প্রেসনেয়া জেলার জনসভায় বক্তৃতা

(কমরেড লেনিনের আগমনে দীর্ঘ জয়ধ্বনি। আন্তর্জাতিক সঙ্গীত বেজে ওঠে। সবাই উঠে দাঁড়ান।) কমরেড লেনিনের বক্তৃতা দেবাব আহ্বান আসার পর তিনি অতি সুস্পষ্ট ও প্রাঞ্জল ভাষায় সোভিয়েত সংবিধানের মর্মার্থ বুঝিয়ে বলেন, তার মৌলিক ধারাগুলির ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। সোভিয়েত হলো জনপ্রশাসনের সর্বোচ্চ রূপ। সোভিয়েত মাথা থেকে বানানো নয়, এ হলো বাস্তব অবস্থার ফল। মানবজাতির ইতিহাসে আমাদের মতো এমন পশ্চাৎপদ একটা দেশে এই প্রথম তা দেখা দিয়েছে এবং বেড়ে উঠেছে। কিন্তু নৈর্বক্তিক দিক থেকে তাকে হতে হবে সারা বিশ্বে মেহনতী মানুষের ক্ষমতার রূপ।

আজ পর্যন্ত যত সংবিধান মানবজাতি পেয়েছে সেইসব সংবিধান হলো প্রভুত্বকারী শ্রেণীর স্বার্থরক্ষার সংবিধান। একমাত্র সোভিয়েত সংবিধানই শ্রমজীবী মানুষের সেবা করছে এবং করে যাবে, এ হলো সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে এক পরাক্রান্ত হাতিয়ার। বুর্জোয়া সংবিধান এবং সোভিয়েত সংবিধানের মধ্যে “মুদ্রণ ও সভাসমাবেশের স্বাধীনতা” এর প্রশ্নে প্রভেদ কোথায়, কমরেড লেনিন তা অতি নির্দিষ্টরূপে তুলে ধরেন। বুর্জোয়া সংবিধানের ক্ষেত্রে মুদ্রণ ও সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা একান্তই বুর্জোয়ার একচেটিয়া কর্তৃত্বাধীনে থাকে, এক্ষেত্রে বুর্জোয়ারা সমবেত হয় নিজেদের সালোঁতে, নিজেদের ব্যাংকের টাকায় তারা বড়ো বড়ো পত্র-পত্রিকা বের করে, মিথ্যা আর কুৎসা ছড়িয়ে জনসাধারণের চেতনা বিষাক্ত করে তোলে, শ্রমিকদের পক্ষের যত সংবাদপত্র তা দমন করা হয়, লুঠেরা যুদ্ধ সম্পর্কে তাদের মতামত ও অভিমত ব্যক্ত করতে দেওয়া হয় না, যুদ্ধবিরোধীদের নিগ্রহ করা হয়, তাদের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এখানে সোভিয়েত রাশিয়ায় শ্রমিকদের মুদ্রণ ব্যবস্থা আছে এবং তা শ্রমজীবী মানুষের সেবা করে। রাশিয়ায় আমরা বুর্জোয়াদের কাছ থেকে তাদের বিশাল জাকজমকপূর্ণ অট্টালিকা ও প্রাসাদ কেড়ে নিচ্ছি এবং সেগুলো তুলে দিচ্ছি শ্রমিকদের হাতে, তারা যাতে এগুলিকে নিজেদের ক্লাবে পরিণত করে, আর এ হলো কার্যক্ষেত্রে সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা। ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যাপার। যার যাতে বিশ্বাস আছে অথবা নেই প্রত্যেকেই তা অনুসরণ করুক। সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র সমগ্র জাতির মেহনতী মানুষকে মিলিত করে এবং জাতি নির্বিশেষে মেহনতীদের স্বার্থ রক্ষা করে। সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র কোনো ধর্মীয় ভেদাভেদ মানে না। এই সংবিধান সবকিছুকে ধর্মের বাইরে রাখতে চায় এবং ধর্ম থেকে সোভিয়েত রাষ্ট্রকে পৃথক করতে চায়। পরিশেষে কমরেড লেনিন সাম্রাজ্যবাদী হিংস্র দানবদের সৃষ্ট পরিবেষ্টনীর মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে সোভিয়েত সরকার যে কঠিন অবস্থায় পড়েছে তার বর্ণনা দেন। কমরেড লেনিন এই নিশ্চয়তা প্রদান করেন যে, আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদের হামলা থেকে লালফৌজ তার সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করবে এবং বাঁচাবে এবং আমাদের সহযোগী আন্তর্জাতিক প্রলেতারিয়েত আমাদের সাহায্যে না আসা পর্যন্ত তাকে রক্ষা করবে। (কমরেড লেনিনের বক্তৃতার সঙ্গে সঙ্গে চলে সমস্বরে ক্লান্তিহীন তুমুল করতালি। পরিবেশিত হয় আন্তর্জাতিক সঙ্গীত।)

আরো পড়ুন:  সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসে লেনিনবাদী বলশেভিক পার্টির ভূমিকা

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ভ. ই. লেনিন, কালেক্টেড ওয়ার্কস, ২৭তম খণ্ড, প্রগ্রেস পাবলিশার্স, মস্কো ১৯৭২, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃঃ ৫০৫-৫৩২। লেখা হয় ১৯১৮-এর ২৯ জুন, প্রকাশিত হয় প্রাভদা পত্রিকার ১৩৩ নং সংখ্যায়, ২ জুলাই, ১৯১৮। বাংলা অনুবাদ নেয়া হয়েছে শেখর রহিম কর্তৃক অনূদিত, লেনিনের নির্বাচিত রচনাসংগ্রহ ৪, শ্রাবণ ঢাকা, পৃষ্ঠা ৩২২-৩২৩ থেকে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!