ভূমিকা: আকনাদি (বৈজ্ঞানিক নাম: Stephania japonica, ইংরেজি নাম: Stephania, Snake Vine.) হচ্ছে বন বা ঝোপ-ঝারে অযত্নে জন্মানো ভেষজ গুণসম্পন্ন লতানো প্রজাতি।
আকনাদি-এর বর্ণনা:
সরু কোমল কাষ্ঠল আরোহী, কন্দাল মুল অনুপস্থিত, কান্ড এবং শাখা-প্রশাখা সরু এবং সচরাচর মসৃণ। পাতা ছত্রবদ্ধ, পাতলা কাগজবৎ, উভয়পৃষ্ঠ মসৃণ কিন্তু কখনও কখনও নিম্নপৃষ্ঠে পত্রবৃন্তের সন্নিবেশ স্থানের চতুপার্শ্ব বিক্ষিপ্তভাবে অণুরোমশ, স্থূল ত্রিকোণাকার, ডিম্বাকার-দীর্ঘাগ্র, বিভিন্ন আকারের, সচরাচর ৩-১২ x ২৯ সেমি, শীর্ষ তীক্ষ্ণ-দীর্ঘাগ্র বা স্থূলাগ্র এবং সূক্ষ্ম খর্বাগ্রবিশিষ্ট, নিম্নপ্রান্ত প্রায় গোলাকার, কখনও কিছুটা হৃৎপিণ্ডাকার, কিনারা অখন্ড, শিরাবিন্যাস জালিকাকার। এবং উভয়পৃষ্ঠে দৃশ্যমান, পত্রবৃন্ত ২.৫-৯.০ সেমি লম্বা, কোঁকড়ানো রোমাবৃত।
আরো পড়ুন: আকনাদি বা দই পাতা বা মাকান্দি বা আকন্দি লতার সাতটি ভেষজ গুণ
পুষ্পমঞ্জরী কাক্ষিক, যৌগিক ছত্রমঞ্জরীবৎ স্তবক, সচরাচর প্রতি কক্ষে একটি মাত্র। মঞ্জরীদন্ড জন্মায়, ৩-৬ সেমি লম্বা, অণুরোমশ, পুষ্প ঘন এবং মুণ্ডাকার বা উপমুণ্ডাকার। পুং পুষ্প: সবুজাভ-সাদা বা হালকা হলুদ, অবৃন্তক বা প্রায় অবৃন্তক, বৃত্যংশ ৬-৮টি, উল্টা ভল্লাকার থেকে চমসাকার, ০.৭-১.৭ মিমি লম্বা, মসৃণ অথবা বাইরের পৃষ্ঠ অণুরোমশ, পাপড়ি ৩-৪টি, উল্টা ব-দ্বীপাকার থেকে উপবর্তুলাকার, ০.৫-১.০ মিমি লম্বা, মসৃণ, পুংকেশরগুলো ছত্রবদ্ধ যুক্ত পুংকেশর, ০.৭-১.২ মিমি লম্বা। স্ত্রী পুষ্পমঞ্জরী কমবেশী পুং পুষ্পমঞ্জরীর অনুরুপ।
স্ত্রী পুষ্প: বৃত্যংশ এবং পাপড়ি কমবেশী পুং পুষ্পের অনুরূপ, কখনও বৃত্যংশের সংখ্যা পুং পুষ্প থেকে কম, গর্ভপত্র ১টি, ০৭-১.০ মিমি লম্বা, নিরেট ডিম্বাকার, গর্ভমুণ্ড খর্বাকারে খন্ডিত। ড্রপ হালকা হলুদ থেকে কমলালাল, মসৃণ, ৬-৭ X ৫-৬ সেমি (শুষ্ক নমুনায়), মোটামুটি বি-ডিম্বাকার, সচরাচর অবৃন্তক অথবা ২ মিমি পর্যন্ত লম্বা বৃন্তবিশিষ্ট, অন্তস্তক ৫-৭ X ৪.৫-৬.০ সেমি, সচরাচর ছিদ্রযুক্ত, পৃষ্ঠদেশে অনুদৈর্ঘ্য বরাবর ২ সারি উল্লম্ব শৈলশিরা বর্তমান, গুটিকাগুলোর মাঝখানে এবং চতুর্পাশ্বপৃষ্ঠ সচরাচর মসৃণ এবং কদাচিৎ রুক্ষ।
ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২২ (Fedorov, 1969).
আকনাদি-এর আবাসস্থল:
চিরহরিৎ, অর্ধচিরহরিৎ অথবা পত্রঝরা অরণ্য, অবণ্যের প্রান্ত, গুল্ম অরণ্য, নদীর পাড়, গ্রাম্য ঝোপ-ঝাড় এবং বেড়ারুপী উদ্ভিদ হিসেবে। ফুল ও ফল ধারণ জানুয়ারী-ডিসেম্বর মাস। বংশ বিস্তার বীজ দ্বারা হয়।
বিস্তৃতি: ভারত, নেপাল, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, মালয় দ্বীপপুঞ্জ, অস্ট্রেলিয়ার গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চল এবং আফ্রিকা। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই ইহা পাওয়া যায়।
অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব: ইহার শিকড় তিক্ত স্বাদবিশিষ্ট, কোষ্ঠবদ্ধতাকারী এবং জ্বর, ডায়রিয়া, অজীর্ণতা ও মূত্রাশয়ের অসুখে ব্যবহৃত হয় (Chopra, 1956).
অন্যান্য তথ্য:
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) আকানাদি প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে আকানাদি সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটির বর্তমানে সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই।
তথ্যসূত্র:
১. এম কে মিয়া (আগস্ট ২০১০) “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। খন্ড ৯ম, পৃষ্ঠা ১৩৩-১৩৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Krish Dulal
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।