জিজিফাস গণে কুল বা বরই উপকারি ভেষজ ফল

ভেষজ ফল

কুল বা বরই

ণের নাম: Ziziphus Mill. (জিজিফাস), Gard. Dict. Abridg. ed.: 4 (1754).
জীববৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ/রাজ্য: Plantae বিভাগ: Angiosperms অবিন্যাসিত: Eudicots অবিন্যাসিত: Rosids বর্গ: Rosales পরিবার: Rhamnaceae গণ: Ziziphus

ভূমিকা: জিজিফাস  হচ্ছে রামনাসি পরিবারের সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি গণের নাম। এই গণের প্রজাতিগুলো ছোট বৃক্ষ থেকে মাঝারি আকারে হয়ে থাকে। এবং ফল টক স্বাদ যুক্ত। আমরা জিজিফাস গণের উদ্ভিদগুলোকে কুল বা বরই বলে থাকি। এই গণে প্রায় চল্লিশটি প্রজাতি রয়েছে। সাধারণত বাংলায় যেসব গাছের ডালগুলো লতানো নিচের দিকে ঝুলে থাকে সেগুলোকে বলা হয় কুল এবং যেগুলোর ডালগুলো উপরের দিকে যায় সেগুলোকে বলা হয় বরই। কুলগুলো সাধারণত মিষ্টতায় বরইয়ের চেয়ে বেশি হয়।

 কুল বা বরইয়ের ২২টি ঔষধি গুণাগুণ

বিবরণ: জিজিফাস গণের উদ্ভিদেরা বৃক্ষ বা গুল্ম, সাধারণত শাখান্বিত উপপত্রাকার কন্টকযুক্ত। পত্র সরল, একান্তর, বৃন্তক, অধিকাংশ মূল হতে ৩-শিরাল। এদের পুষ্প কাক্ষিক গুচ্ছ বা পুষ্পদন্ডযুক্ত সাইম, উভলিঙ্গ। বৃতি ৫টি ত্রিকোণাকার বৃত্যংশক। দলমন্ডল ৫ পাপড়িবিশিষ্ট বা কখনো অনুপস্থিত। চাকতি ৫-১০ খন্ডক। পুংকেশর ৫টি, পাপড়িতে আবৃত এবং এর সাথে প্রতিমুখ। গভাশয় ২-৪ কোষী, গর্ভদন্ড ২-৩টি, মুক্ত বা যুক্ত, ক্ষুদ্র উপবৃদ্ধিযুক্ত গর্ভমুন্ডবিশিষ্ট। ফল ডুপ সদৃশ।[১] পাশ্চাত্য উদ্ভিদবিজ্ঞানীগণের সমীক্ষা দেখা যায়, এই গণের (genus) গাছগুলি ঝোপ ঝাড় জাতীয়। তার মধ্যে কতকগুলি অর্ধলতাকার, আবার কোনটি বা ভূলুণ্ঠত। এর প্রায় ৫০টি প্রজাতি এশিয়া ও আমেরিকার উষ্ণ বা শীতোষ্ণ অঞ্চলে দেখা যায়, আবার তার মধ্যে প্রায় ২০টি প্রজাতি ভারতেই দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি জনপদে চাষ হয়, অধিকাংশই অযত্নসম্ভূত, যাকে বলে জংলী গাছ।[২]

বৈদিক তথ্যে কুবল বলে যে ফলটির উল্লেখ আছে, তার সঙ্গে তুল্যমাল্যতায় দেখা যায় বর্তমানের ইউনানি চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহৃত উনাও বা উনাব বলে যেটি, তার আকার অবিকল শুষ্ক কুলের মতো। সেটিকে উত্তর ভারতের বৈদ্যগণ গ্রহণ করে থাকেন, তার বর্তমানে বৈজ্ঞানিক নাম Zizyphus sativa Geartn. পূর্বে এটির নাম ছিল Zizyphus Vulgaris, তারপর বদর বলে বর্তমানে যেটি প্রচলিত তার বোটানিকাল নাম Zizyphus jujuba Lam. আর কর্কন্ধু বলে যেটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে তার সংস্কৃত আর একটি নাম ‘শৃগাল কোলি’, যার লোকায়ন্তিক নাম শেয়াকুল বা শে’কুল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Zizyphus oenoplia Mill, আর একটি প্রজাতির কুল গাছ ভূলুণ্ঠিত হয়ে থাকতে দেখা যায়, তাকে বলা হয় ভুবদরী। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Zizyphus nummularia W&A. আরো একটি প্রজাতি পশ্চিমবঙ্গের  মেদিনীপুর অঞ্চলের বিলের পতিত জমিতে হয়ে থাকে, সেটাও ভূলুণ্ঠিত বলা চলে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Zizyphus minima. এই সকল Rhamnaceae পরিবারের অন্তভুক্ত। ঔষধার্থে ব্যবহার করা হয় এর ফল, বীজ, মূলের ও গাছের ছাল ও পাতা।

