উইলিয়াম গডউইন (ইংরেজি: William Godwin; ৩ মার্চ ১৭৫৬ – ৭ এপ্রিল ১৮৩৬ খ্রি.) ছিলেন ইংল্যাণ্ডের একজন রাজনৈতিক চিন্তাবিদ এবং ঔপন্যাসিক। কবি শেলী তাঁর জামাতা ছিলেন। গডউইনের খ্যাতি এ কারণে যে, তিনি জীবনের প্রথম দিকে একজন ধর্মযাজক থাকলেও ফরাসি দার্শনিকদের রচনা পাঠে প্রভাবিত হয়ে তিনি ক্রমান্বয়ে ধর্ম সম্পর্কে সমালোচনাবাদী হয়ে ওঠেন এবং গ্রন্থ রচনায় আত্মনিয়োগ করেন।
গডউইনের গ্রন্থসমূহের মধ্যে ‘রাজনৈতিক ন্যায়ের বিষয়ে’ বা ‘কনসারনিং পলিটিক্যাল জাসটিস’ তাঁর শ্রেণীগত চিন্তাবিদদের চিন্তার ব্যতিক্রমী চিন্তা হিসাবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে। এই গ্রন্থের অভিমতসমূহ ফরাসি বিপ্লবের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ পায়। ইংল্যাণ্ডের প্রগতিবাদী চিন্তারও তিনি সমর্থক হয়ে ওঠেন।
রাষ্ট্র ও সমাজ সম্পর্কে গডউইনের চিন্তায় ক্রমান্বয়ে কল্পনাবাদী সমাজতন্ত্রীয় এবং নৈরাষ্ট্রবাদী ভাব প্রকাশ পেতে থাকে। তিনি বলেন রাষ্ট্রে মানুষ বাস করে বটে, কিন্তু রাষ্ট্র মানুষের শেষ লক্ষ্য নয়। রাষ্ট্র হচ্ছে জবরদস্তির প্রতীক। মানুষের লক্ষ্য হবে রাষ্ট্রকে অতিক্রম করে সামাজিক জীবনযাপন করা। জোর বা জবরদস্তির মৌল বিরোধিতা করেন। মানুষ প্রকৃতির বিধানে সমান। এবং সে কারণে মানুষে মানুষে সম্পদে অসাম্য থাকা অসঙ্গত। মানুষের সমাজে বিদ্যমান অসঙ্গতির মূলে হচ্ছে অজ্ঞতা। অশিক্ষা দূর হলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যকার অসাম্য, অবাঞ্ছিত আইন-কানুন, সরকারের শক্তিপ্রয়োগ প্রভৃতির বিলোপ ঘটবে।
গডউইনের এরূপ চিন্তায় প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো এবং পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের কল্পনাবাদী টমাস মুরের চিন্তার মিশ্রণ দেখা যায়। যুক্তিবাদী হিসাবে ধর্ম সম্পর্কে তাঁর সমালোচনা ক্রমান্বয়ে তীব্র হয়ে ওঠে। ধর্ম মানুষকে পরলোকবাদী হিসাবে ধর্ম সম্পর্কে তাঁর সমালোচনা ক্রমান্বয়ে তীব্র হয়ে ওঠে। ধর্ম মানুষকে পরলোকবাদী করে তার জাগতিক শক্তি ও সম্ভাবনাকে বিভ্রান্ত এবং বিনষ্ট করে। খ্রিষ্টধর্মকেও তিনি এই কারণে ক্ষতিকর বলে সমালোচনা করেন।
গডউইনের নিজের বৈবাহিক জীবন থাকলেও বৈবাহিক রীতির প্রয়োজনকে তিনি অস্বীকার করেন। তাঁর এসব চিন্তার মধ্যে ইংল্যাণ্ডের অভিজাত সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তার প্রতিবাদী অভিমত প্রকাশিত হয়। এ কারণে তাঁর সমকালীন স্বীকৃতি এবং জনপ্রিয়তা ইংল্যাণ্ডের চাইতে ফ্রান্সে অধিক ঘটে। ফ্রান্সের সেণ্ট সাইমন এবং প্রুধো তাঁর চিন্তাধারার সমর্থক হন।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১৮৬-১৮৭।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।