করলা পৃথিবীর গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলের জন্মানো ভেষজ সবজি

সবজি

করলা

বৈজ্ঞানিক নাম: Momordica charantia L. var. charantia C. B. Clarke in Hook. f., Fl. Brit. Ind. 2: 616 (1879). সমনাম: Momordica indica L. (1754), Momordica elegans Salisb. (1796). ইংরেজি নাম: Bitter Melon. স্থানীয় নাম: করলা। জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae – Plants শ্রেণী: Eudicots উপশ্রেণি: Rosids বর্গ: Cucurbitales পরিবার: Cucurbitaceae উপপরিবার: Cucurbitoideae গণ: Momordica L.

করলা গাছের বিবরণ:

করলা হচ্ছে কিউকারবিটাসি (শসা লাউ) পরিবারের মমরডিকা গণের একটি বর্ষজীবী আরোহী বীরুৎ। এদের কান্ড শাখান্বিত, রোমশ, ১-২ মিটার লম্বা। আকর্ষ প্রায় ২০ সেমি লম্বা, রোমশ, সরল। পত্র বৃক্কাকার বা অর্ধ-গোলাকার, ৪-১২ সেমি লম্বা। এবং ৪-১২ সেমি প্রশস্ত, উভয় পৃষ্ঠ রোমশ বিহীন, সুস্পষ্ট শিরাযুক্ত, ৫-৭ খন্ডিত, খন্ড ডিম্বাকার দীর্ঘায়ত, মূলীয় অংশ রোমশ বিহীন। উদ্ভিদ সহবাসী।

পুংপুষ্প:একল, মঞ্জরীদন্ড সরু, রোমশ বিহীন, মঞ্জরীপত্র ফলকাকার, ৫-১৫ x ৫-১৫ মিমি, বৃক্কাকার বা গোলাকৃতি তাম্বুলাকার, অখন্ড, খাটো রোমশ, বৃতিখন্ড ডিম্বাকৃতি ভল্লাকার, সাদা রোমযুক্ত, ৪-৬ X ২-৩ মিমি, দলমন্ডল হলুদ, খন্ড বিডিম্বাকার, স্থূলাগ্র বা খাজযুক্ত, ১৫-২০ x ৮-১২ মিমি, রোমশ।

স্ত্রী পুষ্প: মঞ্জরীদন্ড ৫-১০ সেমি লম্বা, প্রায়শ সহপত্রী, বৃতি ও দলমন্ডল পুংপুষ্পের বৃতি ও দলমন্ডলের অনুরূপ, গর্ভাশয় মূলকাকার, ঠোটযুক্ত, গর্ভদন্ড সরু, গর্ভমুন্ড ২-খন্ডিত। ফল বৃহৎ, ৮-২০ সেমি লম্বা, উভয় প্রান্ত অসংকুচিত, গুটিকাকার, দীর্ঘায়ত, ৩টি কপাটিকা যুক্ত। বীজ অসংখ্য, চাপা, পৃষ্ঠ কারুকার্যকৃত। ফুল ও ফল ধারণ ঘটে মে থেকে অক্টোবর মাসে।

ক্রোমোসোম সংখ্যা: 2n = ২২ (McKay, 1930).

আবাসস্থল: জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ মাটি। ক্রলার বীজে বংশ বিস্তার হয়।

বিস্তৃতি:

গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলে বন্য রূপে ও চাষাবাদীরূপে জন্মে, ইন্দোমালয়ে প্রচুর দেখা যায়। ভারতের উত্তর অঞ্চলে এবং চীনের দক্ষিণ অঞ্চলে প্রথম গৃহে চাষাবাদ শুরু হয়। বাংলাদেশের সর্বত্র চাষ করা হয়।

করলা-র অর্থনৈতিক ব্যবহার ও গুরুত্ব:

করলার ফল সবজিরূপে খাওয়া হয়। ফল টনিক ও বায়ুরোধক, বাত, বহুমূত্র, রোগে ব্যবহার্য এবং যকৃৎ ও প্লীহার পীড়া নিরাময়ে কার্যকর। উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ থেকে সংগৃহীত রস চর্ম রোগে বাহ্যিক প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া এই রস গ্রন্থিবাত, বাতের বেদনা, হাঁপানিও নিরাময় করে।

আরো পড়ুন:  তেলাকুচা লতার তেরোটি ঔষধি গুণাগুণ ও ব্যবহার

জাতিতাত্বিক ব্যবহার:

ফিলিপাইনে তরুণ বিটপ, পুষ্প ও ফল খাদ্য দ্রব্য সুগন্ধ ও রুচিকর করার জন্য খাদ্যে মিশান হয় এবং পাতা সবজিরূপে খাওয়া হয়। ভারতের কয়া ও বাল্মিকী আদিবাসী সম্প্রদায় মূলের ক্বাথ পাকস্থলীর ঘা নিরাময়ে ব্যবহার করে। ঐ দেশের কুন্ডা ও সাভারাস আদিবাসী সম্প্রদায় পাতার রস খাদ্য শস্যের দানার সাথে মিশিয়ে অসুস্থ হাঁস মুরগীদের খাওয়ানো হয়।

অন্যান্য তথ্য:

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ৭ম খণ্ডে (আগস্ট ২০১০) করলা প্রজাতিটির সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এদের শীঘ্র কোনো সংকটের কারণ দেখা যায় না এবং বাংলাদেশে এটি আশঙ্কামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে করলা সংরক্ষণের জন্য কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রজাতিটি সম্পর্কে প্রস্তাব করা হয়েছে যে শীঘ্র সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র:

১. এম অলিউর রহমান, (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৭ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩২১-৩২২। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

Leave a Comment

error: Content is protected !!