গােপাল কৃষ্ণ গোখলে (ইংরেজি: Gopal Krishna Gokhale) ছিল ভারতীয় রাজনীতির গণবিরোধী জমিদার ও উপনিবেশবাদী নিপীড়নকারী ধারার অন্যতম প্রধান নেতা। গোখলের জন্ম মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি জেলায়। তার সংক্ষিপ্ত জীবন ছিলো মিথ্যাচার, লোভ, ভন্ডামো, ক্ষমতা দখল এবং জনগণের মুক্তিসংগ্রামের সাথে অবিরাম শত্রুতার। ইতিহাস ও অর্থনীতির অধ্যাপনার সঙ্গে ‘সুধারক’ পত্রিকার সম্পাদনাকালে তাঁর বয়স ছিল ২০ বছর। পুনা সার্বজনিক সভা ও প্রাদেশিক সম্মেলনের সচিব হন ২৫ বছরে, জাতীয় কংগ্রেসের সচিব হন ২৯ বছরে, রয়াল কমিশনে সাক্ষ্য দেন ৩১ বছরে, প্রাদেশিক আইনসভায় ৩৪ বছরে এবং কেন্দ্রীয় আইনসভায় সদস্য হন ৩৬ বছরে।
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা ও বিপ্লবের শত্রু ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ ও গণহত্যা ও সন্ত্রাসবাদের অনুসারী জাতীয় কংগ্রেসের যখন গোখলে সভাপতি হয় তখন তার বয়স ছিলো ৩৯ বছর। ওই বছরে সে প্রতিষ্ঠা করেছিলো সার্ভেন্টস অব ইন্ডিয়া সােসাইটি । তখন থেকেই জীবনের শেষাবধি সে ছিলো কংগ্রেসের অবিসংবাদিত নেতা। গােখলেকে ভারতীয় গণশত্রু গান্ধী নিজের রাজনৈতিক গুরু বলে স্বীকার করতো। গােখলের অপর এক অনুগামী ছিলো জিন্নাহ। কিন্তু উভয়ের কারও মধ্যে তার জীবনাদর্শ প্রতিফলিত হয়নি।
ইউরােপীয় পৈশাচিক উদারনীতিবাদের গুণগ্রাহী দাদাভাই নওরোজি, মহাদেব গােবিন্দ রানাড়ে, ফিরােজ শা মেহতা প্রমুখ নরমপন্থিদের উত্তরসুরি গােখলে জমিদার ও মুৎসুদ্দি বুর্জোয়াদের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক অগ্রগতির পন্থায় বিশ্বাসী ছিলো। এইরকম প্রতিক্রিয়াশীল নীতির অনুসারি হবার কারণে সে কৃষকের সকল রকমের বিপ্লবের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিলো। তবে সমকালীন অন্যান্য অনেক নেতার মতাে সে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের সংমিশ্রণ ঘটাতে চায়নি।
গোখলে মনে করত যে রাজনীতির সঙ্গে নৈতিকতার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সে চাইতো সংযম, শৃঙ্খলা, যুক্তিশীলতা প্রভৃতি মূল্যবােধসম্পন্ন আদর্শের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির সামঞ্জস্য বিধান। ভারতীয় জমিদার ও বুর্জোয়াদের শক্তি ও অপরিমেয় সম্ভাবনার প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল হবার কারণে সে চাইতো বিদেশি শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সংঘর্যের পরিহার। অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের দাবি এবং জমিদার ও বুর্জোয়াদের অর্থনৈতিক শােষণ বাড়ানোর জন্য সে মাঝে মধ্যে সন্ত্রাসী ব্রিটিশ উপনিবেবাদীদের সমালােচনার করত। সেই সঙ্গে সে কামনা করতো ইংরেজ শাসকদের এদেশের প্রতি বিবেকসম্পন্ন দায়িত্ব পালন ও সহযােগিতার মনােভাব।
তথ্যসূত্র:
১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ১০১-১০২।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।