কিরামার বা ধূম্রপত্র-এর পরিচয়:
সরু, লোমহীন, বহুবর্ষজীবী, ভূতলশায়ী উদ্ভিদ। এই গাছের পাতা ঈশের মূলের পাতার চেয়ে আকারে কিঞ্চিৎ বড়, তবে বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। কোনটি বৃক্কাকার, কোনটি ডিম্বাকৃতি, অনেকটা পেঁপের আকৃতি বিশিষ্ট। পাতার কিনারা ঢেউ খেলানো, অগ্রভাগ সরু, বোঁটা প্রায় ইঞ্চিখানিক লম্বা। ফুল পাতার কোলে একত্রে অনেক জন্মে, তবে একটি একটি করে ফোটে, ১–২ ইঞ্চি লম্বা, গরমকালে ফোটে ও বিভিন্ন বর্ণ ও আকৃতির হয়। দেখতে অবশ্য অনেকটাই ঈশের মূলের ফুলের মতো। যদিও অনেকে এই ফুলের বিভিন্ন আকর্ষণীয় রঙের জন্য একে পতঙ্গ-ধরা উদ্ভিদ বলেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়। পতঙ্গ এই ফুলের পরাগ সংযোগে সাহায্য করে। তবে উদ্ভিদটির পতঙ্গ-বিতাড়ক গুণ আছে। এই গাছের মূল শঙ্কুর ন্যায়, ক্রমাগত নিচের অংশ সরু, এতে কোন গন্ধ নেই বটে, তবে তা স্বাদে অত্যন্ত তেতো । বীজ ত্রিকোণাকার, হৃৎপিণ্ডাকৃতি । শরৎকালে গাছে ফুল ও ফল ধরে। ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ : সমগ্র গাছ, মূল ও বীজ ।
অন্যান্য নাম:
এই প্রজাতিটির পূর্ব নাম ছিল A. bracteata Retz. এর সংস্কৃত নাম ধূম্রপত্র, ধূম্রপপত্রা, কীটমারি ; হিন্দী নাম কীড়ামারী, কীড়ামার, কিদমারী প্রভৃতি এবং বাংলা নাম কিরামার, ধূম্রপত্র প্রভৃতি ।
প্রাপ্তিস্থান:
এই প্রজাতিটি বাংলাদেশ, পশ্চিম বঙ্গসহ ভারতের অনেক স্থানসমূহে খুব কমই জন্মে। এটি উত্তর ভারতের বিভিন্ন স্থানে, দক্ষিণ মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিম বিহারের নানা স্থানে প্রচুর পরিমাণে জন্মে। এই উদ্ভিদটি পশ্চিম ভারতের কালো মাটিতে আগাছা হিসেবে প্রচুর জন্মে। অনেকে এটিকে মানুষের পক্ষে হানিকারক ও বিষবৎ ব’লে মনে করেন ।
কিরামার বা ধূম্রপত্র-এর গুণাগুণ:
এই গাছটি দীর্ঘদিন যাবৎ ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং এটি তার তিক্ত, বিরেচক ও ক্রিমিনাশক গুণের জন্য অতি পরিচিত। তবে মনে রাখা প্রয়োজন—গাছের সমগ্র অংশই তিক্ত ও বমনকারক গুণ-বিশিষ্ট ।
সমগ্র উদ্ভিদটি বিরেচক, ক্রিমিনাশক, ঋতুস্রাবকারক ও ক্ষতনাশক গুণ-সম্পন্ন। এর রস বিভিন্ন কাটা-ছেঁড়ায় পোকা মারার জন্য ব্যবহৃত হয়। গাছের কাথ দিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত পচা ঘা ধুলে এবং এর রস লাগালে ঘা সারে। সমগ্র গাছটির রস পেটের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
পাতার রস এরন্ড তেলে মিশিয়ে লাগালে বিচর্চিকা (eczema) সারে। এই রস সামান্য পরিমাণে মাত্রামত এরন্ড তেলে মিশিয়ে খাওয়ালে বাচ্চাদের উদরশূল আরাম হয়। পাতা বেটে নাভির চারদিকে প্রলেপ দিলে শিশুর দাস্ত পরিষ্কার হয়ে থাকে। টাটকা পাতা দুটিকে সামান্য জলে চটকে ফেলে দিয়ে সেই জলটি খাওয়ালে পেটের মোচড়ান ব্যথা সারে। এটি পূর্ণ বয়স্কের মাত্রা। পাতার রস লাগালে বদগন্ধযুক্ত ক্ষতের উপশম হয়।
মূল গোল ক্রিমি নাশক। রাজস্থানে এর বীজ চুল নরম করতে ব্যবহৃত হয়। পাতা ও বীজে ceryl alcohol, b-sitosterol, Potassium chloride ও aristolochic acid পাওয়া যায়। বীজে একপ্রকার fatty oil পাওয়া যায়, যা সহজে শুকোয় না।
Aristolochia tagala Cham:
এই প্রজাতির গাছটি সাধারণতঃ হিমালয় অঞ্চলের নেপাল থেকে সিকিম, বিহার, আসাম, দাক্ষিণাত্যের পশ্চিমঘাট থেকে কঙ্কণ পর্যন্ত স্থানে জন্মে। কোথাও কোথাও বাগানেও লাগানো হয়। পাতা অনেকটা ডিম্বাকৃতি, লম্বা, ফুল সবুজাভ-হলদে। লতানে গাছ । এর মূলে aristolochic acid পাওয়া যায় এবং এটি A. indica-র মূলের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়। মূলটি বলকারক, হজমকারক ও ঋতুস্রাবক বলে পরিচিত ।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র:
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, সপ্তম মুদ্রণ ১৪২৬, পৃষ্ঠা, ৩১০-৩১১।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Vinayaraj
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।