ছোট তালচারাকে দেখতে যেমন দেখায়, ময়ূরশিখা গাছকে দেখতে ঠিক সেরূপ দেখায়, তবে বেশ ছোট। পাতা লম্বা ডাটার সঙ্গে যুক্ত। পত্রাংশ চওড়া ও বহুভাগে বিভক্ত। গুচ্ছবদ্ধ পাতাগুলোকে ময়ূরের শিখার মতো দেখায়। রাইজোম খাটো, ভূশায়িত, স্টাইপগুলো ঘনআবদ্ধ। স্টাইপগুলো সবুজাভ থেকে খড়-রঙের, ৫-১৫ সেমি লম্বা, ফ্রল্ড ছোট, পাখা আকৃতি, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমান দুই খণ্ডে ময়ূরশিখা কর্তিত, খণ্ড গুলো লাঠি বা রেখার মতো। উর্বর ফ্রন্ডগুলো বন্ধ্যা ফ্রন্ডের চেয়ে বড় সোরাই গাঢ় খয়েরি এবং ফ্রন্ডের নিম্নপৃষ্ঠে জন্মে। এর কাণ্ড এবং পাতায় পাওয়া যায় রুটিন, হেট্রায়াকনটেন, হেট্রায়াকনটানল, B-সিটোস্টেরল, B-সিটোস্টেরল পালমিটেট, গ্লুকোজ, ফুক্টোজ।
অন্যান্য নাম: দর্শনীয় অথচ পাহাড়ে-টিলার খাঁজে খাঁজে লুকিয়ে থাকা ময়ূরশিখা গাছের কিন্তু বেশ কয়েকটি বাংলা নাম আছে সহস্রাহি, মধুচ্ছদা, নীলকণ্ঠশিখা। হিন্দিতে ময়ূরশিখা; বোম্বে (মুম্বাই)- ভুইটাড; ইংরেজিতে- Peacock’s tail, এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম- Actiniopteris dichotoma Kuhn, গোত্র এডিয়্যান্টাসী।
ময়ূরশিখা-এ বিস্তৃতি:
পেখম মেলা ময়ূরকে দেখতে যেমন হয় এ গাছের গুচ্ছবদ্ধ পাতাকে দেখে তেমনটিই মনে হবে। এটি গাছ হলেও সারাচর চোখে পড়া ফুলবিশিষ্ট গাছ নয়। ময়ূরশিখা ফার্নের এক প্রজাতি বিশিষ্ট গণ যা আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে আরবের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ ভারতে, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার এবং বাংলাদেশে বিস্তৃত। পাহাড়ি অঞ্চলের কালো বা লালচে দানাদার মাটিতে ভেজা, আর্দ্র ও ছায়াচ্ছন্ন স্থানে ভালো জন্মে।
প্রাচীন গ্রন্থে:
কোনো প্রাচীন আয়ুর্বেদ সংহিতা গ্রন্থে এ নামের উল্লেখ দেখা যায় না। তবে ভাবপ্রকাশ নিঘন্টু মতে ময়ূরশিখার কয়েকটি নাম হলো- ময়ূরশিখা, সহস্রাহি, মধুচ্ছদা, নীলকণ্ঠ শিখা। এর গুণ হলো এটি লঘু, পিত্তশ্লেষ্ম, অতিসারনাশক, কষায় কটু, তিক্ত, উষ্ণরস, শ্লেষ্মাজ্বর, কাসি, বহুমূত্র, বালগ্রহ রোগ দূর করে।
ময়ূরশিখা-এর ভেষজ গুণ
১. ম্যালেরিয়া জ্বর সারাতে: ভারতের গোয়ায় দীর্ঘস্থায়ী ম্যালেরিয়া জ্বরে ভোগা রোগীকে এর ক্বাথ খেতে দেয়া হয়।
২. যক্ষ্মা রোগে: এর রাইজোম পানিতে ডুবিয়ে রেখে ঐ পানিটা যক্ষ্মা রোগীর টনিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। উর্বরতা রোধী হিসাবে এ উদ্ভিদকে ব্যবহার করা হয়।
৩. কাসি সারাতে: কাসি হলে এ গাছ চূর্ণ ১ গ্রাম মাত্রায় (শিশুদের বয়স অনুপাতে ১০০-২৫০ মিলিগ্রাম) দিনে ২ বার গরম পানির সঙ্গে সেবন করা এবং কাসির সঙ্গে তরুণ সর্দি থাকলে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে সেবন করা উপকারী।
৪. হুপিং কাশে উপশম: সাধারণত অল্পবয়স্ক শিশুরা হুপিং কাশিতে অধিক আক্রান্ত হয়। এ অবস্থায় ১০০-২৫০ মিলিগ্রাম মাত্রায় ময়ূরশিখা চূর্ণ দিনে ২ থেকে ৩ বার মধুসহ খাওয়ালে ঐ উপদ্রব কমে যাবে। তবে কয়েকদিন খাওয়াতে হবে।
৫. পেটের সমস্যায়: পাতলা দাস্ত এবং সেসঙ্গে ক্ষুধাহীনতা, অরুচি লক্ষণ থাকলে ১ গ্রাম মাত্রায় চূর্ণ পানিসহ সকালে ও বিকালে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে।
৬. চর্ম রোগ সারাতে: চুলকানি ও দাদ হলে ময়ূরশিখা চূর্ণ হলুদ মাখা গায়ে দেয়ার মতো করে আক্রান্ত স্থানে একটু ভারী করে এবং অন্যান্য স্থানে হালকাভাবে মাখলে কয়েকদিনে উপকার হবে।
এ উদ্ভিদ বন্ধ্যত্ব সৃষ্টি করে বলে কথিত আছে। অথচ শিবকালী ভট্টাচার্য তাঁর চিরঞ্জীব বনৌষধি গ্রন্থে একে বরং বন্ধ্যত্ব দূরীকরণে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে ময়ূরশিখা দুভাবে বন্ধ্যত্ব দূরীকরণে ব্যবহার করা যায় : (১) ময়ূরশিখা গাছের চূর্ণ ৬ গ্রাম মাত্রায় পরিমাণমত ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে চেটে চেটে খেতে হবে; (২) ময়ূরশিখা, শিবলিঙ্গী বীজ এবং নাগকেশর চূর্ণ প্রতিটি ৩ গ্রাম মাত্রায় মোট ৯ গ্রাম চূর্ণ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। মাসিক ঋতুর চতুর্থ দিন থেকে পরপর ৭ দিন সকালে উপরোক্ত যোগ দুটির যে-কোনো একটি ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত তা হলে গর্ভধারণ নিশ্চিত বলা যায়। অবশ্য এ যোগ তাদের বেলায় কার্যকর, যাদের গর্ভধারণ-সম্পকীয় কোনো শারীরিক বা ফিজিওলজিক ক্রটি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়েনি, কিন্তু তার পরও গর্ভধারণ হচ্ছে না।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. ড. সামসুদ্দিন আহমদ: ওষুধি উদ্ভিদ (পরিচিতি, উপযোগিতা ও ব্যবহার), দিব্যপ্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, জানুয়ারি ২০১২, পৃষ্ঠা, ৫৩-৫৪।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।