কাঁকরোল লতা-র বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণ

বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ। পাতা অনেকটা গোলাকার, দুইদিক খসখসে, কিনারা খাঁজকাটা। লতা দেখতে অনেকটা পটোলের লতার মত, লতার গায়ে ৪। ৫টি শির ও গাঁট আকর্ষযুক্ত। গাঁট থেকে নতুন কাণ্ড ও ফুল বের হয়। মাটির নিচে কন্দবৎ মূল অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ফুলের পাপড়ি শ্বেতবর্ণের, ফল ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা, ডিম্বাকৃতি, বহির্ভাগ ছোট ছোট ঘন সুচালো কাঁটাযুক্ত। পাকা অবস্থায় এটি হলদে ও পরে লাল বর্ণের হয়ে থাকে। বীজের আকৃতি কিছুটা গোল, চ্যাপটা ও কিনার ঢেউ খেলানো। ফলগুলি পাকলে বীজের রং ফ্যাকাশে কালো হয়।

অন্যান্য নাম:

এর সংস্কৃত নাম কর্কোটক, বাংলা ও হিন্দী নাম কাঁকরোল, গুজরাটে করাপাতা নামে পরিচিত। এর বোটানিক্যাল নাম Momordica cochinchinensis Spreng. ও ফ্যামিলি cucurbitaceae. ব্যবহার্য অংশ– পাতা, ফল, বীজ ও মূল।

আর এক প্রকার বৃহৎ আকারের কাঁকরোল দেখা যায়, সেইগুলি খুবই তিতা (তিক্ত), এইগুলি বন্য, আকারে এক একটি ছোট আনারসের মত। একে সাধারণ লোকে বন কাঁকরোল বা তিতা, কাঁকরোল বলে।

কাঁকরোল লতা-র গুণাগুণ:

কাঁকরোল লতা (তিতা স্বাদের) রক্তবহ স্রোতে কাজ করে। এর ব্যবহার্য অংশ মূলের ছাল, পাতা ও বীজ।

১. প্রসবান্তের উপদ্রবে: প্রসবের পর যদি যথোপযুক্ত পরিচর্যা না হয়, তবে প্রধানতঃ বায়ুরই বৃদ্ধি হয়, তার ফলে বুক ধড়ফড়, মাথাধরা, বস্তিতে ব্যথা (শূলের খোঁচার মত), গায়ে-হাতে কামড়ানি, অল্প অল্প জ্বর, হাতে-পায়ে ও মুখে ফুলো, এর সঙ্গে কারোর বা স্রাবটাও বাড়ে; সেই সময় কাঁকরোলের বীজ একটু ভেজে নিয়ে গুড়া ক’রে ৫০০ মিলিগ্রাম মাত্রায় (মিহি চূর্ণ) যেকোন খাবারের সঙ্গে খেলে দুই তিন দিনের মধ্যেই নব প্রসূতির যাবতীয় উপসর্গ চলে যাবে।

২. প্রসবান্তিক দুর্বলতায়: প্রসূতির সেবা পরিচর্যার এটিতে তাঁর দেহের বল কমে যায়, আর পেটের দোষও দেখা দেয়, তার সঙ্গে পেট ফাঁপাও উপস্থিত হয়। এটাকে দ্রুত সারাতে হয়, ২০। ২৫ দিন পার হয়ে গেলে তখন সারানো কষ্ট হয়। ওই সব উপদ্রব দূর করা খুবই দরকার। সেক্ষেত্রে কাঁকরোলের বীজ ভেজে তাকে মিহি গুড়া করে সকালের দিকে ৫০০ মিলিগ্রাম ও বৈকালের দিকে ৫০০ মিলিগ্রাম সিকি চামচ মাখন ও তার সঙ্গে একট, মিছরি একসঙ্গে খেতে হয়। ২। ৪ দিন খেলেই ওই অসুবিধেগুলি চলে যাবে।

আরো পড়ুন:  পটল উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের বর্ষজীবী আরোহী বীরুৎ

৩. কাসিতে: সব কাসিতে নয়, যেসব কাসি বাত (বায়ু) প্রধান, আর পিত্ত অপ্রধান বিকার থেকে হয়। সে সময় কাঁকরোল বীজ চূর্ণ (চূর্ণ না হতে থাকলে অল্প ভেজে চূর্ণ করতে হবে) ৫০০ মিলিগ্রাম জলসহ খেতে হবে। প্রত্যহ একবার অথবা দুইবার। এর দ্বারা ওটা সেরে যাবে।

৪. পাড়ুরোগে (এনিমিয়ায়): যে পান্ডুরোগ পিত্তপ্রাধান্যে হয়, সেই ক্ষেত্রেই এটি প্রয়োগ করতে হয়। এসব কারণ ঘটলে বা উপসর্গ দেখা দিলে কাঁকরোলের পাতার রস গরম করে তা থেকে এক বা দেড় চা-চামচ নিয়ে একটু চিনি মিশিয়ে খেতে দিতে হবে; এই রকম দু’বেলাই খেতে হবে। এর দ্বারা পিত্তবিকারজনিত পান্ডুরোগ নিরাময় হবে।

৫. জ্বরের রোগীর পথ্যে: বাত পিত্তপ্রধান জ্বরের সময় অন্য কোন শাক দেওয়া উচিত নয়, কিন্তু কাঁকরোল পাতাকে মচমচে করে ভেজে খেতে দিলে ঔষধ ও পথ্য দুই-ই হবে।

বাহ্য ব্যবহার

৬. কেশপতনে: যাঁদের চুল উঠে যাওয়া কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না, কাঁকরোলের মূল ১০ গ্রাম বেটে আধ কাপ জলে গুলে তাকে ছেকে নিয়ে ওই জলটা চুলের গোড়ায় লাগাতে হবে, তার কিছুক্ষণ বাদে মাথা ধুয়ে ফেলতে হয়। এটা একদিন অন্তর বা দু’দিন অন্তর দুই-তিন দিন লাগালে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ৫, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ ১৪০৩, পৃষ্ঠা, ১৮৭-১৮৯।

Leave a Comment

error: Content is protected !!