সোনাতোলা বা রাঙ্গাজাত পাহাড়িঞ্চলে জন্মানো ভেষজ উদ্ভিদ

উদ্ভিদ

সোনাতোলা বা রাঙ্গাজাত

বৈজ্ঞানিক নাম: Diploclisia glaucescens (Blume) Diels in Pflanz. Menisp.: 225 (1910), সমনাম: Cocculus glaucescens Blume (1825), ইংরেজি নাম: Glaucescent Diploclisia. স্থানীয় নাম: সোনাতোলা, রাঙ্গাজাত পাতালপুর।
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae. বিভাগ: Angiosperms. অবিন্যাসিত: Eudicots. বর্গ:  Ranunculales. পরিবার: Menispermaceae. গণ: Diploclisia প্রজাতির নাম: Diploclisia glaucescens.

ভূমিকা: সোনাতোলা (বৈজ্ঞানিক নাম: Diploclisia glaucescens) এক প্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে সর্বত্রে জন্মে।

সোনাতোলা বা রাঙ্গাজাত-এর বর্ণনা:

কাষ্ঠল আরোহী, কান্ড ২০ সেমি পর্যন্ত ব্যাসবিশিষ্ট, কচি অবস্থায় সুক্ষ্ম রেখা সম্বলিত, মসৃণ। পাতা সাধারণত চর্মবৎ, ছত্রবদ্ধ নয়, স্থুল ডিম্বাকার থেকে উপবর্তুলাকার, ৪-১০ x ৪-১০ সেমি, শীর্ষ গোলাকার থেকে তীক্ষ্মা, নিম্নপ্রান্ত গোলাকার থেকে হৃৎপিণ্ডাকার, কিনারা প্রশস্ত এবং অগভীরভাবে সভঙ্গ, শিরাগুলো নিম্নপ্রান্ত করতলা আকার, পত্রবৃন্ত ৪-১২ সেমি লম্বা, মসৃণ। পুষ্পমঞ্জরী কান্ড থেকে উদ্ভুত, ৫০ সেমি (প্রায়) লম্বা।

পুং পুষ্প: হালকা হলুদাভ, সবৃন্তক, বৃন্তিকা ২-৪ মিমি লম্বা, নিম্নপ্রান্তে ১টি বা ২টি ক্ষুদ্রাকার মঞ্জরীপত্র বর্তমান যা ০.৫-১.০ মিমি লম্বা, বৃত্যংশ ৬টি, বি-ডিম্বাকার, ২.০-২.৫ মিমি (প্রায়) লম্বা, বাইরের ৩টি উপবৃত্তাকার, ভেতরের ৩টি স্থুল উপবৃত্তাকার, বৈশিষ্ট্যসূচক গাঢ় বাদামী শিরা বর্তমান, পাপড়ি ৬টি, বিডিম্বাকার, রম্বসাকার, শীর্ষ তীক্ষ বা খাতাগ্র, ১ মিমি লম্বা, পুংকেশর ৬টি, ১.৫-২.০ মিমি লম্বা, পরাগধানী উল্লম্ব ফালি আকারে বিদারিত হয়।

স্ত্রী পুষ্প: বৃত্যংশ এবং পাপড়ি পুং পুষ্পের অনুরূপ, বন্ধ্যা পুংকেশর ৬টি, সূত্রাকার, গর্ভপত্র ২ মিমি লম্বা। ফল ড্রপ, হলুদ থেকে কমলা, ১৪-২২ x ৮-১৩ মিমি, কিছুটা বক্র, অন্তস্তক ১২-১৪ x ৮-৯ মিমি, প্রলম্বিত, পৃষ্ঠদেশে অনেকগুলো উল্লম্ব শৈলশিরা থাকায় চিত্রবিচিত্রিত, পৃষ্ঠীয় মধ্য শৈলশিরা অনুপস্থিত।

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার:

চিরহরিৎ অথবা অর্ধচিরহরিৎ অরণ্য। ফুল ও ফল ধারণ সময়কাল মার্চ থেকে জুলাই। বংশ বিস্তার হয় বীজ এবং পুরাতন কর্তিত গুড়ি দ্বারা।

আরো পড়ুন:  গামার বা গামারি গাছের ভেষজ গুণাগুণ

বিস্তৃতি:

ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া (সুমাত্রা এবং জাভা) এবং ফিলিপাইন। বাংলাদেশে ইহা বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জেলায় পাওয়া যায়।

জাতিতাত্বিক ব্যবহার: পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জেলার আদিবাসীরা সমগ্র উদ্ভিদটি শিশুদের জ্বরে ব্যবহার করে থাকে।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৯ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) সোনাতোলা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, উদ্ভিদের আবাসস্থান ধ্বংসের কারণ বাংলাদেশে এটি সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে সোনাতোলা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে এই প্রজাতিটি অরণ্যাঞ্চলে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র:

১. এম কে মিয়া (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস” আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৯ম (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১২৫-১২৬। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: L. Shyamal

Leave a Comment

error: Content is protected !!