ইশ্বরমূল বা রুদ্রজটা লতার ছয়টি ভেষজ গুণাগুণ

ইশ্বরমূল বা রুদ্রজটা লতানে গুল্ম। এরা মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে বাড়ে। বেড়া বা গাছে যে ওঠে না তা নয়। কাণ্ডের গোড়া খুব শক্ত। পাতার অগ্রভাগ সরু, কিন্তু মাঝখানটায় একটু চাপা। বোঁটা এক তৃতীয়াংশ বা দ্বিতীয়াংশ ইঞ্চি লম্বা ও বাঁকা। পুষ্পনলের গঠন অনেকটা শাবলের মতো, অগ্রভাগ বক্র ও ঈষৎ ধূসর বর্ণ।

ফল ১ ইঞ্চি লম্বা ও সবুজ বর্ণের, বীজকোষ গোলাকার কিন্তু খাঁজ কাটা। বীজ চ্যাপ্টা ত্রিকোণাকার ও পক্ষ্মযুক্ত। সাধারণতঃ বর্ষাকালে ফল ও ফল হয়। এই লতগাছটি ভারতের সব অঞ্চলেই অল্প-বিস্তর পাওয়া যায়। এর সংস্কৃত নাম রুদ্রজটা, বাংলা ও হিন্দীতে ঈশের মূল নামে পরিচিত। বোটানিক্যাল নাম Aristolochia indica Linn. ফ্যামিলি Aristolochiaceae.

ইশ্বরমূল বা রুদ্রজটা ঔষুধ হিসাবে ব্যবহার:

এটি প্রধানভাবে কাজ করে রসবহ এবং রক্তবহ স্রোতে। এই লতার ব্যবহার্য অংশ পাতা ও মূল।

১. কম্পজ্বরে: এটা অনেক কারণে হ’তে পারে- যেমন ম্যালেরিয়া জ্বরে, ফাইলেরিয়ায়, প্রচণ্ড রোদ (রৌদ্র) থেকে এসে ঠাণ্ডা জলে স্নান, হঠাৎ কোন কারণে অতিসার হয়েছে, অথচ তার নিবৃত্তি হয়নি, সেই অবস্থায় ঠাণ্ডা জলে স্নান, ঠাণ্ডা লাগানো, আবার দীর্ঘদিন ভুগতে থাকলে অথবা বৃদ্ধ বয়সে কি যেকোন বয়সে রক্তের জোর কমে গেলে যদি হঠাৎ ঠাণ্ডা জল গায়ে পায়ে লাগে তাতেও কাঁপুনি আসে, এছাড়া অত্যধিক ক্রোধে মাথায় রক্তের চাপ হওয়া, এইসব কারণেও কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসে থাকে।

এক্ষেত্রে ৫০০ মিলিগ্রাম ঈশের মূল চূণ আধ কাপ গরম জলে ভিজিয়ে ২ ঘণ্টা বাদ সেটাকে ছেকে ওই জলটা সকালের দিকে একবার এবং বিকালের দিকেও আর একবার খেলে ওই কম্পজ্বরের শান্তি হয়। প্রথম দুই/একদিন ওই জলটাকে দু’বারে খেতে হবে, তারপর ওই মাত্রায় দু’বার খাওয়া চলে।

২. অজীর্ণ দোষে: সে যে কোন প্রকারেরই হোক না, পেটের ব্যথায় ৫০০ মিলিগ্রাম মুল চূর্ণ অল্প গরম জল সহ খেলে ব্যথাটার উপশম হবে। আর কয়েকদিন এটা ব্যবহার করে অজীর্ণদোষের শান্তি হবে।

আরো পড়ুন:  ব্রাহ্মী বা ব্রাক্ষ্মী লতা-এর আটটি ভেষজ গুণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

৩. প্রবল সর্দিতে (শিশুদের): যেক্ষেত্রে জ্বর নেই অথচ নাক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, পায়খানা করছে না, যা খাওয়ানো হচ্ছে সবই বমি করে ফেলছে, সেক্ষেত্রে এর পাতার রস ২/৩ ফোঁটা একটু, দুধের সঙ্গে খাওয়ালে বমি করে ওটাকে তুলে দেয়। এই মাত্রায় ৪/৫ ঘণ্টা বাদ আরও একবার দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে শিশুর বলাবলও বিবেচনা করে এটা প্রয়োগ করার ব্যবস্থা দিতেন, সুতরাং কোনো চিকিৎসকের নির্দেশ না পেলে শিশুর ক্ষেত্রে এটা প্রয়োগ করা সমীচীন হবে না।

৪. উদরাময়ে (শিশুদের): অনেক ক্ষেত্রে দাঁত ওঠার পূর্বে এদের পেটের দোষ হয়। কারও কারও জ্বরও হয়, পিচকারি দিয়ে পায়খানা করতে থাকে, এর ফলে চোখ মুখ ব’সে যায়, সেই সময় মূল চূর্ণ ৫০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম জলসহ সকালে ও বিকালে দুবার খাওয়াতে হবে। এইভাবে ২ থেকে ৩ দিন খাওয়ালে ওই অসুবিধেটা আর থাকবে না।

৫. হাঁপানিতে: এ রোগের বর্ণনা নিপ্রয়োজন, কারণ এই গ্রন্থের বিভিন্ন খণ্ডে এ রোগ সম্পর্কে বহুবার বলা হয়েছে। এই রোগে কিছুদিন ভুগতে ভুগতে এর সঙ্গে আসে হৃদরোগ। এ আর যেতে চায় না তখন দুটোকেই সামলাতে হয়;

এক্ষেত্রে ইশ্বরমূল বা রুদ্রজটা মূল চূর্ণ ২৫০ মিলিগ্রাম মাত্রায় জলসহ খেলে হাঁপের টানটা কমে যায়। মূল না থাকলে পাতা চূর্ণ দিলেও উপকার হয়। তবে এটা বলে রাখি, যে রোগ জন্মসূত্রে এসেছে তাকে সারানো যাবে না তবে উপশম হবে।

৬. সাপের কামড়ে: রুদ্রজটার পাতা ও মূল বেটে ক্ষতস্থানে প্রলেপ দেওয়ার রেওয়াজ আছে।

CHEMICAL COMPOSITION

1. Aristolochin (Alkaloid). 2. Isoaristolochic acid (a yellow bitter principle). 3. Allantoin. 4. Essential oil 0.5% composed of (a) Sesquiterpenoid compounds. (b) Camphor.

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৮-১৬।

আরো পড়ুন:  লতা ডুমুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জন্মানো লতা

Leave a Comment

error: Content is protected !!