বেনিতো মুসোলিনি ছিলেন ইতালীয় জাতীয় ফ্যাসিবাদী দলের নেতা ও সাংবাদিক

বেনিতো এমিলকেয়ার আন্দ্রেয়া মুসোলিনি (ইংরেজি: Benito Amilcare Andrea Mussolini, ২৯ জুলাই ১৮৮৩ – ২৮ এপ্রিল ১৯৪৫) ছিলেন একজন ইতালীয় রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক যিনি জাতীয় ফ্যাসিবাদী পার্টির নেতা ছিলেন। তিনি ১৯২২ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত ইতালির প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শাসন করেছিলেন; তিনি গণতন্ত্রের ভান ছেড়ে দিয়ে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করার পরে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত তিনি সাংবিধানিকভাবে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মুসোলিনি অ্যাডলফ হিটলারের মতো একাধিক নিরঙ্কুশ শাসককে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

প্রথম জীবনের একজন স্কুল শিক্ষক নাকি সেনাবাহিনীতে যােগদানের ভয়ে সুইজারল্যান্ডে পালিয়ে সেই লােকটি যে কিনা আবার সাংবাদিকতাও করেছে। পরবর্তী জীবনের সাথে শুরুর দিকের মুসােলিনির সাথে অন্য কারাে তুলনা করা কঠিন। ১৯০২ সালে যে মুসােলিনি সুইজারল্যান্ডে চলে যান আবার ২ বছরের মাথায় ১৯০৪ সালেই ফিরে আসেন দেশে। প্রায় ১০ বছর সাংবাদিকতা করে সম্পাদক বনে যান অ্যাভান্তির নামে একটি পত্রিকার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হটকারীভাবে মিত্র বাহিনীর পক্ষাবলম্বন তাঁকে হতাশ করে, তিনি সমাজতান্ত্রিক থেকে পুরােদস্তুর ডানপন্থী হয়ে যান। এরপর ১৯১৫ সালে তিনি ত্যাগ করেন সমাজতান্ত্রিক দল। সে সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সেনাবাহিনীতে যােগ দিয়ে দক্ষতা দেখিয়ে একজন কর্পোরাল পদে পদোন্নতি হয় তার। জার্মান নেতা হিটলারের মত তিনিও যুদ্ধ চলাকালীন আহত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসেন মিলানে। তারপর বিভিন্ন ডানপন্থী দলের সদস্যদের একত্রিত করে গঠন করেন ফ্যাসিস্ট পার্টি। 

১৯২২ সালে ইতালিতে সমাজতান্ত্রিকদের দাপট কমাতে রাজা তৃতীয় ইমানুয়েল ফ্যাসিস্ট পার্টিকে সরকার গঠনের সুযােগ করে দেয়। ক্ষমতায় গিয়ে দোর্দণ্ডদাপটের সাথে মুসােলিনি বামপন্থীদের ওপর চড়াও হন। এ সময় ১৯২৪ সালে হত্যা করা হয় গিয়াকমাে মিত্তিওতিকে। তার ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় ১৯২৯ সালে একদলীয় সরকার হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় ফ্যাসিস্ট পার্টি। মুসােলিনির প্রত্যক্ষ প্রভাবে ১৯৩৬ সালের দিকে জার্মানির সাথে ইতালি একটি মিত্ৰতা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। বলতে গেলে এর পরবর্তী ৫ বছর না যেতে ১৯৪১ সাল নাগাদ ইতালি পুরােপুরি জার্মানির ওপর নির্ভরশীল একটি বন্ধুরাষ্ট্রে পরিণত হয়। তবে একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবে মুসােলিনির উত্থান নিশ্চিত হয়ে যায় ১৯৪০ এর মধ্যেই। ১০ জুন পরলােকগত পােপ দ্বিতীয় পলের স্মৃতির উদ্দেশ্যে রােমে যে ফলক নির্মাণ করা হয় তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল। সেদিন ইতালি ইঙ্গ-ফরাসি জোটের বিরুদ্ধে ইতালির সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার তীব্র আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জনতা মুসােলিনির এ ঘােষণাকে হর্ষধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানালে অনেকটাই সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন তিনি।

আরো পড়ুন:  ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে বিপ্লবী ও গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য দিমিত্রভ থিসিসের গুরুত্ব

ইঙ্গ-ফরাসি জোটের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির সাথে কোনাে ধরনের আপস না করে উপরন্তু তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে শুরু করেন জার্মান নেতা হিটলার। এর ফলে শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তবে যুদ্ধ শুরুর প্রথম ১০ মাস তেমন কোনাে উচ্চবাচ্য করেনি ইতালি। তারা এককথায় বলতে গেলে নীরব থেকে যায়। তবে পরিস্থিতি হঠাৎ করে বদলে যাওয়ায় জার্মানির সমর্থনে রণাঙ্গনে আবির্ভূত হয় ইতালি। ইতালি যুদ্ধ ঘােষণা করলে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের সামনে অনেক সমস্যা এসে হাজির হয়। তারা নিরাপত্তা প্রশ্নে অনেকটা ভূমধ্যসাগর, আফ্রিকা ও নিকটপ্রাচ্যে সৈন্য মােতায়েন করে যা ইতালির যুদ্ধে যােগদানকে অনেক দিক থেকে বৈধতা দিতে পারে। ইতালির রণতরী থেকে শুরু করে ডেস্ট্রয়ার ও ক্রুজারগুলাে নৌপথে তাণ্ডব তুলে। তাদের যুদ্ধ ঘােষণার ঠিক পরদিন ব্রিটিশ বােমারু বিমান থেকে আসমারা ও মাসােয়াতে বেপরােয়া বােমাবর্ষণ শুরু করে। যুদ্ধ চলে সিসিলিসহ আরাে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। তবে যুদ্ধে মার্কিনিদের অংশগ্রহণ একে একে সিরাকিউস, পালাজ্জলাে, অগাস্টা এবং ভিজনির পতন নিশ্চিত করে। শেষ পর্যন্ত ফিল্ড মার্শাল মন্টেগােমারির বাহিনী আক্রমণ চালিয়ে জার্মান ও ইতালির বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে। জার্মান বাহিনী দ্রুত ভেঙে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ এপ্রিল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন মুসােলিনি ও তার বান্ধবী ক্লারা পাত্তাসি। ক্যাস্ট্রোয় জেনারেল কার্ল উলফ আত্মসমর্পণ করার পর তাদের হত্যা করে চৌরাস্তায় টাঙিয়ে রাখা হয় ক্ষতবিক্ষত লাশ।

তথ্যসূত্র:

১. মো. আদনান আরিফ সালিম, আধুনিক বিশ্বের ইতিহাস, [Pdf]. বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জানুয়ারি ২০১৯. সানজিদা মুস্তাফিজ ও সুমা কর্মকার. সম্পা. পৃষ্ঠা ৭৮-৭৯; Retrieved from http://www.ebookbou.edu.bd/wp/OS/hsc4_2.php#hsc2855

Leave a Comment

error: Content is protected !!