অনন্তমূল লতার বিস্তার ভারতের প্রায় সব প্রদেশেই অল্পবিস্তর আছে; তবে প্রদেশ ভেদে পাতার আকারের ইতর বিশেষ হলেও তার মাঝখানের শিরা বরাবর যে সাদা দাগ আছে, সেটা সব ক্ষেত্রে থাকবেই। ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয় গাছের মূল; তবে মূল সরু কি মোটা নির্ভর করে গাছের বয়সের উপর। এই গাছের মূলে একটা বিশেষ গন্ধ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Hemidesmus Indicus R. Br. পরিবার Apocynaceae. নিম্নে এই উদ্ভিদের লৌকিক ব্যবহারে উল্লেখ করা হলো।
১. লাবণ্যতা: যৌবন থাকতেও যেন নেই, লাবণ্য কমে গিয়েছে, ভাল ক্ষুধা হয় না, এক্ষেত্রে অনন্তমূল চূর্ণ ১ থেকে ২ গ্রাম মাত্রায় সিকি কাপ গরম দুধ ও একটু মিছরির গুড়া মিশিয়ে খেতে হয়। এর দ্বারা ওসব অসুবিধাগুলি চলে যায়।
২. অর্শরোগ: ৩ গ্রাম আন্দাজ অনন্তমূল জলে বেটে দুধের সঙ্গে জ্বাল দিয়ে সেই দুধ দই পেতে পরের দিন সকালে খেতে হবে। এর দ্বারা আহারের রুচি হবে ও ক্ষুধা বাড়বে, তার সঙ্গে অর্শেরও উপশম হবে।
৩. হাত পায়ের জ্বলায়: শরৎকালে পিত্তবিকারে যাঁদের দেহ জ্বালা করে, তাঁরা ৩ গ্রাম আন্দাজ অনন্তমূল জলে বেঁটে চিনি দিয়ে সরবত করে খেতে হবে। এর দ্বারা জ্বালা ও দোষগুলো আর থাকবে না।
৪. অরুচিতে: যাঁদের বিকৃত পিত্ত শ্লেষ্মার চাপা আছে, এরই জন্যেই হয় অরুচি ও অগ্নিমান্দ্য, গা বমি বমি ভাব এক্ষেত্রে অনন্তমূল থেতো করে গরম জলে ভিজিয়ে সকালে ছেঁকে নিয়ে জলটা খাওয়া। এর দ্বারা ঐ দোষগুলি চলে যাবে।
৫. একজিমা ও হাঁপানী: দুটাই আছে, এক্ষেত্রে অনন্তমূল ৩ গ্রাম আন্দাজ জলে বেটে অল্প সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে সরবতের মতো দুই বেলা খেতে হবে; অবশ্য বয়সানুপাতে অনন্তমূল কমাতে হয়। তবে সৈন্ধব লবণটা যেন আসল হয়।
৬. খসখসে কাসি: অনন্তমূল চূর্ণ দেড় গ্রাম মাত্রায় সকালে ও সন্ধ্যায় দুবার খেতে হবে। এটাতে উপশম হয়।
৭. অনিয়মিত ঋতুস্রাবে: এ ক্ষেত্রকে আয়ুর্বেদের ভাষায় বলা হয় রক্তপ্রদর। এ রক্তে অনেক সময় দুর্গন্ধও থাকে। এক্ষেত্রে ৩ গ্রাম আন্দাজ অনন্তমূল বেঁটে সকালে ও বিকালে দুধ বা জল সহ খেতে হবে। এসব প্রাচীন বৈদ্যগণের অভিজ্ঞতার ফসল।
৮. ঘামের দুর্গন্ধ দূরে করতে: গায়ের যেখানে সেখানে ঘামে দুর্গন্ধ হয়। এই ক্ষেত্রে অনন্তমূল বেঁটে অল্প ঘি মিশিয়ে গায়ে মাখতে হয়। তার খানিকক্ষণ পরে স্নান করতে হয়। এটাতে ঐ দোষটি চলে যায়।
৯. বাতরক্তে: গায়ে যেন কি চরে বেড়াচ্ছে, তার সঙ্গে থাকে যে কোনো অঙ্গে মাঝে মাঝে সঙ্কোচন; এক্ষেত্রে শুধু অনন্তমূল লতার মূলের ক্বাথ বেশ কিছুদিন খেতে হয়। এর দ্বারা ঐ দোষটি চলে যায়।
১০. আমাশয়: অনন্তমূলের চূর্ণ মধু সহ খেলে প্রশমিত হয়।
১১. স্তন্যহ্রাসে: অনন্তমূলের ক্বাথ সেবনে স্তনে দুগ্ধ বাড়ে।
১২. উপদংশের ক্ষতে: অনন্তমূলের ক্বাথ দিয়ে ঘা ধুলে ঘা শুকিয়ে পুরে ওঠে।
১৩. খোস পাচড়ায়: অনন্তমূলের চূর্ণ ১ থেকে ২ গ্রাম মাত্রায় অথবা তার ক্বাথ সেবনে সুফল পাওয়া যায়। ঐ সঙ্গে অনন্তমূলের ক্বাথ দিয়ে ধুলে সত্বর ফল পাওয়া যাবে।
১৪. জিহ্বার ক্ষতে: ভেড়ার দুধ দিয়ে অনন্তমূল ঘষে লগালে ওটা উপশমিত হয়। বিশেষতঃ শিশুদের জিহ্বার ক্ষতে বিশেষ উপকার হয়।
১৫. পাথুরী রোগে: গাভীর দুধ দিয়ে অনন্তমূল বেঁটে খাওয়ালে এই রোগটির যন্ত্রণা অচিরেই লাঘব হবে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য: ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৪, পৃষ্ঠা,৫৩-৫৬।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Paryavarana Margadarsi Vaisakhi
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।