহাদেশে উদ্ভূত। বর্তমানে সমগ্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং অর্ধগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে আবাদী। বাংলাদেশে সমস্ত এলাকায় এটি আবাদী।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: পাকা ফল অধিকাংশ তাজা অবস্থায় বা পিষে সতেজকারক পানীয় হিসেবে খাওয়া হয়। উৎপাদনের একটি অংশ, বিশেষকরে কম অংশ, শুষ্ক অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। কাচা ফল পিষে লবন এবং মরিচ দিয়ে খাওয়া হয়।
ঔষধি ব্যবহার: বিভিন্ন অসুখে ফল উপকারি যেমন- সংকোচক, পেটের পীড়া উপশমকারী এবং রেচক, রুক্ষ মেজাজ দমনকারী,অরুচি এবং বমির ঔষধ, হজম বৃদ্ধি এবং রক্ত শোধক। অপরিণত পাতার লেই প্রয়োগ করা হয় উত্তেজনা, ফোড়া এবং বিষফোড়ায়। বাকল সংকোচক এবং ডায়রিয়ায় প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, চূর্ণ ক্ষতস্থানের ব্যান্ডেজ এবং আলসারে ব্যবহৃত হয়। মূলের বাকল এর ফুটানো ক্বাথ রেচক এবং গেঁটে বাত ও বাতরোগে ব্যবহৃত হয়।
খাদ্য গুণ: ফলে রয়েছে ট্যানিন,স্যাপোনিনস, ফ্ল্যাভোনয়েডস, মিউসিলেজ, বিজারিত চিনি, ভিটামিন এ, বি২ এবং সি এবং জৈব এসিড যেমন এসকরবিক, সাইট্রিক ও টারটারিক এসিড এবং খনিজদ্রব্য। পাতায় রয়েছে সেরাইল অ্যালকোহল এবং অ্যালকালয়েড, প্রোটোপিন এবং বারবেরিন। বাকলে রয়েছে প্রচুর ট্যানিন, লিউকোসায়ানিডিন, নিউকোপেলারগোনিডিন, বিটুলিনিক এসিড, জিজিফিক এসিড এবং রেজিন (Ghani, 2003). ফলের ১০০ গ্রাম ভক্ষণীয় অংশে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট (১২-১৩ গ্রাম), ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম। কাষ্ঠ লালাভ, সূক্ষ্ম-বুনট, খুব শক্ত এবং টেকসই এবং কুদ্যন্ত্র নির্মাণ ও সরঞ্জাম নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।
জাতিতাত্বিক ব্যবহার: মুসলমানদের জন্য এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স:) এর বানী (হাদিস) অনুযায়ী মুসলমানগণ মৃতদেহ সমাধিস্থ করার পূর্বে গরম পানিতে এই বৃক্ষের কচি পল্লব এবং পাতা রেখে সেই পানি দিয়ে মৃতদেহ গোসল করিয়ে থাকে। গরমের সময় শরীর ঠান্ডা করার জন্য ইহার ফল পানিতে সিদ্ধ করে ঝোলা গুড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ১০ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) কুল প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে কুল সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে এটি সংরক্ষণের তেমন প্রয়োজন নেই।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম. এ. হাসান (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১১-১২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।