দুরালভা লতা-র নানাবিধ উপকারিতা ও প্রযোগ

দুরালভা লতা অযত্নে বেড়ে ওঠে। শুষ্ক উর্বর ভূমিতে এবং নদীর ধার বরাবর গাঙ্গেয় উপত্যকা অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভেষজটি উৎপন্ন হয়। এই ক্ষুপজাতীয় উদ্ভিদটি প্রচুর কাঁটাযুক্ত, কাঁটাগুলি ১ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা, সেই কাঁটার গোড়া থেকে বেরোয় ছোট ছোট আয়তাকার পাতা, সেগুলি থাকে অবনতভাবে। ঐ কাঁটার গোড়া থেকেই বেরোয় ফুল, বর্ণ লাল, ১ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। গ্রীষ্মের প্রখর তাপে বেশীরভাগ গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ যখন শুকিয়ে যায় বা মরে যায়, তখন এটির পাতা ও ফুল হয়, ফল হয় সেই শীতকালে, ফলগুলি প্রায় ১ ইঞ্চি লম্বা। পশ্চিমবঙ্গে এর গাছ বড় একটা দেখা যায় না। ফুলে হলেই গাছগুলি বীর্যবান হয়। এই গাছ থেকে একপ্রকার নির্যাস বেরোয়, যাকে যাসশকরা বা মান্না বলে, সেটি মিষ্ট স্বাদের।

এটিকে সংস্কৃতে দুর্লভা, দুরালভা, সমুদ্রান্ত, গিরিকর্ণিকা যবাস; বাংলায় দুরালভা, হিন্দীতে যবসা, যবাসা বলে। বর্তমানে এর বোটানিক্যাল নাম Alhagi pseudalhagi (Bieb.) Desv., পূর্বে নাম ছিল Alhagi camelorumAlhagi maurorum., পরিবার Leguminosae. ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ—সমগ্র গাছ ও ফুল।

দুরালভা লতা-র গুণাগুণ:

১. জ্বরে: তার সঙ্গে বমি ও মাথার যন্ত্রণা হয়। এক্ষেত্রে দূরালভা ২০ গ্রাম থেতো করে ৪। ৫ কাপ জলে সিদ্ধ করার পর আন্দাজ ২ কাপ থাকতে নামিয়ে কিছুক্ষণ অন্তর ৫। ৬ বারে ওই জলটা একটু একটু করে খাওয়ালে দুই-এক ঘণ্টার মধ্যেই সব উপসর্গ কমে যাবে।

২. পিত্তজ্বরে: এই জ্বরের ক্ষেত্রেই উপরিউক্ত মাত্রায় ও নিয়মে ক্বাথ করে ওইভাবে খাওয়ালে পিত্তজ্বরের উপসর্গগুলি কমে যাবে।

৩. তৃষ্ণায়: এক্ষেত্রেও দুরালভা ২০। ২৫ গ্রাম ভালভাবে থেতো করে ৭। ৮ কাপ গরম জলে ৫। ৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর সেটা ছেকে সিকি কাপ করে কয়েকবার খাওয়ালে পিপাসা আর থাকবে না।

৪. বাতরক্তে: এই রোগের হয়েছে বুঝতে পারলে বেশ কিছুদিন দুরালভা ভিজানো জল খেতে হবে। দুরালভা ১৫। ২০ গ্রাম থেতো করে প্রায় এক লিটার গরম জলে ১০। ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর ছেকে সেই জলটা সমস্তদিনে খেতে হবে।

আরো পড়ুন:  লাল পাতা চুকাই বা লাল পাতা মেস্তা হচ্ছে হিবিস্কাস গণের সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতি

