ভূমিকা: মাধুরী লতা (বৈজ্ঞানিক নাম: Combretum indicum ইংরেজি: Rangoon Creeper, Chinese Honey Suckle) এটি কমব্রেটাসিস পরিবারের কমব্রেটাম গণের লতানো গুল্ম।
বর্ণনা: মাধুরী লতা আরোহী গুল্ম, মসৃণ, তরুণ শাখা রোমশ। পাতা কাগজের মতো, উপবৃত্তাকার বা দীর্ঘারত ৫ থেকে ১১ X ২.০ থেকে ৫.৫ সেমি, শীর্ষ দীর্ঘাগ্র, মূলীয় অংশ গোলাকার বা অর্ধমুলাকার, প্রান্ত অখন্ড, শিরা ৫-৬ জোড়া, মসৃণ বা সামান্য রোমশ, বৃন্ত ৩০-১০ মিমি, মরচে রোমশ, বৃন্তীয় কণ্টক বিদ্যমান।
পুষ্প বিন্যাস শীর্ষীয় বা অক্ষীয় স্পাইক, ৪-১০ সেমি লম্বা, কখনও পত্র বহুল প্যানিকেল, মঞ্জরীপত্র ভল্লাকার বা উপবৃত্তাকার, দীর্ঘা, ৬-১০ x ২-৩ মিমি, সাধারণত রোমশ, ক্রমশ ক্ষুদ্রতর এবং উপরের দিক সরু। পুষ্প সুগন্ধী, নিম্নের পুষ্পধার রোমশ, ৪-৫ মিমি লম্বা, ওপরের পুষ্পধার সরু নলাকার, শীর্ষে সামান্য বর্ধিত। বৃতিনল ৪.৫-৮.৫ সেমি লম্বা, অণুরোমশ, আভ্যন্তরীণ কণ্ঠনালী রোমশ, খন্ড বদ্বীপাকাকার বা খাটো ত্রিকোণাকার, ১-২ মিমি লম্বা, শীর্ষ সূক্ষাগ্র। পাপড়ি প্রথমে সাদা পরবর্তীতে গাঢ় লাল, ১০-১৮ X ৪-৮ মিমি, গোলাকার, প্রান্ত-আচ্ছাদী, স্বল্প রোমশ।
পুংকেশর ৪-৭ মিমি লম্বা, বৃতিনল ও পাপড়ি লগ্ন, শীর্ষ মুক্ত, গর্ভাশয় ১-কোষী, ডিম্বক ৩-৪ টি, গর্ভদন্ড ওপরের পুষ্পধারে আভ্যন্তরীণ প্রাচীর লগ্ন, ওপরের অংশ ১২-১৫ মিমি লম্বা পর্যন্ত মুক্ত। ফল ২.৫-৪.০ x ০.৭-১.২ সেমি, গাঢ় বাদামী, আকার ডিম্বাকৃতি উপবৃত্তাকার, রোমশ, গভীর খাঁজযুক্ত এবং ৫-কোণাকার, কোণ চমবৎ এবং পক্ষল।
ফুল ও ফল ধারণ: এই গাছে জানুয়ারি মাস থেকে ফুল ফোঁটা শুরু করে শেষ হয় মে মাসে। ক্রোমোসোম সংখ্যা : 2n = ২২, ২৪, ২৬ (Fedorov, 1969)।
আবাসস্থল ও চাষাবাদ: উদ্যান ও গৃহাঙ্গণে লাগানো হয়। শাখা কলম করে লাগালে নতুন চারা হয়।
বিস্তৃতি: ভারত, ভুটান, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ বাংলাদেশের সর্বত্র এই লতা জন্মে।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্বের দিক: বাহারি উদ্ভিদরূপে সমাদৃত। অন্ত্র কৃমি মুক্ত করার জন্য ভারত ও মালয়েশিয়ায় অর্ধপরিপক্ক ফলের শরবত গ্রহণ করার নিয়ম প্রচলিত। পরিপক্ক ফলের বীজও এই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। পরিপক্ক বীজ নারিকেলের মতো স্বাদ যুক্ত।
অন্যান্য তথ্য: বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) টগর প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে টগর সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।[১]
তথ্যসূত্র:
১. এম কে মিয়া (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২৪৭। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।