নিরাপদ এই নীড়ে বাঁধলাম নিজেকে
জানলায় নীল আকাশ দিলাম টানিয়ে,
মনের ঘােড়াকে ঘরের দেয়াল ডিঙিয়ে
চিনিয়ে দিলাম সীমানাহীনের ঠিকানা।
সুবাসিত তেল কেশারণ্যের গভীরে
স্নান চলে বেশ নিরীহ টবের জলেতে,
শুকনো ডাঙায় নির্ভয়ে দিই মনকে
অতলান্তিক সাগরে সাঁতার কাটতে।
শাদা ডিশটায় স্বাদু হরিণের মাংস
মনের হরিণ সােনা হলাে কার নয়নে,
নরম চটির গুহায় গোপন পা দুটি
নিয়েছে কখন যাযাবরদের সঙ্গ!
পুরু বিছানায় ডেকেছি ফ্যানের হাওয়াকে
নীল আলােটায় নীলিমার নীল স্বপ্ন,
হৃদয়ে উধাও বােশেখী ঝড়ের ঝাপটা
কালাে কুয়াশায় দিকবধু কূল হারালাে।
কখনাে আবার মেরুযাত্রার কাহিনী
টেনে নেয় মন পৃথিবীর শেষ প্রান্তে,
এখুনি বিরল বলয়ের ক্ষীণ শব্দে
দুঃসাহসিক স্বপ্নে পড়বে ছেদ কি?
ঈশ্বর, এই শরীর মনের দ্বন্দ্বে
এ কী নিষ্ঠুর নীরব গ্রহণ করেছো?
যেখানে ভাবনা তােমাকে সৃষ্টি করেছে
দৃষ্টি সেখানে দাড়ালো প্রতিদ্বন্দ্বী?
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।