ডেমোক্রিটাস বা ডিমোক্রিটাস বা দেমোক্রিতোস (ইংরেজি: Democritus; ৪৬০-৩৭০ খ্রি. পূ.) ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের বিখ্যাত বস্তুবাদী দার্শনিক। জ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রাচীনকালের প্রথম বিশ্বজ্ঞানী হিসাবেও ডিমোক্রিটাস স্মরণীয়। পদার্থবিদ্যা, মনোবিদ্যা, ন্যায়, গণিত, চিকিৎসা, কৃষি, চিত্রশিল্প, সাহিত্য, নীতিশাস্ত্র এবং সামরিক কৌশল –এরূপ বিচিত্র বিষয়ের উপর ২৯০ টি পুস্তক বা পুস্তকাংশ ডিমোক্রিটাস রচনা করেছিলেন বলে গবেষকগণ মনে করে।
বিজ্ঞান ও দর্শনের ইতিহাসে প্রথম অণুতত্ত্ববিদ হিসেবে ডেমোক্রিটাসের স্বীকৃতি সর্বজনীন। তাঁর অণুতত্ত্বে আমরা সর্বপ্রথম বিশ্ব জগতের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা লাভ করি। এই তত্ত্ব অনুযায়ী সৃষ্টির মূল শক্তি হচ্ছে অণু এবং মহাশূন্যতা। অসংখ্য মৌলিক অণু মহাশূন্যতার মধ্যে নিরন্তর আবর্তিত হচ্ছে। এই আবর্তনের অণুতে অণুতে সংঘর্ষ ঘটছে; মহাশূন্যতার মধ্যে সংযোগও সাধিত হচ্ছে। এই সংঘর্ষ এবং সংযোগের মাধ্যমে সৃষ্ট হচ্ছে সমস্ত রকম বস্তুপুঞ্জ।
ডেমোক্রিটাসের মতে বস্তুর সৃষ্টির পেছনে আবর্তিত অণু ব্যতীত ঈশ্বর বা অণুর অতীত অপর কোনো সত্তা নেই। সংযুক্ত অণুর বিয়োজনে সৃষ্ট বস্তুর ধ্বংস। অণুর নতুনতর সংযোগে ধ্বংসপ্রাপ্ত বস্তু আবার নতুনতর বস্তুরূপে সৃষ্ট হয়। অণুর মধ্যেই অণুর গতি। অণুর সঙ্গে অণুর পার্থক্য শুধু আকারে, অবস্থানে এবং পারস্পরিক সংযোগের প্রকারে। রঙ, স্বাদ কিংবা এরূপ অপর কোনো গুণ অণুর মধ্যে নেই। এ সমস্ত গুণ অণুর জটিল সংযোগক্রমে বস্তুর মধ্যে সৃষ্ট হয়। বিশ্ব চরাচরে যা কিছু সংঘটিত হচ্ছে তা অনুর কারণে অনিবার্যভাবে সংঘটিত হচ্ছে।
ডেমোক্রিটাসের মতে বস্তুজগতে কারণহীনতা বলে কিছু নেই। আমাদের অজ্ঞানতা থেকেই আকস্মিকতা বা কারণহীনতার বিশ্বাস জন্মে। মানুষ আত্মাকে অ-বস্তু মনে করে। কিন্তু আত্মাও অণুর সংযোগ ফল। এ কারণে আত্মাও বস্তু, অ-বস্তু নয়। অণুর বিয়োজনে দেহের মৃত্যুর সঙ্গে আত্মারও মৃত্যু ঘটে। আত্মার অমরতা অযৌক্তিক কথা। বস্তুজগতের বাইরে দেবতাদেরও অপর কোনো অস্তিত্ব থাকতে পারে না। দেবতাদের অস্তিত্ব থাকলে তারাও জন্ম-মৃত্যুর নিয়মে আবদ্ধ।
ডেমোক্রিটাসের মতে দেবতাদের অস্তিত্বের যে বিশ্বাস সাধারণ মানুষ পোষণ করে, তার মূলে রয়েছে ধূমকেতু, ভূমিকম্প, উল্কাপাত, লাভার উদগীরণ ইত্যাকার বৃহৎ বৃহৎ প্রকৃতির ঘটনাপুঞ্জ সম্পর্কে অজ্ঞানতা ও ভীতি। তৎকালীন দাসভিত্তিক অভিজাততন্ত্রের সামাজিক ব্যবস্থার বিরোধী ছিলেন ডেমোক্রিটাস। ডিমোক্রিটাসের বস্তুবাদের তত্ত্বকে আমরা পরবর্তী গ্রিক দার্শনিক এপিকুরাস এবং রোমান দার্শনিক লিউক্রেটিয়াসের মধ্যে অনুসৃত হতে দেখি।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১৩১।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।