গোয়ালে লতা উদ্ভিদের ছয়টি ভেষজ গুণাগুণ

গোয়ালে লতা বা গোয়ালী লতা একটি লতাজাতীয় উদ্ভিদ। এর কাণ্ড ও পাতা উভয়ই নরম। তবে পাতা এতটাই নরম যে টিপলেই ভেঙে যায়।

এই লতার অনেক ভেষজ গুণ আছে। উদ্ভিদটি ঝোপ-ঝাড়, পতিত জায়গা, রাস্তার পাশে জন্মায়। এর কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।

এই প্রজাতি দক্ষিণ-পশ্চিম চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া দেশে পাওয়া যায়।

রোগ নিরাময়ে গোয়ালে লতা-এর ব্যবহার:

১. রক্তপ্রস্রাব বন্ধ করতে: মহিলাদের রক্তপ্রসাবে গোয়ালে লতা গাছের মূল ৫০ গ্রাম ছোট ছোট টুকরা কেটে একটি মাটির অথবা স্টিলের পাত্রে রাখতে হবে।

এবার ২০০ মিলিলিটার পানি দিয়ে সিদ্ধ করার পর ৬০ থেকে ৭০ মিলিলিটার থাকতে পাত্র চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে। ঠাণ্ডা হলে পানি ছেঁকে তার মধ্যে এক কাপ কাঁচা গরুর দুধ মিশিয়ে সকাল সন্ধ্যায় খেতে হবে। এভাবে দশ থেকে পনের দিন খেলে রক্তপ্রসাব অবশ্যই বন্ধ হয়ে যাবে।

২. শরীরের কোথাও কেটে গেলে: আঘাত লেগে কেটে গেলে অথবা অস্ত্রের আঘাতে গভীরভাবে কেটে প্রবল রক্তপাত হলে গোয়ালে লতা বেটে কেটে যাওয়া জায়গায় লাগাতে হবে। তবে একটু পুরু করে লাগিয়ে বেঁধে দিলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া কাটা জায়গাও খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।

৩. কীটের কামড়ের যন্ত্রণা কমাতে: বিছা, বোলতা ও ভীমরুলের কামড়ালে গোয়ালে লতার পাতা বেশ উপকারি। পাতা বেটে তার রস কামড়ানো জায়গায় তিন থেকে চারবার লাগালে যন্ত্রণা দূর হয় এবং ফুলা কমে যায়।

৪. ফোঁড়া সারাতে: ফোঁড়া হলে গোয়ালে লতার পাতা বেটে ফোঁড়ার চারপাশে লাগালে কাচা ফোঁড়া খুব তাড়াতাড়ি পেকে ফেটে যায়। গোয়ালে লতার পাতা বাটলে একরকম লালা বের হয়, এ লালা ঘা ও ফোঁড়ার পক্ষে খুবই উপকারী।

৫. প্রস্রাবের সমস্যায়: কোনো কারণে প্রস্রাব বন্ধ হলে গোয়ালে লতার মূল ৩০ গ্রাম একটা হাড়ি অথবা স্টিলের পাত্রে ২০০ মি. লি. পানি নিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। পানি ফুটে ৫০ থেকে ৬০ মি. লি. হলে পাত্র আঁচ থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করার পর পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে ছেঁকে নিতে হবে।

আরো পড়ুন:  আসাম লতা বা জাপান লতা-এর ভেষজ গুণাগুণ

এরপর ঐ পানিতে এক চামচ গাওয়া ঘি, তিল-তেল এক থেকে দেড় চামচ এবং জ্বাল দেয়া গরুর ঠাণ্ডা দুধ ৫০ মি. লি. এক সাথে মিশিয়ে খেলে প্রস্রাবের অসুবিধা দূর হয়।

৬. জ্বর সারাতে: ঠাণ্ডাজনিত কারণে জ্বর হলে গোয়ালে লতার প্রয়োগ করলে উপশম পাওয়া যাবে। এজন্য টাটকা মূল ১০ গ্রাম এবং মাষকলাই সমপরিমাণ একসাথে সামান্য ঠাণ্ডা পানি দিয়ে বেটে খেলে জ্বর সেরে যায়।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ                   

১. মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী: ‘গাছ-গাছড়ায় হাজার গুণ ও লতাপাতায় রোগ মুক্তি, সত্যকথা প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ২০০৯, পৃষ্ঠা, ১৬৮-১৬৯।

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিমিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Dinesh Valke

Leave a Comment

error: Content is protected !!