আসাম লতা বা জাপান লতা আগ্রাসী ও ভেষজ গুণসম্পন্ন প্রজাতি

সাধারণতঃ পশ্চিম বঙ্গ, আসাম, দক্ষিণ ভারতের কোনো কোনো স্থানে এই লতাটিকে দেখতে পাওয়া যায়। এটি এক বা একাধিক বৎসর বাঁচে। বীজ থেকে গাছ বেরোয়। সাধারণতঃ কোন না কোন গাছকে আশ্রয় করে জড়িয়ে উঠে যায় এবং ছোট আকারের হলে তার সর্বনাশ ক’রে ছাড়ে।

পরিচিতি

এই গাছটির পাতা ও ডাঁটা (লতা) গবাদি পশুর প্রিয় খাদ্য। পাতা হৃৎপিণ্ডাকৃতি কিংবা ডিম্বাকৃতি, কিনারা কখনো সমান, কখনো-বা ঢেউ খেলানো। পাতার বোঁটা বেশ লম্বা, বর্ণ কখনো গাঢ়, কখনো-বা ফিকে সবুজ। মাটির উর্বরতার উপর নির্ভর করে গাছটি ও তার পাতার আকৃতি ছোট-বড় হয়ে থাকে। জলের ধারে হলে জাপানি লতার শিকড় জল থেকে অতি সহজে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে, তখন তার বৃদ্ধিও হয় অত্যধিক। এই বৃদ্ধি এবং তার ক্ষতি করার প্রবণতার জন্য হয়তো-বা রাবণ লতা নামকরণ। লতার উভয় দিকে পাতা থাকে, পাতার কোল থেকে পুষ্পদণ্ড বেরোয়।

পুষ্পদণ্ডটি শাখাযুক্ত হওয়ায় এবং এক একটি শাখাতে তিন চারটি করে ফুল থাকার জন্য মনে হয় এক সাথে অনেক ফুল ফুটে আছে। ফুলের রং সাদা অথবা সাদা রং নোংরা বা ময়লা হলে যেমন হয় তেমনটা। ফল পাঁচ কোণা, এরূপ ফলকে উদ্ভিদবিজ্ঞানীগণ একিন (Achenes) বলে থাকেন।

আসাম লতা বা জাপান লতা-এর আবাস

জাপানি লতার বৃদ্ধি অতি দ্রুত, সবুজ পাতার সঙ্গে এমন মিশে যায় যে, হঠাৎ বোঝা যায় না। এ ছাড়া যেহেতু বর্ষাকালে এর অধিক বৃদ্ধি, সেহেতু অলক্ষে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনাও অধিক। সতর্ক না থাকলে এর দ্বারা অন্য চারা গাছের নানা রকম ক্ষতি হয় কিংবা মরে যাবার সম্ভাবনাই অধিক। তবে এটি যেখানে মাটিতে বেয়ে বেয়ে যায়, সেখানকার মাটির ক্ষয় রোধ করে। শাল ও চা গাছের শত্রু এই লতাটি। গ্রাম বাংলায় এটি যেকোন গাছেই উঠে পড়ে এবং সেই গাছের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে থাকে। সুতরাং জাপানি লতার হাত থেকে অন্য গাছকে রক্ষা করতে হলে যেসব স্থানে এটি জন্মে, সেসব স্থানের লোকেদের সতর্ক হতে হবে।

আরো পড়ুন:  আকন্দফল বাংলাদেশে জন্মানো আরোহী ভেষজ উদ্ভিদ

গুণপনা

জাপান লতা বা আসাম লতা-র (Mikania micrantha) পাতা আফ্রিকার কোন কোন অংশের লোকে রান্না করে খেয়ে থাকেন। পাতাটি কারও কারও ক্ষেত্রে এলার্জিকারক। অবশ্য সংখ্যায় তা অতি সামান্য। পাতার রস রক্তরোধক, বেদনানাশক, চুলকানি ও ক্ষতে ব্যবহার করা হয়। লতাটির পাতা ও ডাঁটা থেকে যেসব উপাদান পাওয়া যায়, তা হলো—প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বহাইড্রেটস্, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন— এ, বি, সি প্রভৃতি। তবে ভিটামিন এ এবং সি অধিক পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র:

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ২৯৫-২৯৬।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Ks.mini

Leave a Comment

error: Content is protected !!