৫. ভ্রম রোগে: যারা ভুলে যাওয়া রোগে আক্রান্ত সেই ক্ষেত্রে। এ রোগটা কেবল বয়সের বার্ধক্যেই যে হয় না তা তো প্রত্যক্ষ করা যায়। প্রচুর চিন্তা, নানান বিষয়ে দায়িত্ব নিয়ে কাজ সমাধা করায় যাঁরা ব্যাপত থাকেন, তাঁরা অন্ততঃ সপ্তাহখানেক দুরালভা ভিজানো জল খাওয়ার অভ্যাস করে দেখুন। দুরালভা ১৫। ২০ গ্রাম, ১ লিটার গরমজলে ভিজিয়ে ৪। ৫ ঘণ্টা বাদে তাঁকে ছেকে ওই জল সমস্তদিনে বারে বারে খেতে হবে।

৬. মেদোবৃদ্ধিতে: দেহটা ক্রমেই ভারী হচ্ছে, বিশেষ করে রমণীর, ওদের কোমরের শেষের দিকটা (পিছন সামনে দু’দিকেই), সামনের উপরের অংশটা সব দিকেই বেশ ভর-ভরান্তি; এক্ষেত্রে দুরালভা ২০। ২৫ গ্রাম থেতো ক’রে ৩। ৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর ৪৷৫ কাপ জলে সিদ্ধ করে আন্দাজ ২ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছে’কে, সেই জলটা প্রত্যহ বেলা ৯। ১০টার সময় খেতে হবে। এর দ্বারা মেদ অবশ্যই গলতে শুরু করবে।

৭. কাসিতে: বিশেষ করে বায়ু-পিত্তের কাসি, যাকে বলে পেট গরমের কাসি। সেক্ষেত্রে দুরালভা ১৫। ২০ গ্রাম ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে (প্রথমে থেতো করে, ঘণ্টা তিনেক ভিজিয়ে রেখে, তারপর সিদ্ধ করতে হবে) আন্দাজ এক কাপ থাকতে নামিয়ে সকালের দিকে অর্ধেকটা এবং বৈকালের দিকে বাকী জলটা খেতে হবে। এর দ্বারা দিন দুই-এর মধ্যে কাসি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।

৮. মদের নেশা: ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছে, কিন্তু কোন রকমে তাকে ছাড়া যাচ্ছে , অর্থাৎ তার নেশাটা কেটে গেলে আবার সেই অবস্থা সে ফিরে পেতে চায়, এইটা কাটাতে দুরালভা তাকে সাহায্য করে অর্থাৎ সেই নেশা করার প্রবণতাকে সরিয়ে দিতে পারে, যাকে বলে তার পান করার তৃষ্ণা সেটা আর থাকবে না, বস্তুশক্তির এইটাই বৈশিষ্ট্য। দুরালভা ২৫ গ্রাম ভালভাবে থেতো করে এক সের জলে সিদ্ধ করার পর আন্দাজ আধসের থাকতে নামিয়ে, ছেকে, সেই জলটা সমস্তদিনে ৩। ৪ বারে খেতে হবে। এইরকম ১০।১৫ দিন খেলে ওটা খাওয়ার ইচ্ছে চ’লে যাবে।

আরো পড়ুন:  মিষ্টি কুমড়া বাংলাদেশে জন্মানো জনপ্রিয় ও সহজলভ্য সবজি

বাহ্য প্রয়োগ

৯. ক্ষতে: একে চলতি কথায় বলে থাকি ঘা হয়েছে। যেকোন ঘায়ে অথবা পচা ঘায়ে, দুরালভার ক্বাথ দিয়ে ধোওয়ালে ওটা তাড়াতাড়ি পরে ওঠে। তবে ক্বাথটা একটু ঘন হওয়া দরকার। ৫।৭ গ্রাম গাছকে সিদ্ধ করে সেটা ছেকে একটু ঘন ক’রে নিতে হবে।

CHEMICAL, COMPOSITION

Alhagi pseudalhagi Desv.

It contains mostly sugars:— Melizitose 47.1%; sucrose 26.4% and inverted sugar 11.6%.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩, পৃষ্ঠা, ২৩১-২৩২।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: איתן פרמן

Leave a Comment

error: Content is protected !!