অধ্যয়ন

সভাপতি মাও সে-তুঙের উদ্ধৃতি

৩৩. অধ্যয়ন

*** অনগ্রসর কৃষিপ্রধান চীনকে একটি অগ্রসর শিল্পায়ত্ত চীনে পরিবর্তিত করার জন্য আমাদের অত্যন্ত কঠোর কাজের সম্মুখীন হতে হবে, আমাদের অভিজ্ঞতাও মোটেই যথেষ্ট নয়, আমাদের অবশ্যই তাই শিক্ষা গ্রহণে নিপুণ হতে হবে। “চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টম জাতীয় কংগ্রেসে প্রদত্ত উদ্বোধনী ভাষণ” (১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৬)

*** অবস্থা নিরন্তরই পরিবর্তিত হচ্ছে, তাই নতুন অবস্থার সংগে নিজেদের চিন্তাধারাকে খাপ খাওয়ানোর জন্য অধ্যয়ন করতে হবে। এমনকি মার্কসবাদ সম্বন্ধে যারা অপেক্ষাকৃত বেশি জানেন এবং যারা অপেক্ষাকৃত দৃঢ়ভাবে সর্বহারা শ্রেণির স্বপক্ষে দাঁড়ান, তাঁদেরও আরো অধ্যয়ন করতে হবে, যা নতুন তা গ্রহণ করতে হবে এবং যা নতুন তা গ্রহণ করতে হবে এবং নতুন সমস্যাকে পর্যালোচনা করতে হবে। “প্রচার কার্য সম্পর্কে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ” (১২ মার্চ , ১৯৫৭)

*** আমরা যা জানি, তা শিখে নিতে পারি। আমরা যে শুধু পুরাতন দুনিয়া ধ্বংস করতে নিপুণ, তাই নয় বরং নতুন দুনিয়া গঠন করতেও নিপুণ। “চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তম কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে প্রদত্ত রিপোর্ট” (৫ মার্চ, ১৯৪৯)

*** শিক্ষা গ্রহণে দুরকমের মনোভাব রয়েছে। একটা হলো গোঁড়ামিবাদের মনোভাব, আমাদের দেশের অবস্থার উপযোগী হোক বা না হোক, সব কিছুকেই এক সংগে বহন করে নিয়ে আসা। এ ধরনের মনোভাব ভালো নয়। অন্যটা হচ্ছে শিক্ষার সময় মাথা খাটিয়ে ভেবে আমাদের দেশের অবস্থার উপযোগী জিনিস শিখে নেওয়া, অর্থাৎ যেসব অভিজ্ঞতা আমাদের পক্ষে হিতকর সেগুলো গ্রহণ করা; এই ধরনের মনোভাবেরই আমাদের দরকার। “জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার সমস্যা সম্পর্কে” (২৭ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫৭)

*** মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন, স্তালিনের তত্ত্ব সর্বত্রই প্রযোজ্য। তবে একে বেদবাক্য বলে মনে করা উচিত নয়, বরং কার্যকলাপের দিশারী বলে মনে করা উচিত। শুধু মার্কসবাদ-লেনিনবাদের কতকগুলো পদ বা শব্দসমষ্টি শেখা উচিত নয়, বরং তাকে বিপ্লবের বিজ্ঞান হিসেবে শেখা উচিত। ব্যাপক বাস্তব জীবন ও বিপ্লবী অভিজ্ঞতাকে গবেষণা করার মাধ্যমে মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন, স্তালিন সাধারণ নিয়ম সম্পর্কে যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা উপলদ্ধি করা উচিত, শুধু তাই নয়, বরং সমস্যার পর্যবেক্ষণ ও সমাধানে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গী ও পদ্ধতিকেও শেখা উচিত। “জাতীয় যুদ্ধে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির স্থান” (অক্টোবর , ১৯৩৮) 

আরো পড়ুন:  আলো ফোটানোর মুক্তিকামী কবিতাগ্রন্থ দোলন প্রভার “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে”

