লতানে উদ্ভিদ, মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে এগিয়ে চলে, এর গাঁট থেকে মাটিতে শিকড় প্রবেশ করে এবং সেই শিকড় থেকেই মাটির নিচে আলু জন্মে। পাতার গঠন অনেকটা কলমী শাকের (Ipomoea reptans) পাতার মত, তবে আকারে কিছুটা বড়। গাছের ডগা ও পাতা ভাঙ্গলে দুধের মত আঠা বেরোয়। পাতার গোড়া থেকে বেগুনে রঙের এবং অনেকটা কলকের মত ফুল হয়। সাধারণতঃ লাল ও সাদা এই রঙের আল দেখা যায়। এরা দেখতে লম্বাটে ও এবড়ো-খেবড়ো। স্বাদে মধুর, এটি কাঁচাও খাওয়া যায়, রান্না করেও খাওয়া যায়। শীতকালে ফুল হতে দেখা যায়।
অন্যান্য নাম:
সন্দেহ করা হয় এটি বহিরাগত উদ্ভিদ এবং আমেরিকা থেকে এদেশে বহুকাল পূর্বে এসেছে। বর্তমানে কমবেশী ভারতের সর্বত্রই এর চাষ হয়, তবে দোআঁশ বা বেলে মাটিতে আলু ভাল হয়। এর আয়ুর্বেদীয় নাম সুকন্দ, বাংলায় ও হিন্দীতে রাঙ্গাআলু বলে। বোটানিক্যাল নাম Ipomoea batatas Lamk. ও ফ্যামিলি Convolvulaceae.
গুণাগুণ:
এর শিকড় বিরেচক। কন্দমূল রসে স্বাদ ও শীতগুণসম্পন্ন, কামোদ্দীপক, কফ-বাতবর্ধক (আয়ুর্বেদ মতে)। ঔষধ হিসাবে কন্দমূল মেদোবধক। কোন কোন প্রদেশে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য এর সরবত তৈরী করে খাওয়া হয়। এছাড়া উক্ত মূল মূত্রকৃচ্ছ রোগে ও অগ্নিদাহে হিতকর। ঔষধার্থে ব্যবহার্য অংশ— আলু ও শিকড়।
মিষ্টি আলু ও লতা-এর উপকারিতা:
মিষ্টি আলু ও লতা ব্যবহারের প্রতিক্রিয়াটি কিন্তু রসবহ স্রোতে হয়। আর একটি কথা মনে রাখতে হবে, এই লতাগাছটির একটি বিশিষ্ট শক্তির কথা—এর মূলটি বিরেচক, আর যেটা আমরা খাই সেটা হলো কন্দ, সেইটাই আলু বলে পরিচিত। এই লতাগাছের গায়ে যেসব সরু শিকড় থাকে সেগুলি কিন্তু ভেষজ।
১. তৃষ্ণা রোগে: এই রোগটিতে আক্রান্ত হলে মিষ্টি আলু (লাল) অথবা মৌ-আলু (সাদা), মূল (শিকড়) ৭/৮ গ্রাম অল্প জল দিয়ে থেতো করে সেই রসটা নিংড়ে আধকাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে ১০/১৫ মিনিট অন্তর কয়েকবার খাওয়ালে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তৃষ্ণা রোগের উপশম হয়।
২. দাহ রোগে: এই রোগটির লক্ষণ হচ্ছে চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিলে, কিম্বা সেই স্থানে (যেখানে দাহ হচ্ছে) শীতল জল সেচন করলে আরাম হয়। তাছাড়া এইসব লক্ষণ থাকলে রাঙা (লাল) আলু গাছের শিকড় (আল নয়) ৭/৮ গ্রাম বেটে সেটা জলসহ খেতে দিতে হবে, আর শুষ্ক হলে ৩/৪ গ্রাম নিলেও চলবে। এর দ্বারা শরীরের যেকোন জায়গায় জ্বালা হোক না কেন, কমে যাবে। তবে ওটি যদি প্রকৃতিগত হয়, তাহলে তার স্বাভাবিক গতিকে স্তন্ধ করা কঠিন; শুধু, তাই নয়, প্রকৃতির বিরুদ্ধে কোন কাজ করতে গিয়ে অন্য কোন উপসর্গ না আসে তার জন্য বিশেষ বিচার করে তার প্রতিকারের উপায় উদ্ভাবন করতে হবে। তবে এটি প্রয়োগ করলে উপকার ছাড়া অপকার কখনও হবে না।
