জর্জ অরওয়েল (ইংরেজি: George Orwell) হচ্ছেন পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ফার্মের একগুঁয়ে এক এনিমেল। তিনি ছিলেন একজন ইংরেজ উপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক এবং সমালোচক। তাঁর রচনাবলীকে প্রাঞ্জল গদ্য, সামাজিক সমালোচনাপূর্ণ, সর্বস্বতাবাদের বিরোধিতা এবং সমাজ-গণতন্ত্রের স্পষ্টবাদী সমর্থন দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের একটি প্রবন্ধের নাম ‘কর্তৃত্ব প্রসঙ্গে’। সেই প্রবন্ধে এঙ্গেলস দেখাচ্ছেন আধুনিক কালের বা শিল্পবিপ্লব পরবর্তীকালের বড় কারখানায় কীভাবে কর্তৃত্বের প্রয়োজন পড়ে। তিনি উদাহরণ হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই রেলের জটিল কর্মপ্রক্রিয়াকে উল্লেখ করেছেন।[১] একজন ট্রেন ড্রাইভার স্বাধীনভাবে দশ মিনিটও কি একটি ট্রেন চালাতে পারবেন?
একজন সাধারণ জ্ঞান ধারণ করেন এরকম শ্রমিক খুব সহজেই কর্তৃত্বের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করবেন। পুঁজিবাদী জটিল সমাজব্যবস্থায় পুঁজিপতি এবং সাম্রাজ্যবাদী নরপিশাচেরা নিপীড়নমূলক কর্তৃত্ব করেন গোটা দুনিয়ার শ্রমিক ও কৃষকের উপর। সেই কর্তৃত্বকে ধ্বংস করার মহান লড়াইয়ে নেমে এঙ্গেলসের ধারণাকে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার ধারণায় বিকশিত করেন লেনিন। এই গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতাবাদ মতবাদটি গোটা দুনিয়ার কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর গৃহীত একটি সাধারণ নীতি।
আর অন্যদিকে গোটা দুনিয়ায় শোষণ লুট চালিয়ে বিলাসি ইউরোপীয় নির্বোধ এবং পাকা বদমাশ লেখকেরা কর্তৃত্ব এবং কর্তৃত্ববাদী শাসন সম্পর্কে নঞর্থক বুলি ঝেড়েছে বিভিন্ন লেখা ও আবর্জনায়। সেরকম একটি লেখার নাম হচ্ছে ‘এনিমেল ফার্ম’। সেই লেখা লিখে গাড়ল ইউরো-মার্কিনদের বাহবা পেয়েছে সেই পুঁজিবাদী ফার্মের সৃষ্ট এনিমেল জর্জ অরওয়েল (১৯০৩-১৯৪৯)।
ইউরোপীয় বদমায়েশ পুঁজিপতি ও তাদের দালাল দাসেরা মার্কসবাদের বিরোধিতা করেছে একচোখা দৈত্যের মতো। ইউরোপীয় এই বদমাশি দৃষ্টিভঙ্গিটি ইউরোপেই যাত্রা থামায়নি। সেটি বাংলাদেশের ঢাকাতেও পাকাপোক্ত আসন গেড়েছে। কেননা পরজীবী নির্বোধ লেখকের অভাব ঢাকার মতো এখন গোটা দুনিয়াতেই নেই। ফলে এখানকার উদারনীতিক ভাঁড়েরা মতপ্রকাশের উইট ও মজা নিতে গিয়ে সবাইকে তাদের মতোই নির্বোধ ঠাউরান। যেমন গবেষক আলতাফ পারভেজ গত ৩ মে সেই অরওয়েল নামক আবর্জনাটি সম্পর্কে একটি স্ট্যাটাস দিলেন যাতে তিনি লিখেছিলেন “চলতি মুহূর্তে সাহিত্য নিয়ে এত গুরুতর রাজনৈতিক আলাপ আর” আলতাফ পারভেজের নজরে নাকি পড়ে নাই। আর অধ্যাপক আলী রিয়াজের মত এতদূর পর্যন্ত এগিয়েছে যে তিনি সন্দেহ করে বসেছেন “বাংলা-পাঠকরা … অরওয়েলের লেখা বুঝতে”[২] পারবেন না!
