চার্লস ডারউইন ছিলেন ঊনবিংশ শতকের ইংল্যান্ডের বিবর্তনবাদ তত্ত্বের জীববিজ্ঞানী

চার্লস রবার্ট ডারউইন ছিলেন (ইংরেজি: Charles Rbbert Darwin; ১২ ফেব্রুয়ারি ১৮০৯-১৯ এপ্রিল ১৮৮২ খ্রি.) ছিলেন ঊনবিংশ শতকের ইংল্যাণ্ডের অবিস্মরণীয় জীববিজ্ঞানী। তিনিই প্রথম প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জীবনের বিবর্তনবাদের ধারণা দেন। তিনিই সর্বপ্রথম উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যে সকল প্রকার প্রজাতিই কিছু সাধারণ পূর্বপুরুষ হতে উদ্ভূত হয়েছে। তিনি তাঁর এই পর্যবেক্ষণটি সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রাকৃতিক জগতের রহস্যভেদ করার প্রবল আগ্রহ চার্লস ডারউইন কিশোর বয়স থেকেই বোধ করতেন। জীবন সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞান লাভ করতে পারবেন মনে করে নিজের পাঠ্যকালে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান পাঠ্য হিসাবে নির্বাচন করে। এর পরবর্তীকালে চার্লস ডারউইনের জীবনের যুগান্তকারী ঘটনা হচ্ছে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকৃতির বিভিন্ন দিকে পর্যব্কেষণ ও গবেষনার জন্য ‘বিগল’ জাহাজকে বিশ্ব অভিযানে প্রেরণ এবং চার্লস ডারউইনকে উক্ত জাহাজে প্রকৃতি-বিজ্ঞানী হিসাবে নিয়োগ দান।

‘বিগল’-এর অভিযান ডারউইনের জীবনে অকল্পিত এক সুযোগ এনে দেয়। এ অভিযান ১৮৩১ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যণ্ত স্থায়ী হয়। এ অভিযানে ডারউইন পৃথিবীর এক প্রান্ত, দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল ভাগের, তার অভ্যন্তরের, মহাসাগরীয় বিভিন্ন দ্বীপের এবং পৃথিবীর অপর প্রান্ত নিউজিল্যাণ্ডের অসংখ্য জীব-জন্তুর সাক্ষাৎ লাভ করেন। প্রাচীনকালের অনেক বৃহদাকার জন্তুর কঙ্কাল বা ফসিলও তাঁর পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ ঘটে। সমস্ত জায়গা থেকে জীব-জন্তুর নানা প্রকার নমুনা তিনি সংগ্রহ করেন।

জীব-জন্তুর সাদৃশ্য, বৈসাদৃশ্য, তাদের গঠনের সরলতা-জটিলতা ইত্যাদির উপর গবেষণা করে চার্লস ডারউইন অবশেষে ১৮৫৯ সালে জীব-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিপ্লবাত্মক গ্রহ্ণ ‘অরিজিন অব স্পেসিস’ প্রকাশ করেন। তাঁর এই গ্রন্থের প্রতিপাদ্য ছিল যে, পৃথিবীতে জীবনের যে বৈচিত্র্য রয়েছে সে বৈচিত্র্য কোনো একদিন একই সময়ে জগতে কোনো বিধাতা সৃষ্টি করে নি।

জগতে জীবনের ক্ষেত্রে সতত পরিবর্তন চলছে। জীবনের গঠন জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। অতীতকালের অতিকায় জন্তু-জানোয়ারের কঙ্কাল পাওয়া যাচ্ছে, অথচ এসব প্রাণীর আজ অস্তিত্ব নেই কেন? এ প্রশ্নের জবাবে ডারউইন বললেন, জীবনের ক্ষেত্রে আদিকাল থেকে বাঁচার সংগ্রাম চলছে। প্রকৃতি-জগতে নানা পরিবর্তন সংঘটিত হয়। প্রাকৃতিক জগতের পরিবর্তন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়ে জীবন রক্ষা করার তাগিদ জীবমাত্রের মধ্যে স্বাভাবিক। এই প্রচেষ্টায় যারা বিফল হয়েছে তারা দেহে বিরাট হলেও জীবন রক্ষা করতে পারেনি এবং জাতি হিসাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। এই অভিমতের মূল তত্ত্ব হচ্ছে এই যে, জীব-জগৎ সতত প্রবহমান পরিবর্তনের মাধ্যমে সহজ থেকে জটিল হয়ে বিকাশ লাভ করেছে। এই তত্ত্বের পরিপূরক হিসাবে ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে মানুষের জন্ম এবং বিকাশ সম্পর্কে ডারউইন ‘ডেসেন্ট অব ম্যান’ প্রকাশ করেন। এ গ্রন্থে তিনি দাবি করেন যে, মানুষের গঠনের সঙ্গে মনুষ্যেতর অনেক প্রাণীর সাদৃশ্য আছে। এ সাদৃশ্য থেকে সিদ্ধান্ত হচ্ছে যে, অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় মানুষ, মানুষের চেয়ে সহজতর গঠনের জীবন থেকে পরিবর্তনের চরম অবস্থায় বিকাশ লাভ করেছে। মানুষও ‘মানুষ’ হিসাবে কোনো ঊর্ধ্বলোক থেকে নিক্ষিপ্ত হয় নি।

আরো পড়ুন:  উইলিয়াম জেমস ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী এবং ভাববাদী

চার্লস ডারউইনের বিকাশবাদের এই তত্ত্বের তাৎপর্য বিজ্ঞানের বিকাশের জন্য ছিল অপরিসীম। একটি বিরাট সামাজিক বিপ্লবের ন্যায় ডারউইনের তত্ত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও প্রতিবাদের ঝড় বইতে শুরু করে। কিন্তু বাস্তব বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অন্ধ বিশ্বাসের উপর ক্রমে জয়ী হয়ে আজ প্রায় সর্বজনস্বীকৃত সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডারউইনের তত্ত্বের মধ্যে জগতে যে সতত শক্তিতে শক্তিতে দ্বন্দ্ব চলছে এবং সেই দ্বন্দ্বের ভিত্তিতেই যে জীবন বিকাশ লাভ করে সে বিকাশে পরিবর্তন চরম আকার লাভ করে নতুন অস্তিত্বের সৃষ্টি করতে পারে, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের এই তত্ত্বেরও স্বাভাবিক স্বীকৃতি লক্ষ করা যায়।

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১২৩-১২৪।

Leave a Comment

error: Content is protected !!