এডমান্ড বার্ক (ইংরেজি: Edmund Burke; ১২ জানুয়ারি ১৭২৯-৯ জুলাই ১৭৯৭ খ্রি.) ছিলেন অষ্টাদশ শতকের ইংল্যান্ডের পার্লামেণ্টের বিখ্যাত বাগ্মী সদস্য এবং রাজনীতিবিদ। বার্কের রাজনৈতিক চিন্তা, বক্তৃতা এবং রচনার মধ্যে উদারনীতি এবং রক্ষণশীলতার মিশ্রণ ঘটে। ইংল্যাণ্ডের সরকার আমেরিকার উপনিবেশের উপর ট্যাক্স আরোপ করলে বার্ক উপনিবেশের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। ওয়ারেন হেস্টিংস-এর শাসনে ভারতে ব্রিটিশ শাসনে ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধেও তিনি উচ্চকণ্ঠ হন। সে সময়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে হুইগ দল কনজারভেটিভ দলের চাইতে উদারনীতিক ছিল। বার্ক হুইগ দলের সদস্য ছিলেন।
তবে বার্ক তার সুপরিচিত পুস্তক ‘রিফ্লেকশানস অন ফ্রেঞ্চ রিভোল্যুশন’ বা ‘ফরাসি বিপ্লবের উপর চিন্তা’ গ্রন্থে ফরাসি বিপ্লবের তীব্র সমালোনার মাধ্যমে নিজের রক্ষণশীল মনোভাবের প্রকাশ ঘটান। বস্তুত ফরাসি বিপ্লবের বিরুদ্ধে বার্কের সমালোচনার মাধ্যমে ইংল্যাণ্ডের প্রতিষ্ঠিত বুর্জোয়া শাসন ব্যবস্থার একটি অংশের ফরাসি বিপ্লবের সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য সম্পর্কে আশঙ্কা এবং ভীতির প্রকাশ ঘটে।
ইংল্যাণ্ডে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের বিপ্লবের উদ্যোগী ভূমিকা ইংল্যাণ্ডের পুঁজিবাদী শ্রেণী গ্রহণ করলেও অষ্টাদশ শতকের ফরাসি বিপ্লবের ‘সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার’ আওয়াজ মানুষের চিন্তায় একটা নতুন পর্যায়ের সূচনা ঘটায়। ফরাসি বিপ্লবের এই নতুন তাৎপর্যে কেবল যে ইউরোপের সামন্ততান্ত্রিক শ্রেণী ও রাজতান্ত্রিক শাসকরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে তাই নয়, ইংল্যাণ্ডের বুর্জোয়া শাসকশ্রেণীও ফরাসি বিপ্লবের ‘সাম্যে’র আওয়াজে নিজেদের শ্রেণী শাসনের প্রতি আঘাতের তাৎপর্যকেও উপলব্ধি করে।
এডমান্ড বার্ক যখন তাঁর ওজস্বিনী ভাষায় ফরাসি বিপ্লবকে আক্রমণ করে বলেন: “ফরাসি বিপ্লবীদের কাছে আমাদের শিক্ষা গ্রহণের কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা ঈশ্বরকে যেমন ভয় করি, রাজাকে তেমনি সমীহ করি; আমরা পার্লামেণ্টকে যেমন ভালবাসি, সরকারকে তেমন মান্য করি; আমরা গীর্জার পুরোহিতদের যেমন ভক্তি করি, অভিজাতদের তেমনি সম্মান করি” – তখন কেবল ব্যক্তিগত আবেগ নয়, সমাজের অধিকতর বিপ্লবী বিকাশের প্রশ্নে ইংল্যাণ্ডের শাসকশ্রেণীর শ্রেণিগত উদ্বেগের প্রকাশ ঘটে।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ৯৬।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।