৩. শোথ রোগে: মলতঃ শোথ বলে মৌলিক কোন রোগ হয় না। শোথ হলো আর একটি রোগের উপসর্গ, সেটাকেই আমরা মনে করি প্রধান রোগ। এটি যখনই হয় তখন কফ-পিত্তের বিকার থাকাটাই স্বাভাবিক। সেই সময় মিষ্টি আলু, পুড়িয়ে চটকে নিয়ে শোথের উপর প্রলেপ দিলে ফুলোটা শুকিয়ে যাবে।
৪. প্রবল অতিসারে: ওই লক্ষণ প্রকাশ পেলে মিষ্টি আলু অল্প জল দিয়ে থেঁতো করে বা তার রসটা নিংড়ে ছেঁকে নিতে হবে, সেই রস ১ চা-চামচ একটু, জল মিশিয়ে ১৫/২০ মিনিট অন্তর কয়েকবার খাওয়ালে ওটার উপশম হবে।
৫. অপুষ্টিজনিত কৃশতায়: শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, যুবতী, প্রতি যিনিই হোন, তা যে কোন কারণেই হোক না এবং বীর্যহীন খাদ্য গ্রহণের ফলে (তা প্রচুর খেলেও) শরীর কিন্তু অপুষ্ট থাকে। এই ক্ষেত্রে মিষ্টি আলু (সে লাল অথবা সাদা যাই হোক না কেন) পাতলা চাকা চাকা করে কেটে রৌদ্রে শুকিয়ে, তাকে গুঁড়া করে, ছেকে নিতে হবে এবং তার ১৬ ভাগের এক ভাগ চূর্ণের জল মিশিয়ে তাকে আবার পুনরায় শুকিয়ে নিয়ে রাখতে হবে। সেটাকে চূর্ণ করে রেখে দিতে হবে। তা থেকে এক বা দেড় চা-চামচ প্রত্যহ সকালে জলসহ খেলে এক সপ্তাহের পর থেকেই দেখা যাবে যে, এর কৃশতা কমে যাচ্ছে। তবে একটা কথা জেনে রাখা ভাল-যাঁদের রক্তে বা প্রস্রাবে শর্করা (সুগার) এসে গিয়েছে তাঁদের এটা খাওয়া সমীচীন নয়, তবে এই আলু কচি থাকা কালে একে তুলে চাকা চাকা করে কেটে শুকিয়ে নিলে এর শর্করা ভাগ ততটা বেশী জন্মে না।
CHEMICAL COMPOSITION
1. (a) Moisture 68.5%; (b) Protein 1.2%, (c) Fat 0.3%, (d) carbohydrates 31.0%, (e) Mineral matter 1.0%. 2. Vitamins (Mg/100 g) (a) Thiamine (0.09-0.14), (b) Ribofavin (0.05-0.10), (c) Vitamin C (16-22). 3. Enzymes:- (a) Amylase, (b) Protease, (c) Invertase, (d) Catalase, (e) laccase, (f) arabinase, (g) galac anase, (h) Polygalacturonase, (i) peroxidase, Monchenclase, (k) catecholase (1) cytochrome C-oxidase; (m) Phosphonylase, (n) Phosphases. 4. Ipomocamarone. 5. Furan 3-carboxylic acid. 6. Trans-cinnamic acid. 6. Batatic acid.
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৪, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৩৬-১৩৮।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।