উঁচু আঙুরের ঈষৎ আশাও করি না,
লক্ষ্য রেখেছি স্বনামধন্য ধ্রুবকে;
উদাসী হৃদয় সুলভেই পাবে, হরিণা
রুপাের বাসনা মেটাবে জাপানি রূপকে।
খুশি আমাদের, দিবানিদ্রার বদলে—
রেডিও তাড়াবে দুপুর মহিলা-আসরে;
ভুখা সমাজকে ভাঁওতা দিয়েছি সবলে। —
নাটক জমে না ও-সংক্ষিপ্ত আদরে?
শুনি বটে পাঁঠা যােগ্য প্রেমের প্রদাসী—
চালাও, শ্রীমতী, বৈজয়ন্তী অবাধে;
স্বেচ্ছায় পাবে যুবক সলিল-সমাধি,
দীর্ঘ আড্ডা জমবে জনপ্রবাদে।
কৃত্রিম হ্রদ পায়চারি করি, চলাে না।
মনান্তরের ঘটনা নেহাৎ ঘরােয়া,
প্রকাশ্যে হােক পরস্পরকে ছলনা—
লােকলােচনকে অন্তত করি পরােয়া।
সংশােধনের পথ বাৎলেছি শুঁড়িকে।
নাস্তিক নই,— নিষ্ঠা সটান ত্রিশূলে।
মার্জনা সব ছুয়েছি যখন বুড়িক—
নিঃসন্দেহে স্বর্গ, শরীর মিশুলে।
বনগমনের বয়সটা নয় নিকটে
নির্বাণ-লােভে মঠ তাে সঠিক—সময়ে।
অসীম সিন্ধু মাপি আজ এক বিঘৎ-এ
নিজগুণে সেই ত্রুটি সামান্য, ক্ষমো হে।
মানি অহিংসা, মেনেছি অসহযােগিতা,
নায়ক অধুনা কংগ্রেসি মনােনয়নে—
সাহিত্যে শখ, পড়ি না ভ্রষ্ট কবিতা;
শিব, সুন্দর স্পষ্ট নিমীল নয়নে।
জনান্তিকেই বুলি কপচানো খাসা তাে,
চতুষ্পদেই তীর্থ কবে যােজনা,
বহবারম্ভে বজ্র যেদিন হাসাতাে,
সেইদিন ভেবে আমাদের অনুশােচনা।
সম্মতি নেই মজুর ধর্মঘটেও,
ভাংচি ঘটায় শৃগালবুদ্ধি ভাড়াটে,
মাথা ঘামাবো না চেক-চীন সংকটেও
তবেই দেখবে ঈর্ষা বাড়বে পাড়াতে।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।