*** যদি একটি নির্ভুল তত্ত্ব থাকে, কিন্তু যদি সেটাকে শুধু বকবকই করা হয়, সুউচ্চ মন্দির শীর্ষে রাখা হয় এবং কাজে ব্যবহার না করা হয়, তাহলে সেই তত্ত্বটি যত ভালই হোক না কেন, তার কোনো তাৎপর্যই থাকে না। অনুশীলন সম্পর্কে, (জুলাই ১৯৩৭)

*** মার্কসবাদী তত্ত্বকে গভীরভাবে আয়ত্ত করা ও তা প্রয়োগ করা উচিত, গভীরভাবে আয়ত্ত করার একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে তা প্রয়োগ করা। যদি আপনি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী দৃষ্টিকোণ প্রয়োগ করে একটি বা দুটি বাস্তব সমস্যাকে ব্যাখ্যা করতে পারেন, তাহলে আপনি প্রশংসার যোগ্য এবং আপনি কিছু সাফল্য অর্জন করেছেন বলে মনে করা যায়। যত বেশি, ব্যাপক ও গভীরভাবে আপনি তা করবেন, আপনার সাফল্য ততই বৃহত্তর হয়ে উঠবে। পার্টির রীতির শুদ্ধিকরণ, (১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২)

*** মার্কসবাদী-লেনিনবাদী তত্ত্ব ও চীনা বিপ্লবের অনুশীলন কেমন করে পরস্পর সংযুক্ত? সাধারণ ভাষায় বলা যায়, “নিশানায় শর নিক্ষেপ”। “শর” হচ্ছে তীর, “নিশানা” হচ্ছে লক্ষ্য। লক্ষ্যের প্রতি তীর ছুড়তে হবে। তীর ও লক্ষ্যের সম্পর্ক যেমনি ঠিক তেমনি মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও চীনা বিপ্লবের সম্পর্ক। কোনো কোনো কমরেড কিন্তু “লক্ষ্যহীনভাবেই তীর ছোঁড়েন”, এলোপাতাড়ি তীর ছোঁড়েন, এ ধরনের লোক সহজেই বিপ্লবের ক্ষতি করতে পারেন। পার্টির রীতির শুদ্ধিকরণ, (১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২)   

*** কাজে যারা অভিজ্ঞ, তাঁদের তত্ত্বক্ষেত্রে অধ্যয়ন করতে হবে এবং মনোযোগের সংগে বই পড়তে হবে, শুধুমাত্র তা হলেই তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতাকে সুব্যবস্থিত করতে ও তার সারসংক্ষেপ করতে সক্ষম হবেন এবং তাকে তত্ত্বের পর্যায়ে উন্নীত করতে সমর্থ হবেন, শুধুমাত্র তখনই তাঁরা তাঁদের আংশিক অভিজ্ঞতাকে সর্বজনীন সত্য বলে ভুল করবেন না এবং অভিজ্ঞতাবাদের ভুল করবেন না। পার্টির রীতির শুদ্ধিকরণ, (১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২)

*** বই পড়া হচ্ছে শিক্ষা করা, কিন্তু প্রয়োগ করাও শিক্ষা করা, আর এটাই হচ্ছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। যুদ্ধের মধ্যে যুদ্ধ শিক্ষা করা—এটাই আমাদের প্রধান পদ্ধতি। যার স্কুলে যাবার সুযোগ হয়নি, সেও যুদ্ধ শিখতে পারে, এটাই হচ্ছে যুদ্ধের মধ্যে শেখা। বিপ্লবী যুদ্ধ হচ্ছে জনসাধারণের কাজ, এটা প্রায়শই প্রথমে শেখে পরে কাজ করা নয়, বরং কাজ করেই শেখা, কাজ করার মানেই শিক্ষা করা। চীনা বিপ্লবী যুদ্ধের রণনীতি সমস্যা, ডিসেম্বর, ১৯৩৬