এই হচ্ছে এখনকার ঢাকার উদারনীতিক গবেষক লেখকদের চিন্তার দৌড়। তারা ভুলে গেছেন, শ্রমিক শ্রেণির কাছে মোটু-পাতলু যে কোনো অজ্ঞতারই কানাকড়ি মূল্য নেই। মার্কস একবার তাঁর বন্ধু ভিলহেল্ম ভাইতলিংকে বলেছিলেন, ‘অজ্ঞতা কখনো কাউকে সাহায্য করে না’।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিলো মানবেতিহাসের সবচেয়ে অগ্রগামি সমাজতন্ত্র অভিমুখি রাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথমবার ভ্রমণ করার পর মার্কিন সংগীতজ্ঞ পল রোবসনের (১৮৯৮ – ১৯৭৬) মনে হয়েছিল সেটি তাঁর নিজের ঘর, যেখানে সব মানুষ গোটা দুনিয়ার চেয়ে অগ্রগামী। তিনি লিখেছিলেন,
“মস্কোয় যা দেখেছি তা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। প্রতিটি মুখেই যেন তৃপ্তি আর আনন্দ। জানতাম এখানে অনাহার নেই। জীবন এখানে মুক্ত, নিরাপত্তায় পূর্ণ, প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর, আর সর্বত্র দেখছি স্বাধীনতার অবাধ প্রকাশ। এ দেখার জন্য আমি তৈরি ছিলাম না। … আনন্দ, সুখ আর বন্ধুত্ব আমি অনুভব করেছি, ‘জাতি’ প্রশ্নে কোনো অসুবিধার মুখোমুখি আমাকে হতে হয়নি।
এরকম মুক্তসমাজের যারা বিরোধিতা করে তাদের কঠোর হাতে দমন করা দরকার। আমার আশা সোভিয়েত সরকার সেই কাজই করবে। … সোভিয়েত ইউনিয়ন আমার নিজের ঘর। নতুন সমাজ ব্যবস্থায় যে সোভিয়েত জনগণ বাস করছেন তাদের প্রতি আমি আত্মীয়তা অনুভব করছি। এই ধরনের অনুভূতি আমার কোথাও হয়নি। এখানে কোনো আতংক নেই। সমস্ত জাতির জনগণই এখানে সুখী। তারা তাদের সরকারকে সমর্থন করবে।”[৩]
এরকম মহান একটি দেশ সম্বন্ধে সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদীরা মিথ্যাচার ছাড়া কোনো কথাই বলতে পারেনি। যেমন পেঙ্গুইন সংস্করণের ভূমিকায় অরওয়েল নিজেই স্বীকার করেছেন, “অ্যানিমেল ফার্ম … প্রথমত রুশ বিপ্লবের ওপর একটি ব্যঙ্গাত্মক রচনা”[৪]। এইভাবেই অরওয়েল, পাস্তারনাক কিংবা সোলঝিনেৎসিনরা হয়ে যায় পুঁজিবাদী ফার্মের সেইসব শয়তান পশু যারা ব্যক্তিগত মালিকানার কাছে মগজটিকে বন্ধক দিয়ে একচোখা দৈত্যের মতো ঘোঁত ঘোঁত করে চাটতে থাকে পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদীদের নোংরা পশ্চাৎদেশ।
তথ্যসূত্র:
১. দেখুন, এঙ্গেলস. ফ্রিডরিখ, “কর্তৃত্ব প্রসঙ্গে”, মার্কস-এঙ্গেলস রচনা সংকলন, প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় অংশ, প্রগতি প্রকাশন মস্কো, ১৯৭১, পৃষ্ঠা ৩০৯-৩১২।
২. পারভেজ. আলতাফ, ৩ মে, ২০১৮, ফেসবুক স্ট্যাটাস, ইউআরএল https://web.facebook.com/altaf.parvez/posts/10216180404173865
৩. রোবসন. পল, “সোভিয়েত ইউনিয়ন আমার নিজের ঘর” জানুয়ারি ১৯৩৫, তারেক হাসান সম্পাদিত শতবর্ষে রুশ বিপ্লব, দ্যু প্রকাশন, ঢাকা, অক্টোবর ২০১৭, পৃষ্ঠা ১৮২।
৪. ডেভিসন. পিটার, পেঙ্গুইন সংস্করণের ভূমিকা, এনিমেল ফার্ম, আমারবই ডট কম, ইউআরএল: http://www.amarboi.com/2015/11/animal-farm-george-orwell-bangla-onubad.html.
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।