আরো পড়ুন:  আঙ্গুর লতা ব্যবসায়ীভাবে চাষযোগ্য ঔষধি জনপ্রিয় ফল

প্রাচীন পরিচয়: আজ এই বদর অর্থাৎ কুল নামক ফলটির কুলজিনামা লিখতে বসে কুল কিনারা পাচ্ছিনা; এই জন্যে যে, আমাদের শ্রুতির অন্যতম যজুর্বেদে এর দুটি নাম স্থান পেয়েছে একটি হলো কুবল আর একটি এই বদর একই সম্প্রদায়ের এবং বংশেরও; তবে একটির চরিত্র কোমল ও মধুর, আর একটির স্বভাব যাকে বলা যায় দোষে গুণে। একটির জন্ম হয়েছে হিমাচল অঞ্চলে আর একটি জন্মেছে উষ্ণপ্রধান অঞ্চলে, হয়তো বা জলবায়ুর স্বভাবে তার প্রকৃতিটাই এই রকম হয়ে আছে।

তারপর শ্রুতির আর একটি সূক্তে দেখা যাচ্ছে তার বংশে আরও একটি জন্মেছে, তার নাম ‘কর্কন্ধু’। সেটার প্রকৃতিও খারাপ নয়। জগতে ভক্ষ্য-ভোজ্য সম্পর্ক যখন, তখন শ্রেষ্ঠ জীব মানুষও যেমন তাদের আহার্য ও পথ্য হিসেবে কাজে লাগিয়েছে, জন্তুকুলও তাকে কম কাজে লাগায়নি।

পরবতী সংহিতার কালে এসে চরকীয় চিকিৎসক সম্প্রদায়, তার মধ্যে যে বিশিষ্ট ভৈষজ্য শক্তি আছে সে সবের অনুশীলন করেছেন, তাঁরাও ঐ বদর, কুবল ও কর্কন্ধু গবেষণা করেছেন, তাই তাঁদের সংগহীত সংহিতা গ্রন্থে চরক সংহিতার সূত্রস্থানের ৪৯ অধ্যায়ে তার গুণপনার বর্ণনা।

তারপর বহু শতাব্দী কেটে গেছে, ষোড়শ শতকের ভাবমিশ্রের কালে এসে, তাঁর সংকলিত গ্রন্থ ভাবপ্রকাশে দেখা যাচ্ছে রাজবদর তবে বিলিতি বা নারকেলি কুল নয় কিন্তু; তার পর্যায় নাম দেওয়া হয়েছে “পৃথ ফল, তনু বীজ, মধুর ফল। আর বদর অর্থাৎ কুলের পর্যায় নাম বজ্রকণ্টক, বৃত্ত ফল ও দৃঢ় বীজ; চলতি কথায় যে কুলকে আমরা ‘টোপা কুল’ বলি। এভিন্ন লঘু বদর নামে একটি কুলের উল্লেখ, সেটার পর্যায়ে নাম বলা হয়েছে। ‘বজ্রকণ্টক’, ‘সুক্ষ্মপত্র’, দুষ্পর্শ এবং শবরাহার, এভিন্ন ভুবদরী বা ভূইকুল নামে আর এক রকম কুলের উল্লেখ।

তথ্যসূত্রঃ

১. এম. এ. হাসান  (আগস্ট ২০১০)। “অ্যানজিওস্পার্মস ডাইকটিলিডনস”  আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; হাসান, মো আবুল; বেগম, জেড এন তাহমিদা; খন্দকার মনিরুজ্জামান। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ ১০ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৯। আইএসবিএন 984-30000-0286-0

আরো পড়ুন:  আমড়া গাছ, ছাল, পাতা, ফলের ১২টি ঔষধি ব্যবহার

২. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৭২-৭৩।

Leave a Comment

error: Content is protected !!