আরো পড়ুন:  কমিউনিস্ট পার্টি

*** “সাধারণ জনগণ” ও সৈন্যের মধ্যে একটা ব্যবধান আছে, কিন্তু এটা মহাপ্রাচীর নয়, এই ব্যবধানটা দ্রুত দূর করা যায়, আর এ দূর করার পদ্ধতি হচ্ছে বিপ্লব করা ও যুদ্ধ করা। যখন আমরা বলি, শিক্ষা করা ও প্রয়োগ করা সহজ নয়, তখন এর অর্থ যে, সম্পূর্ণরূপে শিখে নেওয়া ও দক্ষতার সংগে প্রয়োগ করা কঠিন। যখন আমরা বলি “সাধারণ জনগণ” দ্রুত সৈন্যে পরিবর্তিত হতে পারেন, তখন এর অর্থ যে, প্রবেশ দ্বার অতিক্রম করা কঠিন নয়। এ দুটি বিষয়কে একত্রে রাখতে গিয়ে আমরা একটা চীনা পুরনো প্রবাদ বাক্য উল্লেখ করতে পারি — কার্য সাধনে যারা দৃঢ়-সংকল্প, তাঁদের পক্ষে দুনিয়ায় কঠিন বলে কিছুই নেই।” প্রবেশ দ্বার অতিক্রম করা কঠিন নয়, নৈপুণ্য অর্জনও সম্ভব, কেবলমাত্র দৃঢ়-সংকল্পের প্রয়োজন এবং নিপুণভাবে শিক্ষার প্রয়োজন। চীনা বিপ্লবী যুদ্ধের রণনীতি সমস্যা, ডিসেম্বর, ১৯৩৬

*** সকল বিজ্ঞ লোকের (তাঁরা যে কেউই হোন না কেন) কাছ থেকেই আমাদের অবশ্য অর্থনৈতিক কাজ শিখতে হবে। আমাদের শিক্ষক হিসেবে তাঁদেরকে অবশ্যই ধরে নিতে হবে, শ্রদ্ধার ও সততার সংগে শিখতে হবে। অজানার অর্থ হচ্ছে না জানা, না জেনে জানার ভান করা উচিত নয়। “জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব সম্পর্কে” ৩০ জুন, ১৯৪৯

*** জ্ঞানের সমস্যা হচ্ছে বিজ্ঞানের সমস্যা, বিন্দুমাত্রও কপটতা কিংবা অহমিকা এই ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়; নিশ্চিতরূপে যা দরকার তা হচ্ছে ঠিক এর উল্টো_ সততা ও বিনয়ের মনোভাব। “অনুশীলন সম্পর্কে” (জুলাই, ১৯৩৭)

*** অধ্যয়নের শত্রু হচ্ছে আত্মসন্তোষ, প্রকৃতই কিছু শিখতে হলে, অবশ্যই নিজদের আত্মতুষ্টি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। নিজদের প্রতি “শিক্ষা গ্রহণে তৃপ্তিহীন থাকা” এবং অন্যদের প্রতি “শিক্ষাদানে অক্লান্ত হওয়া”_ এই ধরনের মনোভাব আমাদের থাকা উচিত। “জাতীয় যুদ্ধে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির স্থান” (অক্টোবর, ১৯৩৮)

*** মার্কসবাদ শিক্ষা করতে গেলে, শুধুমাত্র পুস্তক থেকেই নয়, বরং প্রধানত: শ্রেণী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে, কাজের অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে এবং শ্রমিক-কৃষকসাধারণের সংস্পর্শের মধ্যে দিয়েই তাকে সত্যি সত্যি আয়ত্ত্ব করা সম্ভব। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা যদি কয়েকটা মার্কসবাদী বই পড়েন এবং শ্রমিক- কৃষকসাধারণের সংস্পর্শের মধ্যে দিয়ে ও নিজেদের কাজের অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে কিছুটা জানতে পারেন, তাহলে আমরা সবাই অর্জন করবো একটা অভিন্ন ভাষা, শুধুমাত্র দেশপ্রেমের ক্ষেত্রের অভিন্ন ভাষা ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রের অভিন্ন ভাষা নয়, বরং সম্ভবত কমিউনিস্ট বিশ্বদৃষ্টিকোণক্ষেত্রের অভিন্ন ভাষাও। এমনি করলে আমাদের সকলের কাজ নিশ্চিতরূপেই আরো অনেক বেশি ভালো হবে। “প্রচার কার্য সম্পর্কে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ” ( ১২ মার্চ, ১৯৫৭ ) 

আরো পড়ুন:  সাম্রাজ্যবাদ ও সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীলরা কাগুজে বাঘ

Leave a Comment

error: Content is protected !!