পরিচিতি: পদ্ম গুলঞ্চ বা গুলঞ্চ বা গুড়ুচ (বৈজ্ঞানিক নাম: Tinospora crispa) হচ্ছে মেনিস্পারমাসি পরিবারের টিনোস্পোরা গণের একটি লতানো সপুষ্পক উদ্ভিদ। এই লতার আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এটি ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ও মায়ানমারে সহজে পাওয়া যায়। এই গুলঞ্চের পাতাও ঘোড়া গুলঞ্চের মতো পানের আকার, তবে একটু বড়। এর পাতার রস অধিক তিক্ত যে কারণে উপকারিতাও বেশি।[১] এদের লতার গায়ে ঘন বুটি থাকে; পদ্মবীজের চাকায় যেমন থাকে সেইরকম। এই লতাগাছের পাতাগুলি রোমশ নয়।
আরো পড়ুন: গুলঞ্চ লতার ঔষধি গুণাগুণ
এই বৃক্ষারোহী গাছ কখন কখন গ্রামের বেড়ায় দেখা যায়। প্রাচীন কালে এদের ব্যবহার ছিল সীমিত ও সাধারণ। কখনো জ্বর হলে এর পাতা ভাজি করে খাওয়ানো হয়েছে বা লতার কাণ্ড ছেঁচে রস করে খাওয়ানো হয়েছে রোগীকে। শিশুদের বুকের দুধ ছাড়ানোর জন্যে এর পাতার তিক্ত রস ব্যবহার করা হয়েছে, অরুচিতে চিবোনো হয়েছে এর পাতা। তবে চরক আমল থেকে এদের ব্যবহার ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের জ্ঞান আমাদের এই লতার উপযোগিতা সম্পর্কে ধারণা বিস্তৃত করেছে নিঃসন্দেহে।
প্রায় ১২ হাজার বছর আগে থেকে আমরা যখন বনজঙ্গলের কঠিন জীবন থেকে খাদ্য বাসস্থান, পোশাকের সহজ সংস্থান এবং নিরাপত্তার জন্যে শহর পত্তন করেছি তখন আমাদের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি বয়ে এসেছে কিছু অনাদুরে পাখি যেমন, কাক চিল চড়ুই। কিছু অপাংক্তেয় গুল্মলতাও যেন এসেছে আমাদের সঙ্গে যা এখনও বাস করে আমাদের সমান্তরালে, যাদের দেখতে পাই ফুটপাথ-সংলগ্ন দেয়ালে, পরিচর্যাহীন জায়গায়, ঝোপঝাড়ে, আমগাছ নিমগাছের সঙ্গে। সেই লতাদের অন্যতম একটি হল গুলঞ্চ লতা, শীতকালে যার পাতা ঝরে যায়, বসন্তে সমাগম। এহেন লতা যেন চোখেই পড়তে চায় না আমাদের, আগাছা ভেবে আমরা চিরকাল অবজ্ঞাই করে এসেছি এদের, উপকারিতা এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব বুঝে উঠতে পারিনি।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৬৭-১৭১।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।