বীজতাড়ক লতা দক্ষিন এশিয়ার ভেষজ প্রজাতি

লতা

বীজতাড়ক

বৈজ্ঞানিক নাম: Argyreia nervosa (Burm.f.) Boj., Hort. 4 Maurit: 224 (1837). সমনাম: Convolvulus nervosis Burm. f. (1768). ইংরেজি নাম: Elephant Creeper. স্থানীয় নাম: বীজতাড়ক, বড় দুধ, হিস্ গন্ধা।

ভূমিকা: বীজতাড়ক (বৈজ্ঞানিক নাম: Argyreia nervosa, ইংরেজি নাম: Elephant Creeper.) হচ্ছে কনভুলবুল্যাসী গোত্রের লতানো ভেষজ প্রজাতি।

অন্যান্য নাম:

বীজতাড়ক লতা-এর বেশ কয়েকটি নাম আছে যেমন- আবেগী, জুঙ্গক, দীর্ঘবালুব, কোটরপুষ্পী, অজান্ত্রী ছাগলান্ত্রিকা, ঋশ্যগন্ধা। বিভিন্ন ভাষায় এর নাম- সংস্কৃতে: বৃদ্ধদারক; হিন্দিতে: বিধারা, ধাবপত্তা, সমুদ্রশোষ; মারাঠী: সমুদ্রশোক; ইউনানী: সমুন্দর সুখ; ইংরেজিতে- Elephant creeper। চরক, বাগভট, চক্রদত্ত, বঙ্গসেন প্রভৃতি গ্রন্থে এর বৈদিক ব্যবহার বর্ণনা করা হয়েছে।

বীজতাড়ক লতা-এর বর্ণনা:

বৃহৎ বল্লী, দুগ্ধবৎ তরুক্ষীর যুক্ত, নিম্নাংশ কাষ্ঠল। ঘন সাদা বা হলুদ রোমশ বা ঘন ক্ষুদ্র কোমল রোমাবৃত। এ পত্র ৮-১৭ X ৭-১৭ সেমি, ডিম্বাকার থেকে বর্তুলাকার, মূলীয় অংশ হৎপিণ্ডাকার, স্থুলাগ্র থেকে সূক্ষ্মাগ্র, অখন্ড, পার্শ্বীয় শিরা ১০ থেকে ১৫টি অষ্টীয় পৃষ্ঠে সুস্পষ্ট।

পুষ্প বিন্যাস ও অক্ষীয় ক্যাপিটেট সাইম, মঞ্জরিদন্ড  লম্বা, শক্ত, ঘন ক্ষুদ্র ডিম্বাকার, দীর্ঘায়ত বা উপবৃত্তাকার লম্বা, দীর্ঘাগ্র, কোমল দীর্ঘ রোমযুক্ত বৃত্যংশ অসম, বাহিরের বৃত্যংশ ২০ x  ১.৫ সেমি, ভিতরের বৃত্যংশ সামান্য ক্ষুদ্রতর, প্রশস্ত উপবৃত্তাকার, সূক্ষ্মাগ্র বা দীর্ঘাগ্র, বহিরাংশ ঘন হলদে ক্ষুদ্র কোমল রোমাকৃত, অভ্যন্তর রোমশ বিহীন।

আরো পড়ুন: বীজতাড়ক লতার ভেষজ গুণাগুণ ও ব্যবহার বিধি

দলমন্ডল ৩.৫-৭.০ সেমি লম্বা, নলাকার থেকে চোঙ্গাকৃতি, বেগুনি লাল থেকে ফিকে নীল, পুংদন্ড মূলীয় অংশে কোমল দীর্ঘ রোম যুক্ত। ফল আড়াআড়ি ২ সেমি, গোলাকার, তা, হলদে – বাদামী। বীজ বাদামী, রোমশ বিহীন । ফুল ও ফল ধারণ মে থেকে ডিসেম্বর মাস।

ক্রমোসোম সংখ্যা : 2n = ৩০ (Fedorjyv, 1969).

বিস্ততি: ভারত থেকে মায়ানমার ও বাংলাদেশের ঢাকা, নোয়াখালী, পটুয়াখালী ও সিলেট জেলায় বিভিন্ন স্থানে।

আরো পড়ুন:  ঝিঙ্গা বা ঝিঙা-এর হচ্ছে সারা বিশ্বে আবাদকৃত একটি সবজি

বীজতাড়ক লতা-এর অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

গাছের মূল মসুর ডাল ও গুড় একত্রে মিশ্রিত করে দুধ বৃদ্ধির জন্য গবাদি পশুকে খাওয়ানো হয় (jain, 1981)

জাতিতাত্ত্বিক ব্যবহার: ভারতের লোধা আদিবাসীরা দুধ বৃদ্ধি করার জন্য তাজা মূল গবাদি পশুকে খাদ্যরূপে সরবরাহ করে। স্নায়ুতন্ত্রের ওপরও মূল প্রভাব বিদ্যমান (Chopra et al., 1956)।

বীজতাড়ক লতা-এর অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের  ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) বীজতাড়ক প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে বীজতাড়ক সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। 

তথ্যসূত্র:

১. বুশরা খান (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৬০। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke

Leave a Comment

error: Content is protected !!