দিলীপকুমার রায় (জানুয়ারি ২২, ১৮৯৭ – জানুয়ারি ৬, ১৯৮০) বিখ্যাত বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীতালোচক, গীতরচয়িতা, সুরকার ও গায়ক। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৭ সালে নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে। পিতা প্রখ্যাত কবি নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, পিতামহ দেওয়ান কার্তিকেয় চন্দ্র রায়। পিতামহ ছিলেন প্রখ্যাত কালোয়াত, পিতা ছিলেন গীতকার, সুরকার ও গায়ক। এক কথায় বলতে গেলে গানের ঝর্ণাতলায় দিলীপকুমারের জন্ম ও বিকাশ।
তিনি ছিলেন কৃতী ও মেধাবী ছাত্র। ১৯১৮ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অঙ্কশাস্ত্রে প্রথমশ্রেণীর সম্মানসহ স্নাতক হয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানে অঙ্কশাস্ত্রে ট্রাইপসের প্রথমভাগ এবং পাশ্চাত্যসংগীতে প্রথমভাগ উত্তীর্ণ হন। তারপর জার্মান ও ইতালীয় সংগীত শিখতে যান বার্লিন।
দিলীপকুমার রায় ১৯২২ সালে দেশে ফিরে ভারতীয় মার্গসংগীতে তালিম নেন আবদুল করিম খাঁ, ফৈয়াজ খাঁ, পণ্ডিত ভাতখণ্ডের কাছে। সংগীতসুহৃদ ছিলেন কৃষ্ণ রতনঝংকার ও ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। জীবনব্যাপী নানা মনীষীর সান্নিধ্যে এসেছেন গান ও তত্ত্বালোচনায়। তাদের মধ্যে উল্লেখ্য রবীন্দ্রনাথ, শ্রীঅরবিন্দ, মহাত্মা গান্ধী, রঁম্যা রালাঁ, ব্রার্ট্রাণ্ড রাসেল।
১৯২৮ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত পণ্ডিচেরী আশ্রমে যোগসাধনায় যুক্ত ছিলেন। পরে পুনায় হরিকৃষ্ণ মন্দির স্থাপন করে সেখানেই আমৃত্যু সাধনভজন করেন। গান গাইতে ও গান বিষয়ে বক্তৃতা দিতে অনেকবার যান বিদেশে। নিজস্ব গানের যে-ঘরানা তিনি গড়ে তোলেন তাতে দীক্ষিত করে কিছু শিষ্যশিষ্যা গড়ে তোলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখ্য এম. এস, শুভলক্ষ্মী, উমা বসু, সাহানা দেবী, মঞ্জু গুপ্ত ও গোবিন্দ গোপাল মুখোপাধ্যায়।
দিলীপকুমার গায়ক হিসাবে যত বিখ্যাত গীতকাররূপে ততটা স্বীকৃত নন, তার একটা কারণ তাঁর গানের রূপায়ণের দুরূহতা ও অনুজদের কণ্ঠঋদ্ধতার অভাব। বাংলা গানের গায়নে তাঁর বহুপ্রসিদ্ধ ‘দৈলীপি’ ঢঙ একটা আলাদা বাতাবরণ তৈরি করেছে। এককালে নজরুলের গানকে তিনিই শিষ্ট সমাজে প্রথম পাঙক্তেয় ও জনপ্রিয় করে তোলেন। পরে নিজের লেখা গান ও নিশিকান্তের গানে তিনি বাংলা গানের ধারাকে নবসুরে মণ্ডিত করেন।
দিলীপকুমারের গান তিন ধারায় উচ্ছিত: হিন্দিভজন, বাংলা ভক্তিমূলক ও বিদেশীভাষায় অনূদিত গান। তিন ধারাতেই গান রচনা, সুরযোজনা ও গায়নে ছিল তার অসামান্য দক্ষতা। তার গাওয়া গানের রেকর্ড সংখ্যা শতাধিক। গান বিষয়ে বই লিখেছেন অন্তত দশটি। গীত-সংকলন ও স্বরলিপির বইও আছে অনেক। মীরাবাঈ’ চলচ্চিত্রে তার সংগীত পরিচালনা খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। একাধিক বাংলা চলচ্চিত্রেও সংগীত পরিচালনা করেন। গানে মৌলিক অবদানের জন্য তিনি ‘সংগীত রত্নাকর’ উপাধি পান। ১৯৬৫ সালে সংগীত নাটক একাডেমির সদস্য হন। ১৯৮০ সালের ৬ জানুয়ারি এই সংগীতকোবিদ প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র:
১. সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত আধুনিক বাংলা গান, প্যাপিরাস, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১ বৈশাখ ১৩৯৪, পৃষ্ঠা, ১৭০-১৭১।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।