বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ, কাণ্ড মসৃণ, এতে কোন আকর্ষ (আকড়ি বা শুঁড়) থাকলেও কোন গাছে বেড়ায় অথবা মাচায় প্রসারিত হয়। পাতার গড়ন দেখতে অনেকটা আলকুশী লতাগাছের (Mucuna prurita) পাতার মত ত্রিপত্র বিশিষ্ট। পাতার ডাঁটা ও মুলকাণ্ডের সংযোগ থেকে নতুন কাণ্ডশাখা বাহির হয়, উক্ত কাণ্ডশাখা ও মূলকাণ্ড থেকে ফল ও শুটী হয়। ফলের পাপড়ি হলদে কিংবা লালচে রং-এর হয়ে থাকে।
শুঁটী কনিষ্ঠাগুলির মত মোটা ও লম্বা প্রায় এক ফুট পর্যন্ত হতে দেখা যায়। ঐ শুঁটীর দুইটি বীজের মাঝখানে ঈষৎ চেপ্টা, তাছাড়া এই শুঁটী অনেক বীজবিশিষ্টও। সবুজ বর্ণের শুঁটী তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। এই শুঁটি পেকে গেলে রং-টা একটু, হলদে হয়ে থাকে। বীজ থেকে নুতন চারা হয়। এর মূল সরু ও গুচ্ছাকার। ভারত, বাংলাদেশ, নেপালের সর্বত্রই সবজি হিসেবে এর চাষ হয়ে থাকে। এর সংস্কৃত নাম রাজমাষ, বাংলা নাম বরবটী ও হিন্দী নাম লেবিয়া। ব্যবহার্য অংশটি এর বীজ।
বরবটি বীজ-এর উপকারিতা:
১. স্তনের দুধ বাড়াতে: বরবটীর বীজ কাঁচা অবস্থায় দেহে অনুকূল হয় না। এই বরবটী দ্রব্যটি যখন তদ্ধর্মী, তখন এটির ব্যবহার স্তন্যের বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর। তবে শুষ্ক বীজকে সিদ্ধ করে সেই সিদ্ধ জলটি খেতে হবে; তবে মাত্রা কমপক্ষে ১০ গ্রাম হওয়া দরকার।
২. তরল দাস্তে: এদের পিত্তশ্লেষ্মায় ধাতু হলে সেই ক্ষেত্রেই কার্যকরী। দেহের বাহ্য আকৃতিতে বোঝা যায় না অথচ প্রত্যহই খুতখুতে মন, মল বেশ আঁট হয়, প্রতিবারই নরম হয়, অল্প আমও থাকে, তাঁদের উচিত বরবটীর বীজ বালিতে ভেজে, ভেঙ্গে, খোসাটা বাদ দিয়ে মিহি গুঁড়ো করে নিতে হবে, সেই গুঁড়ো সকালে ও বিকালে দু’বার ১ গ্রাম করে জলসহ খেতে হবে। এটা কিছুদিন খেলে (ঠাণ্ডা জলসহ) ওই অস্বস্তিটা চলে যাবে; মলও বেশ আঁট হবে। ৫/৭ দিন খাওয়ার পর উপকার বেশ বোঝা যায়।
৩. সর্দি ধাতে: যাঁদের স্বল্প ঠাণ্ডায় সর্দি হাঁচি দুই হয়, তাঁদের উচিত বালিখোলায় ভাজা বরবটি বীজ অল্প ভেঙ্গে বালির মত রান্না করে ছেকে সেই সিদ্ধ জলটা খেতে হবে। ১০ গ্রাম নিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। একবার করে কয়েকদিন খাওয়ার পর যদি এটার পরিবর্তন না হয় তাহলে সকালে বৈকালে দু’বার খেতে হবে।
৪. শুক্রের স্বল্পতায়: বরবটি বীজ বালিতে ভেজে খোসা ছাড়িয়ে তাকে ভেঙ্গে নিয়ে ৮/১০ গ্রাম নিতে হবে। তার সঙ্গে ১ কাপ দুধ ও ৩ কাপ জল মিশিয়ে সিদ্ধ করে সেইটা প্রত্যহ একবার করে খেতে হবে। এইভাবে সপ্তাহখানেক ব্যবহার করলে শরীরের উদ্দীপনা যে আসছে সেটা বোঝা যাবে এবং শুক্রের পরিমাণ যে বাড়ছে সেটা কার্যক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ করা যাবে।
৫. উর্ধ্বজত্রুগত কফে: গলায় প্রায় শ্লেষ্মা জড়িয়ে যায়—তাঁদের পক্ষে বালিখোলায় ভাজা বরবটী খোসা বাদ দিয়ে ভেঙ্গে নিয়ে, তা থেকে ৫/৬ গ্রাম নিয়ে ১ কাপ গরম জলে রাত্রে ভিজিয়ে রাখতে হবে, পরের দিন সকালবেলা ওটাকে ছেঁকে ওই জলটা খেতে হবে—এই রকম ২/৪ দিন খেলে গলায় শ্লেষ্ম জড়ানোটা চলে যাবে।
বাহ্য প্রয়োগে:
৬. শোথে: এই বরবটি বীজ (কাঁচা) বেটে লাগালে যেকোন প্রকারের ব্রণের ফলো কমিয়ে দেয়, শুকিয়ে দেয়। এটি কিন্তু আভ্যন্তরীণ শোথের জন্য নয় কিম্বা হৃদরোগে, মূত্ররোগ অথবা শ্লেষ্মজন্য পাণ্ডুরোগজনিত শোথের ক্ষেত্রে উপযোগী নয়।
CHEMICAL COMPOSITION
Vigna cylindrica Skeels 1. The pods contain (a) Moisture 85.3%, (b) Protein 3.5%, (c) Fat 0.2%, (d) Fibre 2.0%, (e) other carbohydrates 8.1%, (f) Mineral matter 0.9%; Calcium 72; Phosphorus 59; ‘Iron 2.5; Carotene 0.564; Thiamine 0.07, Riboflavin 0.09, Niacin 0.9, and Vitamin C; (14 mg/ 100 g). 2. Enzymes :- (a) Hydrolysase, (b) proteinase, (c) Pectinmethyl esterase. 3. Fatty acids :- (a) Palmitic acid 33.4%; (b) Stearic acid 7.1%; (c) Arachidic acid 0.9%, (d) Behenic acid 4.0, (e) Lignoceric acid 1.1%, (f) oleic acid 12.2%, (g) Linoleic acid 27.4%, (h) Linolenic acid 12.3%. 4. Ribonucleic acid. 5. Hydroxylamine.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৪২-১৪৪।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।